ইউক্রেনে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র রাখার ডিপোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে তীব্র হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেন ও রুশ সেনাদের তুমুল লড়াই চলছে সেখানে। এরই মধ্য দেশটির পশ্চিমের তেরনোপিল অঞ্চলের চর্তকিভ শহরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেওয়া অস্ত্র রাখার ডিপোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। আজ রোববার চালানো ওই হামলায় ১২ জন আহত হয়েছেন। রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
হামলার শিকার ওই অস্ত্রভান্ডারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর পাঠানো অস্ত্র রাখা হয় বলে জানিয়েছেন তেরনোপিলের আঞ্চলিক গভর্নর। কৃষ্ণসাগরে অবস্থান করা রুশ যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে সেখানে। এতে অস্ত্রভান্ডারটির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তবে হামলার সময়ে সেখানে কোনো অস্ত্র মজুত ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক কর্মকর্তা। রয়টার্স অবশ্য স্বতন্ত্রভাবে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
শক্তিশালী রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এ নিয়ে শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মস্কো। চলতি মাসের শুরুতেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, পশ্চিমা দেশগুলো যদি ইউক্রেনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়, তাহলে নতুন সব লক্ষ্যে হামলা শুরু করবেন তাঁরা।
তবে রাশিয়ার হুমকি উপেক্ষা করে পশ্চিমা অস্ত্রসহায়তা বাড়াতে আবারও আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের নেতারা। তাঁদের হাতে থাকা অস্ত্রের মজুত ফুরিয়ে আসছে বলেও খবর বেরিয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে পশ্চিমাদের প্রতি কামান পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। অঞ্চলটিতে দফায় দফায় রাশিয়ার কামান হামলায় চাপের মুখে রয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা।
রাশিয়া এ মুহূর্তে দনবাসে যেভাবে হামলা চালাচ্ছে, ইউক্রেনে অভিযান শুরুর সময় পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। সে সময় ক্রেমলিনের লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে ‘নাৎসি প্রভাবমুক্ত’ করা ও ‘নিরস্ত্রীকরণ’। তবে পরে সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসে মস্কো। জানায়, এখন দনবাস অঞ্চল দখলের দিকে নজর দেওয়া হবে। লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাসের বড় একটি অংশ অবশ্য আগে থেকেই রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এরই মধ্যে নতুন লক্ষ্য অনুযায়ী এ অঞ্চলে হামলা জোরদার করা হয়েছে।
দনবাসে সবচেয়ে তীব্র লড়াই চলছে সেভেরোদোনেৎস্কে। বলা হচ্ছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া হামলা শুরুর পর সবচেয়ে রক্তাক্ত লড়াই হচ্ছে শহরটি ঘিরে। দনবাসের লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সেরহি হাইদাই আজ জানিয়েছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের রাস্তায় রাস্তায় লড়াই করছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সেনারা। শহরটির বেশির ভাগ এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে রয়েছে। তবে শহরের শিল্প এলাকা ও একটি রাসায়নিক কারখানা এখনো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ইউক্রেনের সেনারা। সেখানে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় সেভেরোদেনেৎস্কে কতজন ইউক্রেনীয় হতাহত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি লুহানস্কের গভর্নর। তিনি বলেন, সবাই শহরটি ছেড়ে পালাতে চাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুযোগ আসেনি। লিসিচানস্ক শহরেও রাশিয়ার গোলা হামলা চলছে। ওই হামলায় চারটি বাড়ি ও বিপণনকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। এতে এক নারী নিহত হয়েছেন।
এসবের মধ্যেই ইউক্রেনে রাশিয়ার দখলে থাকা খেরসন ও মারিউপোল শহরের বাসিন্দাদের পাসপোর্ট দিচ্ছে রুশ সরকার। গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো খেরসনের ২৩ বাসিন্দার হাতে পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়।
খেরসনে মস্কো নিযুক্ত সামরিক গভর্নর ভলোদিমির সালদো বলেছেন, শহরটির বাসিন্দারা রাশিয়ার নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট পেতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। অপর দিকে রাশিয়ার পাসপোর্ট দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির ভাষ্য, রুশ পাসপোর্ট দেওয়ার মাধ্যমে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের রাশিয়ার নাগরিক বানানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতার ‘প্রকাশ্য লঙ্ঘন’ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, অভিযানের পর থেকে রাশিয়ার দখলে যাওয়া সব অঞ্চলে রুশ পাসপোর্ট দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইউক্রেন। এভাবে এসব অঞ্চলের মানুষকে রাশিয়ার নাগরিক বানিয়ে তাঁদের ‘রক্ষার’ দাবি তুলতে পারে ক্রেমলিন।