রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ
পুতিন এবার শান্তি চান, তবে নিজের শর্তে
যত দিন এই যুদ্ধে রাশিয়া জিতছিল, পুতিন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছিলেন। এখন ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধের মুখে প্রথমবারের মতো সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি শান্তি চান। তবে তার আগে ইউক্রেনের তালগাছটা যে তাঁর, সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে।
গত সপ্তাহে ক্রেমলিনের সোনালি রাংতা দিয়ে মোড়া দরবারকক্ষে এক মহা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পুতিন জানান, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল, যার পরিমাণ সে দেশের মোট ভূমির ১৪ শতাংশ, এখন থেকে রাশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাশাপাশি এ কথাও ঘোষণা করেন, তিনি যুদ্ধ নয়, শান্তি চান।
ইউক্রেনের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত, তবে যে চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ঘোষিত হলো, তাদের ব্যাপারে কোনো আলোচনা নয়। এই অঞ্চলসমূহ রাশিয়ার, অনন্তকালের জন্য তার। পুতিন বলেন, ‘আমি কিয়েভ ও তার পশ্চিমা প্রভুদের বলছি, ভালো করে শুনে রাখো। যেসব মানুষ লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ায় বাস করে, তারা আমাদের নাগরিক হতে চলেছে। চিরদিনের জন্য।’
আপনারা যাঁরা রুশ লেখক আন্তন চেখভের দ্য চেরি অরচার্ড নাটকটি দেখেছেন, তাঁদের হয়তো নাটকটির চরিত্র লোপাখিনের বিখ্যাত স্বগতোক্তির কথা মনে আছে। রানেভস্কাইয়া পরিবারের চেরিবাগানটি নিলামে কিনে নেওয়ার পর সে কথা তার নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। কথাটি এমন ছিল, ‘এটা কি সত্যি যে এই চেরিবাগান আমার? না, আপনারা বলুন আমি মাতাল, আমার মাথা খারাপ। বলুন যে পুরো ব্যাপারটাই একটা স্বপ্ন।’
লোপাখিন যে রকম বক্র হাসি দিয়ে ‘ইয়া কুপিল’ (আমি কিনে নিলাম) এই বলে কপালে চোখ তুলে চেঁচিয়ে উঠেছিল, পুতিনও সেই রকম বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, ‘না ভ্সিগদা’ (চিরকালের জন্য)। শুধু তফাত এই যে লোপাখিন গাঁটের পয়সা দিয়ে সে সম্পত্তি কিনে নিয়েছিল। পুতিন সে পথে না গিয়ে সোজা লেঠেল পাঠিয়ে জায়গা দখল করে নিলেন। তবে সে তালগাছ তিনি কত দিন নিজ দখলে রাখতে পারেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, আর সে জন্য তাঁর কাছ থেকে শান্তির প্রস্তাব এসেছে।
মগের মুল্লুক
ইউক্রেনের প্রায় ৪০ হাজার বর্গমাইল এলাকা নিজের বলে পুতিনের যে দাবি, তা এক মগের মুল্লুকেই সম্ভব। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে কার্যত সে কথাই বললেন। গুতেরেসের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে এই চার অঞ্চলের সংযুক্তির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই নিন্দনীয়। তিনি রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে শান্তির জন্য হুমকি ও বিপজ্জনক বলেও আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে এই আচরণের কোনো স্থান নেই, এমন কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
পুতিন ইউক্রেনের ভূমি দখলের পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন, তিনি আক্রমণকারী নন, তিনি আক্রান্ত। পশ্চিমা দেশসমূহ, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াকে পদানত করতে চায়। রাশিয়া কখনোই পশ্চিমা উপনিবেশবাদকে স্বীকার করেনি, রাশিয়ার ওপরে তাদের সে কারণেই রাগ। তাঁর সে যুক্তির জবাবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ‘কই, আমি তো রাশিয়ায় ইউক্রেন বা পশ্চিমা সৈন্য দেখি না। বরং রাশিয়ার সৈন্যই তো ইউক্রেনের ভেতর জবরদখল করে বসে আছে।’
