যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য এখন পূর্ব ইউক্রেন: রুশ সেনাপ্রধান
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক মাস গড়িয়েছে। একদিকে যেমন ইউক্রেনের সেনাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ছে রুশ সামরিক বাহিনী, তেমনি ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর রাশিয়ার বোমা হামলায় তছনছ হয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের বড় কোনো শহর এখনো দখলে নিতে পারেনি রাশিয়া।
এরই মধ্যে রাশিয়ার সেনাপ্রধান ভালেরি গেরাসিমভ বলেছেন, তাঁদের যুদ্ধের এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল। এ অঞ্চলের রুশপন্থী বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার দাবিতে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই লড়াই করে আসছিল।
রাশিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আজ শুক্রবার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রুশ সেনাপ্রধান বলেছেন, রাশিয়ার এখন যুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য হবে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসকে ‘পুরোপুরি মুক্ত’ করা।
বৈঠকে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, রাশিয়া তাদের বিশেষ সামরিক অভিযানের জন্য দুটি বিকল্প চিন্তাভাবনা করছে। একটি পুরো ইউক্রেনকে দখল করা। অন্যটি হচ্ছে শুধু দনবাসকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
রাশিয়ার সামরিক কর্মকর্তাদের এ বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত সফলতা এখনো পায়নি রাশিয়া বাহিনী। ইউক্রেনের প্রবল প্রতিরোধের মুখেই হয়তো এমনটা হয়েছে। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফের অপারেশন বিভাগের প্রধান সের্গেই রুডসকো বলেছেন, এখন পর্যন্ত লুহানস্কের ৯৩ শতাংশ এবং দোনেৎস্কের ৫৪ শতাংশ রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
মারিউপোলে থিয়েটারে হামলায় ‘নিহত ৩০০’
এদিকে এএফপির খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহেই দক্ষিণের বন্দরনগর মারিউপোলে একটি থিয়েটারে হামলা চালায় রাশিয়া। ওই হামলায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাঁদের সবাই বেসামরিক নাগরিক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে শহরটির কর্তৃপক্ষ বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে আজ এ তথ্য জানিয়েছে। শহর কর্তৃপক্ষের দাবি, থিয়েটার ভবনে যে বেসামরিক লোক অবস্থান করছিল, তা জানত রাশিয়ার বাহিনী।
গত সপ্তাহে হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন, ওই থিয়েটারে হাজারো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। রাশিয়ার হামলার মুখে মারিউপোলের প্রায় এক লাখ বাসিন্দা খাবার, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবস্থান জীবনযাপন করছেন।
এদিকে মারিউপোল শহরে একটি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে জাতিসংঘ। সেখানে প্রায় ২০০ জনের মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেনে জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস মনিটরিং মিশনের প্রধান মাতিলদা বোগনার বলেন, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গণকবরটি শনাক্ত করা হয়েছে। তবে কবরটিতে থাকা মরদেহের সব কটি বেসামরিক লোকজনের না–ও হতে পারে বলে জানান তিনি।
কয়েক দিন আগেই স্থানীয় নেতারা জানান, যুদ্ধে শুধু মারিউপোলেই তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা তাঁদের। লড়াইয়ের সময় ঝুঁকির কারণে অনেক মরদেহই রাস্তা থেকে সরানো সম্ভব হয় না। পরে এমন অনেক মরদেহের স্থান হয় গণকবরে। খারকিভে একটি চিকিৎসাকেন্দ্রে রুশ হামলায় চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
অনেক অঞ্চল থেকে রাশিয়ার পিছু হটারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। রয়টার্স জানিয়েছে, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার দখল থেকে রাজধানী কিয়েভ পূর্বের কয়েকটি শহর ইউক্রেনের সেনারা মুক্ত করেছেন বলে গতকাল জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
কিয়েভের পূর্বে বরিসপোল শহরের মেয়র ভলোদিমির বোরিশেঙ্কো জানান, রুশ সেনাদের আরও পিছু হটাতে বেসামরিক লোকজনকে শহর ছাড়তে বলা হয়। এর মধ্যেই ২০ হাজার মানুষ সেখান থেকে নিরাপদে চলে গেছেন। এর আগে রাশিয়ার কাছ থেকে রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের শহর মাকারিভকে পুনর্দখলে নেওয়ার দাবি করে ইউক্রেন।
এর আগের দিন বোরিসপোল ও বোরোভারি শহরের মধ্যে অবস্থিত একটি গ্রাম রাশিয়ার দখল থেকে মুক্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন মেয়র ভলোদিমির বোরিশেঙ্কো। কিয়েভের উত্তর–পশ্চিমে ইরপিন, বুচা ও হোস্তোমেল শহরে ইউক্রেনের সেনারা রুশ সেনাদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছেন।
গ্যাসে রাশিয়ার নির্ভরশীলতা কমাতে চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র–ইইউর
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর রাশিয়া থেকে গ্যাস ও জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। জ্বালানি খাতে রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নির্ভরশীলতার পরও তা কাটিয়ে ওঠার পথে হাঁটছিল ইইউ। এমন পরিস্থিতিতে আজ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) নিয়ে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটার অতিরিক্ত এলএনজি সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন চুক্তির বিষয়ে এমন সময়ে ঘোষণা এল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তিন দিনের সফরে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে রয়েছেন। চলমান সংকটের মধ্যে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন জানানোর অংশ হিসেবে জরুরি ভিত্তিতে ইউরোপ সফর করছেন তিনি। ইতিমধ্যে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোসহ কয়েকটি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বাইডেন।
এ ধারাবাহিকতায় আজ পোল্যান্ডের জেসোভ শহর সফর করার কথা বাইডেনের। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী শহরটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।