পুতিনের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিলেন নাভালনি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনি গতকাল শুক্রবার রুশ কারাগারে মারা গেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নাভালনি গত এক দশকে পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিলেন।
রুশ কারা কর্তৃপক্ষ নাভালনির মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই তিনি চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। বলা হয়েছে, হেঁটে আসার পর তিনি ভালো বোধ করছিলেন না। তিনি জ্ঞান হারান। চিকিৎসকেরা আর তাঁর সংজ্ঞা ফেরাতে পারেননি। জরুরি চিকিৎসকেরা কারাবন্দী নাভালনির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
নাভালনি মূলত পরিচিত ছিলেন পুতিনের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ও তাঁর সরকারের কট্টর সমালোচক ছিলেন। তিনি রাজনৈতিক পরিবর্তনপ্রত্যাশী ছিলেন। নাভালনির নিজের বিশাল রাজনৈতিক নেটওয়ার্ক ছিল। তিনি রাশিয়ার রাজপথে ব্যাপক বিক্ষোভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পুতিন ও তাঁর মিত্রদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন নাভালনি। কথিত দুর্নীতি নিয়ে তাঁর ছাড়া ভিডিওগুলো ইউটিউবে অনেক দর্শক দেখেছেন। পুতিন তাঁকে এতটাই অপছন্দ করতেন যে প্রকাশ্যে তাঁর নামও নিতেন না।
নাভালনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পুরস্কার জিতেছিলেন। তাঁকে অনেকবার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। গৃহবন্দীও থাকতে হয়েছে। রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁর ব্যাংক হিসাবও জব্দ করে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। কিন্তু নাভালনি নানা সৃজনশীল উপায়ে পুতিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরোধিতা করে গেছেন।
১৯৯৯ সালে রাজনীতিতে প্রবেশের আগে নাভালনি রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও ফাইন্যান্স নিয়ে পড়েছেন। রাজনীতি থেকে তাঁকে সরানোর আগে তিনি বিরোধী দল ইয়াবলোকোতে যোগ দেন। পরে তিনি ‘অ্যান্টিকরাপশন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি দুর্নীতিরোধী সংস্থা গড়ে তোলেন। এ সংস্থার কাজ ছিল ক্রেমলিনের অভিজাত ব্যক্তিদের দুর্নীতির অনুসন্ধান। এ কাজে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন অনেকে।
২০১৩ সালে মস্কোয় মেয়র নির্বাচনে ২৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিশ্লেষকদের চমকে দেন নাভালনি। ২০২০ সালে সার্বিয়ায় যাওয়ার পথে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।
ওই ঘটনায় রুশ কর্তৃপক্ষ তাদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। গত বছর নাভালনির আইনজীবী বলেন, নাভালনি আশঙ্কা করছিলেন, কারাগারে তাঁকে ধীরে ধীরে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হতে পারে। কারণ, তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত তাঁর ওজন কমছিল।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নাভালনিকে কারাগারে রাখা হয়। আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলোর অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ রাজনৈতিক। গত ডিসেম্বরে তাঁকে রাশিয়ার উত্তরে একটি কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময়েও তাঁর অবস্থা ভালো ছিল বলে জানান তাঁর মুখপাত্র।
নাভালনি কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই রাশিয়া আরও কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে মোড় নেয়। ইউক্রেন যুদ্ধবিরোধী ও ক্রেমলিনবিরোধী হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে ঢোকানো হয়।
নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমাইশ বলেন, নাভালনির বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা করা হয়। সব মিলিয়ে তাঁর ৩৫ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।
সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান নাভালনি নিজের দেশকে ভালোবাসতেন। তবে ক্রেমলিনের চোখে তিনি ছিলেন মার্কিন গোয়েন্দাদের চর। তবে বিষপ্রয়োগের পর জার্মানিতে থাকাকালে তিনি দেশে ফিরবেন কি না, যখন প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন বলেছিলেন, ‘রাশিয়া আমার দেশ, মস্কো আমার শহর, আমি একে খুব মিস করি।’