ইউক্রেনকে দেওয়ায় ভান্ডারে ঘাটতি, স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে যুক্তরাষ্ট্র
রুশ বাহিনীকে রুখতে মোক্ষম অস্ত্র স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র হাতে পেয়েছিলেন ইউক্রেনের সেনারা। এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করতে হয় না। যেকোনো জায়গায় কাঁধ থেকেই ছোড়া যায় বিমানবিধ্বংসী এই ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনের সেনাদের যুদ্ধে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা রুখতে এই অস্ত্র বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বিশ্লেষকেরা বলে আসছেন। ইউক্রেনকে এই স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের অন্যতম জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র।
ইউক্রেনকে অকাতরে অত্যাধুনিক এই ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভান্ডারে এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই ঘাটতি পূরণে এখন যুক্তরাষ্ট্রই স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চুক্তি সই করেছে মার্কিন প্রশাসন। খবর রয়টার্স ও আল–জাজিরার।
রয়টার্সের হাতে আসা মার্কিন সরকারের এ–সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে ১ হাজার ৪৬৮টি বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে ওয়াশিংটন। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেথিওন টেকনোলজিসের সঙ্গে গত বুধবার সই হওয়া চুক্তিতে এসব ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র আকারে তুলনামূলক ছোট, ওজনে হালকা, সহজে বহনযোগ্য। সাধারণত এই অস্ত্র কাঁধে বহন করা যায়। হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, মনুষ্যবিহীন বিমান বা ড্রোন, এমনকি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সহজে ধ্বংস করতে এটি বেশ কার্যকর।
অস্ত্র কেনার এই চুক্তির বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ও রেথিওন টেকনোলজিস আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তারা কিছু বলেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন ও পশ্চিমা মিত্ররা ইউক্রেনকে মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে অর্থ ও অস্ত্রসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র, রাইফেল, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, এম৭৭৭ হোইতজার কামানসহ বিভিন্ন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে ইউক্রেনের জন্য ৪ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন পেয়েছে। এর আওতায় দেশটিতে ৮৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করবে ওয়াশিংটন।
পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছিল। তবে গত বছরের জুলাইয়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন আবারও শুরুর চুক্তি করে রেথিওন টেকনোলজিস। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়—এসব ক্ষেপণাস্ত্র মূলত বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য বানানো হবে।
এদিকে রেথিওন টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী গ্রেগ হায়েস বলেছিলেন, ১৮ বছর ধরে বিমানবিধ্বংসী স্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ফরমাশ দেয়নি পেন্টাগন। তবে অ্যারিজোনার কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্রটির কিছু উপাদান বা অংশ বানানো হয়েছে। এর কিছু উপাদান বানানো এখন আর বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। কিছু উপাদান নতুন করে বানাতে হবে। তাই নতুন করে ক্রয়াদেশ দিলে ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে বাড়তি সময় লাগতে পারে।
এদিকে বিপুল সামরিক ও মানবিক সহায়তা পেলেও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এক ভাষণে তিনি রাশিয়াকে নিয়ে ‘খেলা’ বন্ধ করতে পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে মস্কোর ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনা প্রক্রিয়ায় এগোতে চায় রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেন এ আলোচনা প্রক্রিয়া নস্যাৎ করছে। গতকাল শুক্রবার অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামারের সঙ্গে টেলিফান আলাপে এ কথা বলেন পুতিন।