২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

পুতিনের বিরুদ্ধে গিয়ে মৃত্যু নয়তো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন রাশিয়ার যে ৭ নাগরিক

ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন গত জুনের শেষের দিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তাঁর বাহিনীর যোদ্ধাদের নিয়ে মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছিলেন। তখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন এমন পরিস্থিতি রাশিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে। পরে অবশ্য, বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থামান। গতকাল বুধবার মস্কোর উত্তরে বিধ্বস্ত হওয়া একটি উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় ৬২ বছর বয়সী প্রিগোশিনের নাম আছে।

প্রিগোশিন আসলেই মারা গেছেন কি না, মারা গেলেও এটি স্বাভাবিক দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড—এ নিয়ে নানা ধোঁয়াশা চলছে।

অতীতে দেখা গেছে, পুতিনের বিরোধিতা করার পর বেশ কয়েকজন রুশ নাগরিক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন কিংবা মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন। আবার কারও কারও মৃত্যুও হয়েছে। এসব ঘটনায় রাশিয়াকে দায়ী করা হলেও মস্কো সে অভিযোগ নাকচ করে আসছে।

তেমনই রহস্যময় কয়েকটি ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

অ্যালেক্সি নাভালনি

২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়া থেকে মস্কো যাওয়ার পথে রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় জানা যায় তাঁকে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনি জার্মানিতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। পরে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা দাবি করে, নাভালনির দেহে নোভিচক নামের নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে নাভালনিকে বিষ প্রয়োগে সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

২০২১ সালে স্বেচ্ছায় রাশিয়ায় ফেরার পর বিশ্বজুড়ে অনেক প্রশংসা পেয়েছেন নাভালনি। দেশে পৌঁছানোর পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে মোট সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন সাজা ভোগ করছেন। তবে নাভালনি বরাবরই তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে আসছেন।

নাভালনিকে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি তাঁর রাজনৈতিক গতিবিধিকে বেআইনি এবং তাঁকে ‘চরমপন্থী’ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ১৯ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।  

অ্যালেক্সি নাভালনি
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

সের্গেই স্ক্রিপাল

রাশিয়ার সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গোয়েন্দা তথ্য পাচার করেছিলেন। ২০১৮ সালের মার্চে সালিসবুরিতে একটি বিপণিকেন্দ্রের বাইরে স্ক্রিপাল এবং তাঁর মেয়ে ইউলিয়াকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাঁরা দুজনই বেঁচে যান। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলেন, তাঁদের নোভিচক নামের নার্ভ এজেন্ট প্রয়োগ করা হয়েছে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত সামরিক বাহিনী এ ধরনের নার্ভ এজেন্ট তৈরি করত।

তবে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া। তাদের দাবি, যুক্তরাজ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

ভ্লাদিমির কারা-মুরজা

রাশিয়ার বিরোধীদলীয় মানবাধিকারকর্মী ভ্লাদিমির কারা-মুরজা বলেছেন, তাঁর বিশ্বাস ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে তাঁকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছিল। জার্মানির একটি পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর কারা-মুরজার শরীরে বিপুল মাত্রায় পারদ, তামা, ম্যাংগানিজ ও দস্তা পাওয়া গিয়েছিল। রয়টার্স ওই মেডিকেল রিপোর্টগুলো হাতে পেয়েছে। তবে কারা-মুরজাকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।

আলেক্সান্ডার লিতভিনেনকো

কেজিবির সাবেক এজেন্ট এবং পুতিনের সমালোচক আলেক্সান্ডার লিতভিনেনকো ২০০৬ সালে মারা যান। পোলোনিয়াম-২১০ (এক ধরনের বিরল তেজস্ক্রিয় পদার্থ) মিশ্রিত গ্রিন টি খাওয়ার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। লিতভিনেনকোর বয়স হয়েছিল ৪৩ বছর।

২০১৬ সালে এক ব্রিটিশ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সম্ভবত এ হত্যাকাণ্ড অনুমোদন করেছিলেন। তবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।

যুক্তরাজ্যের এক জ্যেষ্ঠ বিচারপতির তদন্তে দেখা গেছে, কেজিবির সাবেক দেহরক্ষী আন্দ্রেই লুগোভয় এবং দিমিত্রি কভতুন নামের দুই রুশ নাগরিক এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন। ধারণা করা হয়, রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) নির্দেশনায় তাঁরা এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন। এফএসবি সোভিয়েত যুগের কেজিবির প্রধান উত্তরসূরি হিসেবে পরিচিত।

বিষ প্রয়োগের আগের দিনই রাশিয়া ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন লিতভিনেনকো।

ভাগনার যোদ্ধাদের সঙ্গে ইয়েভগেনি প্রিগোশিন
ছবি: এএফপি ফাইল ছবি

আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনি

২০১২ সালের নভেম্বরে লন্ডনের কাছে নিজের বিলাসবহুল বাড়ির কাছে ৪৪ বছর বয়সী রুশ নাগরিক আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনির মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিনি সেদিন জগিং-এর জন্য বের হয়েছিলেন।

রাশিয়ায় মানি লন্ডারিংবিষয়ক এক ঘটনা তদন্তে সুইস কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার পর ২০০৯ সালে ব্রিটেনে আশ্রয় নেন পেরেপিলিচনি। তাঁর আকস্মিক এ মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। অনেকে বলে থাকেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে তদন্ত পূর্ববর্তী এক শুনানিতে বলা হয়, পেরেপিলিচনির পাকস্থলীতে জেলসেমিয়াম গাছের বিরল ধরনের বিষের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।

পেরেপিলিচনি এক বাটি বিশেষ স্যুপ খেয়েছিলেন। ওই স্যুপটি রাশিয়ায় জনপ্রিয়। তবে পেরেপিলিচনির মৃত্যুর ঘটনাতেও নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

আরও পড়ুন

ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কো

২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতা ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কোকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। তিনি পশ্চিমাপন্থী টিকিটে মস্কোপন্থী প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।

ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কো অভিযোগ করেছিলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজ চলার সময় তাঁকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কোর দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি ডায়োক্সিন পাওয়া গিয়েছিল। বিষক্রিয়ায় তাঁর মুখ ও শরীর বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার পর তাঁর অনেকগুলো অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

আন্না পোলিতকভস্কায়া

রাশিয়ার নারী সাংবাদিক আন্না পোলিতকভস্কায়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করতেন। ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর মস্কোতে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি সুপার মার্কেট থেকে ফিরছিলেন।

পোলিতকভস্কায়ার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। এ ঘটনা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছিল। রাশিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন তখন।