ফিনল্যান্ডেও কী ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসছে

ফিনল্যান্ডের নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা
ছবি: রয়টার্স

জাতীয় নির্বাচনে রোববার ভোট দিচ্ছেন ফিনল্যান্ডের মানুষ। দেশে এবং দেশের বাইরে তুমুল জনপ্রিয় সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক দলের সানা মারিন দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে লড়ছেন। তাঁকে সরিয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ডানপন্থী এবং অভিবাসনবিরোধী দলগুলো।

প্রতিবেশী সুইডেনে জাতীয়তাবাদীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। পাশাপাশি গত বছর ইতালিতে জয়ী হয়েছেন অতি ডানপন্থীরা। ইউরোপের এই জাতীয়তাবাদী ঢেউয়ে ফিনল্যান্ডও যোগ দেবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। এরপরই ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়া নিশ্চিত হয়। এর মধ্যে ফিনল্যান্ডের নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে।

ই-২ গবেষণা ইনস্টিটিউটের জুহো রাহকোনেন এএফপিকে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে জরিপগুলোয় দেখা গেছে, ফিনল্যান্ডে ডানপন্থী রাজনৈতিক প্রবণতা আরও শক্তিশালী হচ্ছে।’

নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে আটটি প্রধান দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল ফিনল্যান্ডে সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পায়। গতকাল শনিবার হেলসিঙ্কিতে চূড়ান্ত নির্বাচনী প্রচারণা সভায় মেরিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচনে জয়ী হওয়া এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য।’

বৃহস্পতিবার পাবলিক ব্রডকাস্টার ওয়াইএলই প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, কেন্দ্রীয়-ডান জাতীয় জোট ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ এগিয়ে আছে, অপর দিকে জাতীয়তাবাদী ইউরোসেপটিক ফিন্স পার্টি ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ সমর্থন নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

সানা মারিনের নেতৃত্বাধীন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসডিপি) ২০১৯ সালে ক্ষমতায় আসে৷ মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু এবারের নির্বাচনী সমীক্ষায় তাঁর দল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।

শনিবার একটি প্রচার সমাবেশে ন্যাশনাল কোয়ালিশন নেতা পেটেরি অর্পো এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের প্রচার দুর্দান্ত ছিল। ফিনল্যান্ডে আমাদের সেরা প্রার্থীরা রয়েছেন৷ আমরাই সমীক্ষায় এগিয়ে রয়েছি৷ আমি আশাবাদী।’

সম্প্রতি একটি জরিপে সাানা মারিন এই শতকে ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্থান পেয়েছেন৷ এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এসডিপির আসন বাড়াতে তীব্র লড়াই করছেন তিনি৷

রাহকোনেনের মত, ‘মারিন যদিও ব্যতিক্রমীভাবে জনপ্রিয়, তবে তার বিরোধিতাও রয়েছে। তাই রাজনৈতিক বিভাজন আরও জোরদার হয়েছে।’

মারিনকে অনেকেই একজন শক্তিশালী নেত্রী হিসেবে দেখেন৷ কারণ তিনি করোনা মহামারি এবং ন্যাটো সদস্যপদ প্রক্রিয়া দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন৷ কেউ  তাঁর প্রতি ক্রমবর্ধমান ঘৃণার কথাও বলেছেন৷ লিঙ্গপরিচয়ের দিকটি নিয়েও কথা উঠেছে নানা সময়৷ মারিনের পার্টি করার ভিডিও ক্লিপগুলোর প্রতিক্রিয়াও অনেক ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞতার পরিচয় বলে মনে করছেন কেউ কেউ৷

২৯ বছর বয়সী ভোটার ক্যাসপার কিলমালা ভোট দেওয়ার পর এএফপিকে বলেন, ‘আমি মারিনকে পছন্দ করতাম৷ তবে অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে তার ধারণাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে হয় না৷ সরকার এমন কিছু অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না৷’

ফিনল্যান্ডের ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ২০১৯ সালে ৬৪ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। পেটেরি অর্পোর ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৬০০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে সমাধান করতে চায়৷ মারিন অভিযোগ করেছেন যে ন্যাশনাল কোয়ালিশন ‘গরিবদের থেকে নিয়ে ধনীদের দিতে চায়’।

ফিনল্যান্ডে উগ্র ডানপন্থী দলের কেউ প্রধানমন্ত্রী হলে তা হবে প্রথমবার তাদের ক্ষমতায় আসা।

আরও পড়ুন

ইউরোসেপটিক পার্টি অভিবাসন বিষয়ে কঠোর নিয়ম আরোপ করতে চায়৷ প্রতিবেশী সুইডেনের সঙ্গে ‘গ্যাং ভায়োলেন্সের’ মতো সমস্যার কথা বলে সতর্ক থাকার কথা বলছে তারা৷

রাহকোনেন বলেন, গত গ্রীষ্ম থেকে পপুলিস্ট পার্টির প্রতি সমর্থন বেড়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর সমর্থন আরও বাড়ছে।

ফিন্‌স পার্টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সঙ্গে ফিনল্যান্ডের বিচ্ছেদ ঘটানোকে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হিসেবে দেখে৷ ২০৩৫ সালের জন্য ফিনল্যান্ডের কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য স্থগিত করতে চায় তারা৷

আরও পড়ুন

হেলসিঙ্কির একটি ভোটকেন্দ্রে ৩১ বছর বয়সি ভোটার মার্কাস হলস্টেন এএফপিকে বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী দলটি সম্ভবত জয়ী হতে চলেছে, তাই আমি এটি বন্ধ করার জন্য ভোট দিতে এসেছি৷’

সানা মারিন ফিনস পার্টিকে ‘বর্ণবাদী’ দল হিসেবে উল্লেখ করে তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের সম্ভাবনা অস্বীকার করেছেন৷ অন্যদিকে অর্পো জানান, অভিবাসন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জলবায়ু নীতি নিয়ে ফিনস পার্টির সঙ্গে বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি বিকল্প পথ উন্মুক্ত রাখবেন।

আরও পড়ুন