ইউক্রেন সংকট: রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইউক্রেন সংকট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতার পর এবার নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটল পশ্চিমা বিশ্ব। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এবার নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ ঘোষণা দেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে যদি আরও হামলা চালায় তবে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাইডেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার বড় দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এবং রাশিয়ান সোভেরিন ডেবটের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তাঁর সরকার। এ ছাড়া রাশিয়ার ধনকুবের ও তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং রুশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর গত সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর সেখানে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
এরপর পরই মূলত নিষেধাজ্ঞা আসা শুরু করেছে পশ্চিমা বিশ্বের পক্ষ থেকে। প্রথমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও একই পথ হাঁটল। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা বলছে।
এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে শুরু করেছে রাশিয়া। এই দুটি অঞ্চলকে দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে অনস্বীকার্যভাবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে সংকটের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, দেশটিতে আক্রমণ চালানো হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সীমান্তে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হলেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সেটাই হলো। রুশ সেনারা ওই সব এলাকায় প্রবেশের পরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো।
এই নিষেধাজ্ঞায় সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রটি ব্যবহার করল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার ভিইবি ব্যাংক ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ব্যাংক প্রোমসভায়াজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো। সামরিক বাহিনীর এই ব্যাংকটি বিভিন্ন সামরিক চুক্তিতে কাজ করে থাকে।
এ ছাড়া যেসব ধনকুবেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন না। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের থাকা ওই ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ করা হবে।
বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়া পরবর্তী পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে। আমাদেরও পরবর্তী পদক্ষেপ প্রস্তুত রয়েছে। রাশিয়া যদি তার আগ্রাসন অব্যাহত রাখে তবে মাত্রাতিরিক্ত মূল্য দিতে হবে।’ দেশটির বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলেও মন্তব্য করেছেন বাইডেন।
এদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাইডেন ভাষণ দিয়েছেন তা দেখেননি প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে নিষেধাজ্ঞার বিষয়গুলো মূল্যায়ন করবে রাশিয়া।
রাশিয়ার পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাইডেন। তবে রাশিয়ার সরাসরি লড়াইয়ে জড়ানোর ইচ্ছে নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুনিয়ায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।