রাশিয়ার বন্ধু হিসেবে পরিচিত ভারতও পুতিনের সমালোচনা করেছে। গত মাসে উজবেকিস্তানের সমরখন্দে এক আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সময় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার সামনেই অভিযোগ করেন, এটা তো একুশ শতক। এখন কি কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ যুদ্ধ বাধিয়ে বসে! রাশিয়ার আরেক বন্ধু চীনও ভালো-মন্দ কিছু বলেছে, ঠিক কী বলেছে সে কথায় না গিয়ে পুতিন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আশ্বাস দেন, পরে এ বিষয়ে নিজের অবস্থান তিনি বুঝিয়ে বলবেন।
এই যুদ্ধে রাশিয়ার বন্ধু বলতে এই দুই দেশ, তারাও গত সপ্তাহে ইউক্রেনের চার অঞ্চল দখলের নিন্দাসূচক জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে না গিয়ে ভোটদানে বিরত থাকে। বলাই বাহুল্য, রাশিয়া নিজে ছাড়া সে নিন্দার বিপক্ষে একটি ভোটও পড়েনি। আগামী সপ্তাহে একই প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে, অনুমান করি বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই ভূমিগ্রাসের নিন্দা জানাবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরেকভাবেও ইউক্রেনে হামলার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে রাশিয়ার সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ইউক্রেন আক্রমণের পরপর সেই এপ্রিলেই মানবাধিকার পরিষদ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়াকে একে একে আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা, বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ও ইউরোপীয় কাউন্সিল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জাতিসংঘের আধা ডজনের মতো কমিটি থেকেও দেশটির সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া হোক, এমন দাবিও উঠেছে।
পুতিনের উভয়সংকট
পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বা আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়া—এই দুই চ্যালেঞ্জকেই পুতিন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন। দিয়েছেনও। কিন্তু তাঁর জন্য আসল চ্যালেঞ্জ যুদ্ধের ময়দানে টিকে থাকা ও ঘরের ভেতর প্রতিবাদ সামাল দেওয়া। দুই সপ্তাহ আগে খারকিভ থেকে তল্পিতল্পা ফেলে তাঁর সৈন্যবহর যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালিয়েছে। সে লজ্জায় রুশ ভাষ্যকারেরা রাষ্ট্রীয় টিভিতে জেনারেলদের বাপান্ত করে ছেড়েছেন। সাধারণ রুশেরা বলছেন, আমাদের অকুতোভয় সেনাবাহিনীর এমন অবস্থা কেন?
যেদিন ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি ঘোষণা করা হয়, তার ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই রাশিয়া ইতিপূর্বে অধিকৃত দনবাসের লিমান শহর থেকে নিজের সব সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। পুতিন যেসব অঞ্চলকে ‘চিরদিন রাশিয়া’র বলে ঘোষণা করেছিলেন, লিমান তার একটি। দোনেৎস্কর দক্ষিণে অবস্থিত এই অঞ্চল একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন কেন্দ্র।
এই অঞ্চল হারানোর অর্থ দনবাসে রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলে পাল্টা হামলা চালানো ইউক্রেনের জন্য সহজতর হবে। পালানোর আগে রুশ জেনারেলরা জানান, চারদিক থেকে তাঁদের ঘিরে ফেলা হয়েছে, সরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। রুশ সৈন্যদের উল্টো দৌড় দেখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রুশেরা একটা কাজ খুব ভালো পারে, আর তা হলো পিঠ দেখিয়ে দৌড়ে পালানো।
এই যুদ্ধে রুশ সামরিক বিপর্যয় কী রকম বাস্তব, তার একটা প্রমাণ পাওয়া গেছে মায়ের সঙ্গে এক রুশ সৈন্যের কথোপকথনের একটি গোপন রেকর্ডিং থেকে। কথোপকথনটি এই রকম:
‘মা, আমি বুচা থেকে বলছি। আমরা ফেঁসে গেছি, এই যুদ্ধে আমরা হারছি। আমার দলের অর্ধেক সদস্যই শেষ। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাকে পাও খুন করো। ফিরে আসার পর আমি আর সেনাবাহিনীতে থাকব না। গোল্লায় যাক সেনাবাহিনী। পুতিন একটা নির্বোধ, সে চায় কিয়েভ দখল করতে। তেমন কোনো সম্ভাবনাই নেই।’
যত দিন এই যুদ্ধে রাশিয়া জিতছিল, পুতিন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছিলেন। এখন ইউক্রেনীয় সৈন্যদের প্রতিরোধের মুখে তাঁকে হটে আসতে হওয়ায় দেশের ভেতরে প্রথমবারের মতো সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে প্রায় ৮০ হাজার সৈন্য তিনি খুইয়েছেন, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তাঁকে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত সৈন্য সংগ্রহের নির্দেশ দিতে হয়েছে।
তাঁকে খুশি করতে যেভাবে এলোপাতাড়িভাবে সৈন্য সংগ্রহ অভিযান চলছে, দেশজুড়েই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে। অল্প বয়সী যুবকেরা যুদ্ধে যোগ দেওয়ার বদলে দেশ ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছে।
কোথাও কোথাও সৈন্য সংগ্রহ কেন্দ্রে গুলিও চলেছে। অবস্থা সামাল দিতে পুতিন স্বীকার করেছেন, আমলাদের অযোগ্যতায় কিছু কিছু ভুল হয়েছে। সমরক্ষেত্রেও তিনি ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়েছেন জেনারেলদের ওপর। কয়েকজনের চাকরি কেড়ে নিয়েছেন, কাউকে জেলে পাঠিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে এখন থেকে তিনিই সরাসরি সামরিক নির্দেশ পাঠাবেন।
যে যুদ্ধ তাঁর হাতের মুঠোয় ভেবে পুতিন মাঠে নেমেছিলেন, এখন তা ক্রমে দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একসময়ের ছাত্র ও কার্নেগি এনডাউমেন্টের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ আলেকসান্দর গাবুয়েব মনে করেন, হিসাবে ভুল করে ফেলেছেন পুতিন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এ এক নিবন্ধে তিনি মন্তব্য করেছেন, ইউক্রেনে নিজের ক্ষমতার বাইরে চাল দিতে গিয়ে ধরা খেয়ে গেছেন তিনি। নিজ টুইটার অ্যাকাউন্টে এক দীর্ঘ ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, পুতিনকে বাস্তব পরিস্থিতি কী তা বুঝিয়ে বলে এমন কেউ নেই। সব কর্তৃত্ববাদী শাসকের ক্ষেত্রেই এমন ঘটে। সবাই জি হুজুর। যুদ্ধের পরিকল্পনা অথবা এই যুদ্ধের কী পরিণাম হতে পারে, সে প্রশ্নে ক্রেমলিনের ভেতর কোনো খোলামেলা আলোচনাই হয়নি।
পুতিন গত ২২ বছর ক্ষমতায় টিকে আছেন মূলত নিজেকে ‘অকুতোভয়’, ‘অপরাজেয়’ একনায়ক হিসেবে উপস্থিত করে। জার পিটার দি গ্রেট থেকে জার ইভান দি টেরিবল, অথবা পরবর্তী সময়ে জোসেফ স্তালিনকে রুশেরা সেভাবেই চিনে এসেছে, মেনে এসেছে।
দেশের ভেতর পুতিন যে প্রায় ৮০ শতাংশ জনসমর্থন ভোগ করেন তার কারণও একটাই, তিনি অপরাজেয়—এই ধারণা। কিন্তু এখন ইউক্রেনে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। যেভাবেই হোক দেশের মানুষের কাছে সামরিক বিজয়ের গল্পটি তাঁকে উপস্থিত করতেই হবে। সে জন্য দনবাস বা খেরসনে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণ অর্জিত না হওয়া সত্ত্বেও তাদের রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে ফেললেন। এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন, এমন ভয় একাধিক বিশেষজ্ঞের।
