মস্কোয় হামলার জবাব কীভাবে দেবেন পুতিন
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় গত শুক্রবার ভয়াবহ এক হামলা হয়ে গেল। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। তবে ভিন্ন সুরে কথা বলছে ক্রেমলিন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ দেশটির অনেক কর্তাব্যক্তির দাবি, হামলার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে ইউক্রেন। সব মিলিয়ে মস্কোর এ ঘটনার জেরে রাশিয়ার নেতারা কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিবিসির রাশিয়াবিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ। এ নিয়ে লিখেছেন বিস্তারিত।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর নিউ অ্যারবাট অ্যাভিনিউ। বড় বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছে একই ছবি। একটি জ্বলন্ত মোমবাতির নিচে লেখা ‘স্ক্রোরবিম’। অর্থ ‘আমরা শোকাহত’। এ চিত্র রোববারের। মস্কোর ক্রোকাস সিটি হলে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর এভাবেই শোক প্রকাশ করেন রুশ জনগণ।
মস্কোর নিহত ব্যক্তিদের জন্য শোক প্রকাশের অংশ হিসেবে রাশিয়াজুড়ে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে সব আয়োজন ও খেলাধুলার অনুষ্ঠান। টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপকদের দেখা যাচ্ছে কালো পোশাকে।
ক্রোকাস সিটি হল মস্কোর কেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে। এরপরও সংগীত অনুষ্ঠানের জন্য তুমুল জনপ্রিয় একটি স্থান সেটি। এ স্থানই গত শুক্রবার যেন নরকে পরিণত হয়েছিল। ঘাতকেরা শুধু নিরীহ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি, আগুনও দিয়েছিল। এ ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটির ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্রোকাস সিটি হলের ছাদ ও ধাতব অবকাঠামো ধসে পড়েছে।
রোববারও এই সিটি হলের বাইরে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল ভবনটির পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একাংশ। ভালোমতেই বোঝা যাচ্ছিল হামলাকারীরা ভেতরে কী তাণ্ডব চালিয়েছিল।
শুক্রবারের হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে রোববার সিটি হলের বাইরে ছিল মানুষের দীর্ঘ সারি। ফুলের সঙ্গে খেলনা ও পুতুল এনেছিলেন কেউ কেউ। কারণ, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। অনেকে নানা বার্তা লেখা কাগজ রেখে যাচ্ছিলেন; যেমন একজন হামলাকারীদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘আমরা কখনোই তোমাদের ক্ষমা করব না।’
শ্রদ্ধা জানাতে আসা ব্যক্তিদের একজন তাতিয়ানা। তিনি বলেন, ‘দেশের হৃদয় পুড়ছে। আমার ভেতরটা কাঁদছে। রাশিয়া কাঁদছে। হামলায় অনেক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন আমার নিজের সন্তানই মারা গেছে।’ রোমান নামের আরেকজন বলেন, ‘আমি কাছেই থাকি। সেদিন কী হয়েছে তা আমি জানালা দিয়ে দেখেছি। এটা ছিল ভয়াবহ আর বড় মর্মান্তিক এক ঘটনা।’
শুক্রবারের হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁরা হলেন—দালের্দজন বারোতোভিচ মিরজোয়েভ, সাইদআক্রামি মুরোদালি রাচাবালিজোদা, শামসিদিন ফারিদুনি ও মুহাম্মাদসোবির ফায়জভ। তাঁদের দুই মাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মস্কোর একটি আদালত।
ক্রোকাস সিটি হলে হামলার দায় স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। হামলাকারীদের ছবিও প্রকাশ করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, আইএসের এই দায় স্বীকার নিয়ে সন্দেহ করার কোনো কারণ নেই।
হামলার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছে, তা নিয়ে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ভিন্ন। এই হামলার জন্য ইউক্রেন দায়ী—কোনো না কোনোভাবে এমন ধারণা প্রচার করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। গত শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনে পালানোর চেষ্টার সময় চার বন্দুকধারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের সীমান্ত পার হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল ইউক্রেন সরকার। তবে এ দাবি নাকচ করেছে কিয়েভ।
রাশিয়ার সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যম মস্কোভস্কি কোমসোমোলেতস নিজেদের ওয়েবসাইটে ইউক্রেনবিরোধী একটি মতামত প্রকাশ করেছে। এর শিরোনাম ‘ইউক্রেনকে অবশ্যই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে।’ ওই লেখায় বলা হয়েছে, ‘কিয়েভ সরকারকে ধ্বংস করে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে...আর এটা করার সক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার।’
মতামতের এমন ভাষা কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এনেছে। তা হলো, ধ্বংসাত্মক এই হামলার জবাব কীভাবে দেবে ক্রেমলিন? ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতপূর্ণ হওয়ার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তার ন্যায্যতা দিতে ক্রোকাস সিটি হলে হামলাকে কি ব্যবহার করবেন রাশিয়ার নেতারা?