২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই

বোমা হামলার পর আগুন লেগেছে ইস্পাতের গুদামে। আগুন নেভানোর জন্য পানির ব্যবস্থা করতে ছুটছেন ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী। শনিবার ইউক্রেনের খারকিভে
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে হামলা আরও জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। আজ শনিবার ইউক্রেনের খারকিভ ও লুহানস্ক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বলেছে, রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে। হামলার জবাবে কঠোর প্রতিরোধ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন তাদের সেনারা।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তুমুল লড়াই শুরু হওয়ায় যুদ্ধবিরতির আশা ম্লান হয়ে গেছে।

পূর্ব খারকিভ অঞ্চলের মেয়র ওলেগ সিনেগোবভ তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে দাবি করেছেন, তীব্র লড়াইয়ের পর রুশ সীমান্তের কাছে তিনটি গ্রাম পুনর্দখল করে নিয়েছে কিয়েভ বাহিনী। বেজরুকি, স্লেতিন ও প্রুদিয়াঙ্কা থেকে রুশ সেনাদের ভাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের সেনারা। তাঁরা নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতেও সক্ষম হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে দুই পক্ষের মধ্যে এ লড়াই শুরু হয়।

সিনেগোবভ আরও দাবি করেন, রুশ সেনারা বেসামরিক স্থাপনায় আক্রমণ চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছেন। তিনি স্থানীয় লোকজনকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছেন।

তীব্র লড়াই চলার কথা জানিয়েছেন খারকিভের পাশে লুহানস্ক অঞ্চলের মেয়র সের্গি গেইদেও। তিনি বলেন, দুই পক্ষের সেনাদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা গোলাগুলি হচ্ছে। রুবিজনি ও সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন রুশ সেনারা। সুযোগ থাকলে লোকজনকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেস্কি আরেস্তোভিচ বলেন, পূর্বাঞ্চলে হামলা চালিয়ে রুশ সেনারা এখনো বড় ধরনের কোনো বিজয় অর্জন করতে পারেননি। এই সেনারা দোনেৎস্কের উত্তরাঞ্চলে হুলাইপোলে আক্রমণের চেষ্টা করছেন। কিন্তু টানা ছয় দিন ধরে তাঁরা আক্রমণ চালাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে ইউক্রেনের এক কর্মকর্তার বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার আজভস্টাল ইস্পাত কারখানা বাদে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর শহর মারিউপোলের পতন ঘটার দাবি করেছিল ক্রেমলিন। কিন্তু সেখানে আবার হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। এই কর্মকর্তা বলেন, যে ইউক্রেনীয় সেনারা আজভস্টাল ইস্পাত কারখানা থেকে প্রতিরোধ করছিলেন, তাঁদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হচ্ছে।

ইউক্রেনের জাতীয় টেলিভিশনে ওলেস্কি বলেন, আজভস্টাল এলাকায় মারিউপোলে প্রতিরোধকারী সেনাদের দমানোর চেষ্টা করছে ক্রেমলিন।

তবে রয়টার্স বলছে, রাশিয়ার বর্তমান আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে দনবাস এলাকা। সেখানে মস্কো-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বছরের পর বছর ধরে কিছু অংশ দখল করে রেখেছেন। খারকিভের গভর্নরের দাবি, রুশ বাহিনীর ব্যাপক হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

আজ রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে। এ বিষয়ে কিয়েভের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ইউক্রেন দাবি করেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ১৭৭টি রুশ যুদ্ধবিমান ও ১৫৪টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করেছে তারা।

ইতিমধ্যে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের বরাতে আজ যুক্তরাজ্য বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রুশ সেনারা তেমন কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এর আগে গতকাল রুশ জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভ বলেন, দনবাস অঞ্চল ছাড়াও দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ চায় মস্কো। অর্থাৎ ইতিপূর্বে ইউক্রেনে হামলার জন্য ক্রেমলিন যে লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তার চেয়ে তাদের লক্ষ্য এখন বিস্তৃত হয়েছে। তিনি বলেন, দনবাস দখলে নেওয়া গেলে ক্রিমিয়ার সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য একটি সেতু তৈরি করা সম্ভব হবে। আর দক্ষিণাঞ্চল নিয়ন্ত্রণে এলে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের পথ সুগম হবে। এতে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করার পথ প্রশস্ত হবে।

মিনেকায়েভের মন্তব্যের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা কেবল তাদের আগ্রাসনের শুরু। মস্কো অন্য দেশ দখলের জন্যও নকশা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমরা সারির প্রথমে। এরপর কোন দেশ?’ তিনি আরও বলেন, ‘এত দিন পর ইউক্রেনের মিত্ররা তাদের প্রতিশ্রুত অস্ত্র দিতে শুরু করেছে।’

গত বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে ৮০ কোটি মার্কিন ডলারের সামরিক সহায়তার ঘোষণা দেন। পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে, গত মাসে রুশ সেনারা কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি বিজয় ঘোষণার জন্য মরিয়া ছিলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও বলেছেন, অন্তত কিছু জয় দেখানোর জন্য রাশিয়া যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।