ভাগনারের নতুন প্রধান হিসেবে যাঁকে চেয়েছিলেন পুতিন

আন্দ্রে ত্রোশেভ
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী রুশ প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপ বিদ্রোহ থেকে পিছু হটার পর বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনসহ বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ভাগনার যোদ্ধাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। সেটি হলো, নতুন একজন কমান্ডারের নেতৃত্বে ভাগনারের লড়াই চালিয়ে যাওয়া।

ভাগনার বিদ্রোহের পাঁচ দিন পর গত ২৯ জুন ওই বৈঠক করেছিলেন পুতিন। সেদিনের বৈঠক নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রুশ সংবাদপত্র কোমেরসান্তকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানেই উঠে এসেছে এসব কথা। বৈঠকে ভাগনারের নতুন প্রধান হিসেবে আন্দ্রে ত্রোশেভের নাম প্রস্তাব করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তাঁকে সবাই চেনেন ‘সেদোয়’ নামে, যার অর্থ ‘ধূসর চুল’।

কোমেরসান্তকে পুতিন বলেন, বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, ভাগনার যোদ্ধা আবার একত্র হতে পারবেন এবং লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। তাঁদের জন্য কিছুই বদলাবে না। তাঁদের এমন একজন নেতৃত্বে দেবেন যিনি পুরোটা সময় ধরে তাঁদের প্রকৃত কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানে পুতিন ত্রোশেভের কথাই বলেছিলেন।

পুতিনের ওই প্রস্তাবের পর কী হয়েছিল তা জিজ্ঞাসা করা হয় কোমেরসান্তের সাক্ষাৎকারে। জবাবে পুতিন বলেন, তিনি যখন প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন সেখানে থাকা ভাগনারের অনেক সদস্য মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের সামনে থাকা প্রিগোশিন তা খেয়াল করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘না, ভাগনারের যোদ্ধারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন।’

কে এই আন্দ্রে ত্রোশেভ

আন্দ্রে ত্রোশেভ রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। ভাগনারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফ্রান্সের নথিপত্রে দেখা গেছে, তিনি ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাহিনীটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি।

ভাগনারপ্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা–সংক্রান্ত নথিপত্রে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ত্রোশেভের জন্ম ১৯৫৩ সালে, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের লেলিনগ্রাদে। নথিপত্রে সিরিয়ায় লড়াইরত ভাগনার যোদ্ধাদের প্রধান হিসেবে তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পক্ষে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করছেন ভাগনার যোদ্ধারা।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নথিতে বলা হয়েছে, ‘সিরিয়ায় ভাগনারের সামরিক অভিযানের সঙ্গে ত্রোশেভ সরাসরি জড়িত। বিশেষ করে তিনি পূর্ব সিরিয়ার দেইর এজ–জর শহরে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি বাশার আল–আসাদকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা করেছেন। সিরিয়া সরকারের কাছ থেকে নানা সুবিধাও নিয়েছেন।’  

এদিকে নিজেদের নিষেধাজ্ঞা–সংক্রান্ত নথিতে একই ধরনের কথা বলেছে যুক্তরাজ্য। সেখানে বলা হয়েছে, আন্দ্রে ত্রোশেভ ভাগনারের নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি সিরিয়া সরকারের সমর্থনে কাজ করেছেন। দেশটির বেসামরিক লোকজনকে দমন–পীড়নে হাত রয়েছে তাঁর।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, ত্রোশেভের সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন ভাগনারের প্রতিষ্ঠাতা দিমিত্রি উতকিন। তিনি এক সময় রাশিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। ত্রোশেভের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ভাগনারের কমান্ডার আলেকসান্দ্র সের্গেভিচ কুজনেৎসভ ও আন্দ্রে বোগাতভের সঙ্গেও।

আরও পড়ুন
রোস্তভ-অন-দন শহরে ট্যাংকের ওপরে ভাগনার যোদ্ধারা। এই শহরটি দখল করে নিয়েছিল ভাগনার গ্রুপ। পরে মস্কো অভিমুখে অভিযান বন্ধ ঘোষণার পর শহর ছেড়ে চলে যান তাঁর
ছবি: এএফপি

ত্রোশেভ রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পুলিশের বিশেষ বাহিনীতে কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদমাধ্যম ফ্রনতাঙ্কা। এ ছাড়া তিনি চেচনিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধে বীরত্ব দেখানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ত্রোশেভকে একাধিক মেডেল সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ক্রেমলিনে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অতিথিদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল ত্রোশেভকে। সে সময়ে ধারণ করা একটি ছবি রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। তাতে ত্রোশেভ ও উতকিনকে পুতিনের পাশে দেখা যায়। দুজনই একাধিক মেডেল পরে ছিলেন।

আরও পড়ুন

এদিকে যে প্রিগোশিনের বদলি হিসেবে ত্রোশেভকে চেয়েছিলে পুতিন, বিদ্রোহের পর থেকেই তাঁর অবস্থান স্পষ্ট নয়। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থামানের পর ক্রেমলিনের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছিল তাঁর। সে চুক্তি অনুযায়ী, তাঁকে বেলারুশে চলে যেতে হবে। বেলারুশ রাশিয়ার মিত্র দেশ।

পরে সংবাদমাধ্যমে খবর বের হয়, প্রিগোশিন বেলারুশে পাড়ি জমিয়েছেন। এর কিছুদিন পরে গত সপ্তাহে আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো জানান, প্রিগোশিন বেলারুশে নেই। তিনি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে রয়েছেন। এগুলো বিভিন্নজনের কথা, তবে গত ২ জুন থেকে তাঁকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন