পাতাল ট্রেনে খোয়ালেন মুঠোফোন, পরে জানলেন অ্যাকাউন্টের সব অর্থ গায়েব, নেওয়া হয়েছে ঋণ
নিয়ল ম্যাকনামি থাকেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। একদিন পাতাল ট্রেনে ভ্রমণ করছিলেন তিনি। হাতে ছিল মুঠোফোন। এক মনে স্ক্রলিং করছিলেন। ট্রেনের দরজা বন্ধ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে বাধে বিপত্তি। হঠাৎ ছোঁ মেরে তাঁর হাত থেকে মুঠোফোনটি কেড়ে নিয়ে চম্পট দেয় ছিনতাইকারী।
মুঠোফোন খুইয়ে পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন নিয়ল, কিন্তু ফেরত পাননি। বিপত্তির শেষ এখানে নয়। দুই দিন পর নিয়ল জানতে পারেন, ছিনতাইকারী তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সব অর্থ তুলে নিয়েছে।
শুধু কি তা–ই, নিয়লের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ছিনতাইকারী। আর এসব ঘটানো হয়েছে অনলাইন ব্যাংকিংয়ে, নিয়লের ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন ব্যবহার করে।
ছিনতাইকারী ওই মুঠোফোন ব্যবহার করে নিয়লের অ্যাকাউন্ট থেকে পাক্কা ২১ হাজার পাউন্ড তুলে নিয়েছে। সেই সঙ্গে নিয়লের নামে নিয়েছে ৭ হাজার পাউন্ডের ঋণ। ব্যাংক থেকে লেনদেন-সংক্রান্ত এসব বার্তা পাওয়ার পর চোখ কপালে ওঠে ৩০ বছর বয়সী নিয়লের।
নিয়ল বিবিসিকে বলেন, ‘আগে মানুষ মুঠোফোন চুরি বা ছিনতাই করত তা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। আর এখন সম্ভবত সেটা করা হচ্ছে আপনার যাবতীয় ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে অর্থ নেওয়ার জন্য।’
যুক্তরাজ্যের পরিবহন পুলিশের (বিটিপি) তথ্য বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যজুড়ে ট্রেন ও স্টেশনে চুরি-ডাকাতির সংখ্যা ৫৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে ট্রেন ও ভূগর্ভস্থ পরিবহন নেটওয়ার্কে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে বিটিপি। সংস্থাটি বলছে, ডিসেম্বর মাস এলে এমন চুরি-ডাকাতি বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ প্রবণতা দেখা গেছে।
গত বছর লন্ডনে এসব অপরাধমূলক ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা গেছে। রাজধানীর বাইরে বার্মিংহাম, কেন্ট, এক্সেস ও ম্যানচেস্টার থেকেও অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিটিপি।
অসংখ্য অভিযোগ এলেও ভুক্তভোগীরা সমাধান পেয়েছেন, এমন ঘটনা খুবই কম। ২০২৩ সালে এমন চুরি-ডাকাতির ২৩ হাজার ৬৩৮টি অভিযোগ জমা পড়েছিল। ৯৮ শতাংশের ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা ‘ইতিবাচক সমাধান’ পাননি।
ভুক্তভোগী নিয়লের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি পেশায় সংগীতজ্ঞ ও অভিনেতা। ১২ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন। ঘটনার পরপরই তিনি পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তবে অনলাইন ব্যাংকিং আর কার্ডে লেনদেন সাময়িকভাবে বন্ধ করতে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ সুযোগ নিয়েছে ছিনতাইকারী।
নিয়ল বলেন, ‘তারা সবকিছু নিয়ে গেছে। আমার অনলাইন ব্যাংকিংয়ে দেখাচ্ছে (ব্যালান্স) শূন্য...শূন্য...শূন্য।’
এ ভুক্তভোগী আরও জানান, ছিনতাইকারী এইচএসবিসি ব্যাংক থেকে তাঁর নামে ৭ হাজার পাউন্ড ঋণ নিয়েছে। পরে তার অ্যাকাউন্টে থাকা সব অর্থ নিজের মোনজো অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেয়। লেনদেনের নথি বলছে, ছিনতাইকারী অ্যাপল স্টোরেও নিয়লের অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করেছে।
বিবিসির পক্ষ থেকে এইচএসবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এখনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
নিয়লের দাবি, তাঁর অ্যাকাউন্টগুলো মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ (ফেস আইডি) ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। এরপরও ছিনতাইকারী কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে পারল, সেটা তিনি এখনো বুঝতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারা (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) বারবার বলেছে, আমি “যোগ্য নই”। অথচ ছিনতাইকারী ঠিকই এত অল্প সময়ের মধ্যে ঋণ নিতে পেরেছে।’
ঘটনা ঘটার মাসখানেক পর ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, নিয়লের মুঠোফোন খোয়া যাওয়ার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই দিনের সিসিটিভি ফুটেজে প্রমাণাদি না থাকায় তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে।