স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে বিয়ের তারিখ জানালেন নরওয়ের রাজকন্যা
নরওয়ের রাজা হারাল্ড এবং রানি সঞ্জার মেয়ে রাজকন্যা মার্থা লুইস হলিউডের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু ডুরেক ভেরেটকে বিয়ে করবেন বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবার এ যুগল তাঁদের বিয়ের তারিখ ঘোষণা করেছেন। গতকাল বুধবার তাঁরা বলেছেন, আগামী বছর ৩১ আগস্ট বিয়ে করছেন তাঁরা।
নরওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গেইরেঞ্জার শহরে ইউনেসকো–ঘোষিত একটি বিশ্ব ঐতিহ্যের এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। লুইস ও ভেরেট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘গেইরেঞ্জারের মতো মনোরম একটি জায়গায় ভালোবাসার মুহূর্তটি উদ্যাপন করতে পারলে আমাদের অনেক আনন্দ হবে। ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ এবং প্রাকৃতিকভাবে দর্শনীয় এই স্থানে প্রিয়জনদের জড়ো করতে পারাটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে।’
গতকাল রাজা, রানি এবং যুবরাজ হাকন আলাদা এক বিবৃতিতে রাজকন্যা লুইস ও তাঁর হবু বর ভেরেটকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘ডুরেক ভেরেটকে এ পরিবারে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
নরওয়ের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনআরকে-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ভেরেট নরওয়েতে যাবেন এবং রাজপরিবারের সঙ্গে থাকবেন। তবে তাঁর কোনো রাজ উপাধি থাকবে না।
২০০২ সালে নরওয়েজিয়ান লেখক ও শিল্পী আরি বেহনকে বিয়ে করেন রাজকুমারী মার্থা। এই দম্পতির তিন কন্যাসন্তান আছে। ২০১৭ সালে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। ২০১৯ সালের বড়দিনে আরি বেহন আত্মহত্যা করেন।
২০২২ সালের জুনে মার্থা লুইস এবং ডুরেক ভেরেট তাঁদের বাগ্দানের ঘোষণা দেন। রাজা হারাল্ড তখন তাঁদের আশীর্বাদ করেন। তাঁর স্ত্রী সঞ্জাও একটি সাধারণ পরিবারের সন্তান। তিনি কোনো রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন না। ১৯৬৮ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।
ভেরেটের বিরুদ্ধে বিতর্ক
ভেরেট নিজেকে ‘ষষ্ঠ প্রজন্মের আধ্যাত্মিক গুরু’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তিনি মার্কিন অভিনেত্রী গ্যায়নেথ পালট্রো এবং স্পেনের অভিনেতা আন্তোনিও বান্দেরাসকে নিজের অনুসারী বলে উল্লেখ করেন। তিনি বিভিন্ন ভিত্তিহীন চিকিৎসাপদ্ধতির কথা বলে থাকেন। ভেরেটের ওয়েবসাইটে ২২২ ডলার মূল্যের একটি মেডেল বিক্রির জন্য রাখা হয়। তাঁর দাবি, এটি করোনা সারাতে পারে।
ভেরেটের দাবি, তিনি মৃত ব্যক্তিদের থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন হামলার দুই বছর আগেই এর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বলে দাবি তাঁর।
গত বছর ভেরেট সম্পর্কে নরওয়ের কলাম লেখক ডাগফিন নর্ডবো লিখেছেন, ‘তিনি একজন প্রতারক, একজন মূর্খ বৈদ্য এবং হাতুড়ে চিকিৎসক।’
ভেরেট স্বীকার করেছেন, তাঁর বিশ্বাসগুলো কাউকে কাউকে অস্বস্তিতে ফেলবে। তবে তাঁর দাবি, তিনি বর্ণবাদের শিকার।
মার্থা লুইসের বিরুদ্ধে বিতর্ক
৫১ বছর বয়সী মার্থা লুইসের বিরুদ্ধেও বিতর্ক আছে। তিনি বরাবরই বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থার ভক্ত। লুইসের দাবি, তিনি দেবদূতদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। মানুষকে ‘তাঁদের দেবদূতের সঙ্গে যোগাযোগ’ করিয়ে দিতে পারার দাবি করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে রাজ উপাধি ব্যবহার করে নানা সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও আছে।
লুইস বলে থাকেন, তিনি গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানের গুরুত্ব বোঝেন। তবে তাঁর বিশ্বাস, বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা প্রচলিত চিকিৎসাব্যবস্থার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
ভেরেটের সঙ্গে বিকল্প ওষুধের ব্যবসায় মনোনিবেশ করতে ২০২২ সালের নভেম্বরে লুইস তাঁর রাজদায়িত্ব ছেড়ে দেন। তবে তিনি তাঁর রাজ উপাধি বহাল রেখেছেন। বলেছেন, বাণিজ্যিক কাজের ক্ষেত্রে এ উপাধি ব্যবহার করবেন না তিনি।
মার্থা লুইস রাজা পঞ্চম হারাল্ডের বড় মেয়ে। তাঁর ছোট ভাই হাকন রাজ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরসূরি।