এবার ভুয়া খবর ধরা পড়বে সফটওয়্যারে
চিকিৎসাবিদ্যায় ‘পেশেন্ট জিরো’ নামে একটি প্রত্যয় আছে, যেটির উদ্ভব হয়েছিল ভুল–বোঝাবুঝির মাধ্যমে। গা টান ডুগাস নামের এক কানাডীয় নাগরিককে বলা হতো উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রথম এইডস আক্রান্ত রোগী। যে কারণে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘পেশেন্ট ও’। কিন্তু ভুল–বোঝাবুঝির কারণে সেটি পরিচিত হয়ে যায় ‘পেশেন্ট জিরো’ নামে। এমনকি ডুগাস নামের সেই নাগরিক উত্তর আমেরিকার প্রথম এইডস রোগীও ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সেই ভুয়া তথ্যটিই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
ভুয়া তথ্য ছড়ানো ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোন তথ্যটি সত্য আর কোনটি ভুয়া, সেটি শনাক্ত করতে প্রায়ই হিমশিম খেতে হয়। এবার কঠিন এই কাজ সহজ করার দায়িত্ব নিতে চলেছে একটি সফটওয়্যার।
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুয়া তথ্য শনাক্তকারী এই সফটওয়্যারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিমাস্কুয়োক’। লিথুনিয়ান এই শব্দটির বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘স্বরূপ উন্মোচন করা’। গুগলের সঙ্গে মিলে সফটওয়্যারটি বানিয়েছে লিথুয়ানিয়ার কোম্পানি ডেলফি। আপাতত ইংরেজি, রুশ ও লিথুয়ানিয়ান—এই তিনটি ভাষার খবর যাচাই-বাছাই করে ভুয়া তথ্য শনাক্ত করবে সফটওয়্যারটি।
ভুয়া তথ্য শনাক্ত করার এ কাজ বিভিন্ন ধাপে করবে সফটওয়্যারটি। যেমন যে শব্দগুলো ব্যবহার করে ভুয়া তথ্য বেশি ছড়ানো হয়, প্রথমে সেই শব্দগুলো শনাক্ত করা হবে। এরপর সেই শব্দগুলো যেসব খবরে পাওয়া যাবে, সেগুলো পড়ে দেখা হবে খবরগুলো ভুয়া না সত্যি। এ ছাড়া ভুয়া খবর যারা ছড়ায়, তাদের একটি বড় উদ্দেশ্য থাকে মানুষের আবেগ-অনুভূতিতে আঘাত হানা। কোন খবরগুলো মানুষকে সহজেই আবেগতাড়িত করতে পারে, সেগুলো খুঁজে বের করেও যাচাই করবে সফটওয়্যারটি।
ভুয়া তথ্য তখনই কার্যকর হয়, যখন সেগুলো বেশি বেশি শেয়ার হয়। সফটওয়্যারটি তাই খুঁজে বের করবে কোন খবরগুলো বেশিবার শেয়ার করা হয়েছে। এরপর সেগুলোর সত্যতা পরীক্ষা করে দেখা হবে। খবরগুলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে শেয়ার করা হচ্ছে কি না, সেটিও দেখবে ‘ডিমাস্কুয়োক’।
ভুয়া তথ্য শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে আরও গভীরেও যাবে এই সফটওয়্যার। ভুয়া তথ্যসংবলিত প্রতিবেদনগুলোতে কাদের বক্তব্য ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি চিহ্নিত করবে সফটওয়্যারটি। এরপর যখনই সেই ব্যক্তির কোনো বক্তব্য অন্য কোনো প্রতিবেদনে পাওয়া যাবে, সেটি যাচাই করে দেখা হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘদিনের গবেষণার ফল এই সফটওয়্যার। ভিক্টোরাস ডকসাস নামের এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সফটওয়্যারটি এখন এতটাই শক্তিশালী যে এটি ‘ভাঙা আয়না’কেও জোড়া লাগিয়ে ফেলতে পারে। প্রতীকী অর্থে বলা এ কথাটি ভুয়া খবর শনাক্তকরণে সফটওয়্যারটির কার্যকারিতাকেই তুলে ধরে। ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে রাশিয়াকে বড় হুমকি বলেও মনে করেন ভিক্টোরাস ডকসাস।
সার্বক্ষণিক তথ্যের ওপর নজর রাখার এই কঠিন কাজে ডেলফি সহায়ক হিসেবে পাচ্ছে লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও। মন্ত্রণালয় ছাড়া আরও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ কাজে সহায়তা করছে। সফটওয়্যারটির কাছে কোনো প্রতিবেদন সন্দেহজনক মনে হওয়ার পর এই বিশেষজ্ঞরা সেগুলো যাচাই-বাছাই করেন। এ ছাড়া প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক এ কাজে অংশগ্রহণ করছেন।