যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াও সম্ভবত চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে
সৌদি আরবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভের প্রতি কিছুটা নমনীয়। যুদ্ধ বন্ধে এখন রাশিয়ারও যে দায় আছে, সেটা বলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব নিয়ে লিখেছেন বিবিসির কূটনৈতিক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস, যা গতকাল বুধবার বিবিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ‘বল এখন রাশিয়ার মাঠে।’ এমন এক সময়ে তিনি এই মন্তব্য করলেন, যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দীর্ঘ আলোচনা শেষে গত মঙ্গলবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। শান্তি অর্জনের জন্য রাশিয়ার সহযোগিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের যৌথ বিবৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা সম্ভবত এটাই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন থেকে কী আশা করেন, তা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে আমরা অনেক কিছু শুনেছি। একই সময়ে কিয়েভকে নিজেদের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করতে হোয়াইট হাউস কী ধরনের স্থূল কৌশল গ্রহণ করেছে, আমরা তা–ও দেখেছি।
তবে এখন মনে হচ্ছে রাশিয়ার পালা এসেছে। এখন ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি নিয়ে দেশটির মনোভাব কী, তা প্রকাশ্যে জানার সময় হয়েছে।
ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে মীমাংসা করতে চাইছিলেন, যত দূর জানা যায় তা ঘিরে অনিশ্চয়তা আছে। কারণ, নিজেদের শান্তিচুক্তি মানতে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিলেও পুতিনকে কোনো চাপ দিচ্ছিলেন না ট্রাম্প। ফলে ট্রাম্পের তৎপরতায় একধরনের ভারসাম্যহীনতা ছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের বিবৃতি এটা ইঙ্গিত করে না যে জেলেনস্কির প্রতি ট্রাম্প নিজের মনোভাব আকস্মিকভাবে পরিবর্তন করে ফেলেছেন। তাঁদের মধ্যকার সম্পর্ক কণ্টকাকীর্ণ, যা অনেক বছরের পারস্পরিক অবিশ্বাসের ফলে জন্ম নিয়েছে।
কিন্তু যৌথ বিবৃতির মধ্য দিয়ে ১১ দিন আগে (২৮ ফেব্রুয়ারি) ওভাল অফিসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বিতণ্ডার ফলে যে কালো মেঘ জমেছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। কারণ, শান্তি প্রতিষ্ঠার আসল কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।
ওই বিতণ্ডার পর ইউক্রেনে অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত মঙ্গলবার তা আবার শুরু করার ঘোষণা এসেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন রাশিয়াই চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তি কী কী শর্তের ভিত্তিতে হতে যাচ্ছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
ওয়াশিংটন-কিয়েভের যৌথ বিবৃতিতে স্থায়ী যুদ্ধ বন্ধের ‘বাস্তবসম্মত বিবরণ’ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ‘দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির জন্য’ ইউক্রেন যে ধরনের নিশ্চয়তা আশা করে, সেই বিষয়েও কিছু কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু যৌথ বিবৃতির শেষ অনুচ্ছেদে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বহুল আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ চুক্তি হওয়ার মধ্য দিয়েই নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি অর্জন করা যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কিয়েভ সামরিক নিরাপত্তার যে কথা বলে আসছিল, তা নিয়ে সেখানে কিছু বলা হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ‘যত শিগগির সম্ভব’ চুক্তি করতে সম্মত হয়েছেন। এখন কথা হলো, এই দুই দেশের মধ্যে যদি নিরেট কোনো বাণিজ্য চুক্তিও হয়, তা ভবিষ্যতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করবে। তবে, বাণিজ্য চুক্তিটির বিস্তারিত বিবরণী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তা কেমন হয়, সেটা দেখার বিষয়।
বিবৃতিতে এটাও বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল জোর দিয়ে বলেছে ‘শান্তিচুক্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় অংশীদারদের রাখতে হবে’। কিন্তু আলোচনায় ইউরোপীয় দেশগুলো কীভাবে অংশ নিতে পারে, সেটার সম্ভাব্য রূপরেখা নিয়ে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যে গত মঙ্গলবারের সৌদি আরবে বৈঠক সময়োপযোগী বলে মনে হচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন ভবিষ্যতে একই মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জেলেনস্কির কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। আগে তেমনটি থেকে থাকলেও তিনি যে একজন খামখেয়ালি এবং অস্থির মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করছেন, সে বিষয়ে তাঁর এখন আর কোনো সন্দেহ নেই।
বল এখন কীভাবে রাশিয়ার মাঠে রাখা যায়, জেলেনস্কিকে সেভাবেই কাজ করতে হবে। কিন্তু বল যেকোনো সময় যে তাঁর মাঠে চলে আসতে পারে, তা তিনি ভালোভাবে জানেন।