গাবুয়েভ তাঁদের একজন। সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ এমনকি এ কথাও বলেছেন, আমাদের কাছে হাইপারসনিক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, যা লন্ডন ও ওয়াশিংটনে আঘাত হানতে সক্ষম। গাবুয়েভের মতো আরও অনেকে বলছেন, নিজের অধিগ্রহণ ধরে রাখতে পুতিন কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র নয়, অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ট্যাকটিকাল’ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
বেপরোয়া পুতিন এমন কিছু করতে পারেন, তেমন ইঙ্গিত পেয়ে ওয়াশিংটন মস্কোকে সাবধান করে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে অতিরিক্ত ঠান্ডা গলায় বলেছেন, এমন কাজ করার কথা ভুলেও ভাববেন না। সিবিএস টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘ডোন্ট, ডোন্ট, ডোন্ট,’ তিনবার তর্জনী উঁচিয়ে পুতিনকে সাবধান করে দেন।
শান্তির প্রস্তাব
তালগাছটি তাঁর—এই দাবি জানিয়ে ও সে গাছের সামনে নিজ মালিকানার একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পুতিন এখন শান্তির প্রস্তাব করেছেন। ক্রেমলিনে ভাষণে পুতিনের প্রস্তাব, আমি শান্তিতে রাজি, তবে তা হতে হবে আমার শর্তে। ইতিপূর্বে যে শর্ত ছিল, এখন সেসব বাতিল, কারণ পরিস্থিতি বদলে গেছে। বন্দুক উঁচিয়ে শান্তি প্রস্তাব দেওয়ার পর তিনি অভিযোগ করেছেন, আমি রাজি হলে কী হবে, ইউক্রেন শান্তি চায় না। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ানকেও তিনি একই অনুযোগ করেছেন।
পুতিনের প্রস্তাবের জবাবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন থেকে শেষ রুশ সৈন্যটি না যাওয়া পর্যন্ত তাঁর দেশ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পুতিন যত দিন ক্ষমতায় রয়েছেন, শান্তির কোনো সুযোগ নেই।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, পুতিনের ব্যক্তিগত প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি কোজাক গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর আগেই একটি আপসমূলক শান্তি প্রস্তাব গুছিয়ে এনেছিলেন।
রয়টার্সকে তিনি জানিয়েছেন, ইউক্রেন তাঁকে বলেছিল, ন্যাটোতে তারা যোগ দেবে না, অংশত নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাবেও তারা রাজি। কিন্তু পুতিন তাতে রাজি হননি, তার বিশ্বাস ছিল তিন দিনের যুদ্ধেই তিনি কিয়েভ দখল করে সেখানে নিজ পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।
এখন যুদ্ধের ময়দানে জেরবার হয়ে, দেশের ভেতরে ধূমায়িত ক্ষোভের সম্মুখীন হয়ে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞায় চিড়েচ্যাপটা হয়ে এই যুদ্ধ যেভাবেই হোক থামানো মস্কোর জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। রুশ দৈনিক প্রাভদা একাধিক প্রতিবেদনে শান্তির তাগাদা দিয়ে বলেছে, রাশিয়া শান্তির জন্য প্রস্তুত, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র শান্তি চায় না। রাশিয়া নয়, যুক্তরাষ্ট্রই পারমাণবিক বোমার ভয় দেখাচ্ছে।
পুতিনের দোসর হিসেবে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোও বলেছেন, ইউরোপ যদি চায় তো দুই দিনেই এই যুদ্ধ থামানো সম্ভব। কিন্তু কী করা যাবে, ইউরোপ তো শান্তি চায় না। এই পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণের সম্পাদক দিমিত্রি সুদাকভ স্বনামে এক নিবন্ধে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছেন, আমেরিকা চাইলে রাশিয়াকে পিষে মারতে পারে, কিন্তু শান্তি প্রস্তাবে সায় দিয়ে সে বিশ্বকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতেও পারে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার অবশ্য অন্য আরও একটি পথ রয়েছে, আর তা হলো পুতিনকে সরিয়ে ফেলা। রাশিয়ার অভ্যন্তরেই এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে, তাতে সে সম্ভাবনা এখন আর মোটেই অবাস্তব মনে হয় না।
২ অক্টোবর ২০২২, নিউইয়র্ক