দাবানল থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে মানুষ
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, উত্তর আমেরিকার কিছু অঞ্চল, সাইবেরিয়া ও ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলা দাবানল কমে আসার তেমন লক্ষণ নেই। প্রচণ্ড দাবদাহ ও দীর্ঘ খরার কারণে সৃষ্ট দাবানলে পুড়ছে ইউরোপের দেশ গ্রিসও। দেশটির ছয় অঞ্চলে জারি করা হয়েছে সতর্কতা। সেখানে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এএফপির খবর।
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সের উপকণ্ঠে পৌঁছে গেছে দাবানল। ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে এ অঞ্চল। সেখান থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে। কাছেই এভিয়া দ্বীপ জ্বলছে আগুনে। দ্বীপের অনেক বাসিন্দা ও পর্যটককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হলেও জনপ্রিয় এ পর্যটন এলাকা থেকে এখনো পালাচ্ছে শত শত মানুষ।
কর্মকর্তারা জানান, রোববার কয়েক শ অগ্নিনির্বাপণকর্মী ওই দ্বীপের দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে মরিয়া চেষ্টা চালান। ইতিমধ্যে সেখানকার পাইনবনের বহু গাছপালা পুড়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকেরা দ্বীপ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে বাধ্য হচ্ছেন।
গ্রিসজুড়ে ১৫৪টি দাবানল নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছেন হাজারো অগ্নিনির্বাপণকর্মী। স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে তাঁরা দিন–রাত কাজ করছেন বলে জানান নাগরিক নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী নিকোস হার্দালিয়াস। প্রায় ২০টি উড়োজাহাজ থেকে ছিটানো হচ্ছে পানি।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ বাড়িয়ে দিয়েছে সাহায্যের হাত। দেশগুলো থেকে পাঠানো হচ্ছে আরও অগ্নিনির্বাপণকর্মী ও উড়োজাহাজ। গ্রিসের দক্ষিণ–পশ্চিমের পেলোপনেস অঞ্চলও পুড়ছে দাবানলে। তবে বৃষ্টি হওয়ায় এথেন্সে দাবানলের তাণ্ডব কিছুটা কমেছে।
এদিকে গ্রিসের পাশাপাশি তুরস্ক সরকারও দাবানল নিয়ন্ত্রণে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করেছে। কয়েক দশকের মধ্যে প্রচণ্ডতম দাবদাহে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দাবানল জ্বলছে দেশ দুটিতে। বিশেষজ্ঞরা আবহাওয়ার এমন বিরূপ আচরণের সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
এখন পর্যন্ত গ্রিসে মারা গেছেন দুজন ও প্রতিবেশী তুরস্কে আটজন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তুরস্কে বৃষ্টিতে গত সপ্তাহের শেষ দিক থেকে দেশটিতে দাবানল সামান্য কমে এলেও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া অব্যাহত আছে গ্রিসে।
এভিয়ার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঘন পাইনবন পর্যটকদের বরাবর আকৃষ্ট করলেও দাবানল দ্বীপটিকে এখন অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের কাছে দুঃস্বপ্নের স্থানে পরিণত করেছে। রাজধানীর কাছেই গ্রিসের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ এভিয়ার হাজার হাজার হেক্টর এলাকাকে একেবারে ছাই বানিয়ে ছেড়েছে দাবানল। পুড়ে গেছে অনেক বাড়িঘর।
এই দ্বীপ ছেড়ে পালিয়েছেন কয়েক হাজার বাসিন্দা ও পর্যটক। রোববারও মাছ ধরা নৌকা ও ফেরিতে করে দ্বীপ ছাড়ছিলেন অনেকে। গ্রিসের কোস্টগার্ড জানায়, শুধু এদিন সকালেই এখান থেকে ৩৫০ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, দ্বীপটিতে দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন প্রায় ২৬০ জন অগ্নিনির্বাপণকর্মী। সঙ্গে আছে ৬৬টি গাড়ি। তাঁদের সহায়তা করছেন ইউক্রেন ও রোমানিয়ার আরও প্রায় ২০০ কর্মী এবং ২৩টি গাড়ি ও ৭টি উড়োজাহাজ।
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এভিয়া ও আরও কয়েকটি এলাকায় আগুনের তাপ এত বেশি যে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং উড়োজাহাজ থেকে পানি ছিটানো হলেও তা আগুনের কাছে যাওয়ার আগেই বাষ্প হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।
গত ১০ দিনে দাবানলে গ্রিসের ৫৬ হাজার ৬৫৫ হেক্টর এলাকার (১ লাখ ৪০ হাজার একর) গাছপালা ও বাড়িঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ফরেস্ট ফায়ার ইনফরমেশন সিস্টেম।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০০৩ সালের পর চলতি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এমন দাবানল বিশ্ব আর দেখেনি। তীব্র দাবদাহ ও দীর্ঘ খরার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। এতে বনাঞ্চল ও তৃণভূমি পুড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে ৩৪৩ মেগাটন কার্বন নিঃসরণ হয়েছে, যা পরিবেশের সুরক্ষায় বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে।