ইউরোপে বিভেদের দেয়াল ভাঙার আহ্বান জেলেনস্কির
মধ্য ইউরোপের স্বাধীনতা ও বন্ধনের মধ্যে একধরনের বিভেদের দেয়াল তৈরি হচ্ছে। ইউক্রেনের মাটিতে রাশিয়ার ফেলা প্রতিটি বোমার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এই দেয়াল আরও বিস্তৃত হচ্ছে। ইউরোপে রাশিয়ার তৈরি এ ‘নতুন দেয়াল’ ভেঙে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আজ বৃহস্পতিবার জার্মানির পার্লামেন্টে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান তিনি। খবর এএফপির।
জার্মানির পার্লামেন্ট সদস্যদের সামনে দেওয়া ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে জেলেনস্কি বলেন, এটা নতুন কোনো বার্লিন দেয়াল নয়। এ দেয়াল রাশিয়ার তৈরি বিভেদের। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর ইউরোপে স্নায়ুযুদ্ধকালের বিভাজনের অবসানের সূচনা করা বার্লিন প্রাচীরের পতন হয়।
বরাবরের মতো আজও ভিডিওতে জেলেনস্কিকে তাঁর ট্রেডমার্ক পোশাকে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, খাকি টি-শার্ট পরা জেলেনস্কির চোখের নিচে কালো দাগ বসেছে। এ সময় জার্মানির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ বুন্দেসতাগের এমপিরা দাঁড়িয়ে জেলেনস্কিকে সম্মান প্রদর্শন করেন।
বক্তব্যের শুরুতে ঐতিহাসিক ঘটনার অবতারণা করেন জেলেনস্কি। এ সময় স্নায়ুযুদ্ধে জার্মানির বিজয়ের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশের বৃহত্তর সংহতি রক্ষায় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা কামনা করেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রিয় শলৎজ, আপনি এই দেয়াল ভেঙে ফেলেন।’ বার্লিন দেয়াল নিয়ে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের অনুরোধের সুর শোনা যায় জেলেনস্কির এই অনুরোধে। তিনি আরও বলেন, ‘জার্মানির জন্য যে ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন, আপনি সে ধরনের নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমি আশা করি।’
তবে বাগ্মিতার একপর্যায়ে জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কেরও সমালোচনা করেন। জ্বালানি ও বাণিজ্য খাতে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির দৃঢ় বন্ধনের বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছিলাম যে নর্ড স্ট্রিমের মাধ্যমে (গ্যাস পাইপলাইপ) যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার একধরনের প্রস্তুতি ছিল।’
‘যুদ্ধের পেছনে আমরা যে কারণ খুঁজে পেয়েছি, সেটি পুরোপুরি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত।’ তিনি জোর দিয়ে তিনবার অর্থনীতির কথা বলেন। তিনি বলেন, অর্থনীতিই নতুন দেয়ালের রসদ।
জেলেনস্কি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, চলমান যুদ্ধের কারণে ইউরোপের ভবিষ্যৎ এখন হুমকির মুখে। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রতিবছর হলোকাস্ট স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রতিবছরই রাজনীতিবিদেরা বলেন, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। কিন্তু বাস্তবে সেটির প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
এ সময় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এখন বুঝতে পারছি, এ ধরনের কথার কোনো অর্থই নেই। একজন মানুষ ইউরোপ ধ্বংস করে ফেলছে।’ তিনি আরও বলেন, রুশ আগ্রাসনের কারণে এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ১০৮ শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এ সময় যুদ্ধ ঠেকাতে সবার সাহায্য চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
১৫ মিনিটের বক্তব্যে কিছুটা সমালোচনার সুর থাকলেও বক্তব্য শেষে জার্মানির পার্লামেন্ট সদস্যরা দাঁড়িয়ে আরেক দফা সম্মান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে।
এর আগে গত বুধবার ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের মুখোমুখি হয়েছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে ইউক্রেনের জন্য আরও সাহায্য চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনে ‘নো–ফ্লাই জোন’ ঘোষণার দাবি জানান।
কংগ্রেসে দেওয়া পুরো ভাষণটি ইউক্রেনের ভাষায় দিলেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে জেলেনস্কি আবেদন জানান ইংরেজিতেই। এ সময় বাইডেনকে ‘শান্তির নেতা’ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বাইডেনের উদ্দেশে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আপনি আপনার জাতির নেতা। আশা করি, আপনি পুরো পৃথিবীর নেতা হবেন। পৃথিবীর নেতা হওয়া মানে শান্তিরও নেতা হওয়া।’