রাজকীয় ফ্যাশনে যেমন ছিলেন রানি
উজ্জ্বল রঙিন পোশাক, সঙ্গে মেলানো টুপি, হাতে এক জোড়া দস্তানা। এমন সাজ দেখে ব্রিটেনের সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে মুহূর্তের মধ্যেই চিনে নেওয়া যেত। তাঁর পোশাকে যেমন স্বাতন্ত্র্য ছিল, তেমনি ছিল রাজদায়িত্বের সঙ্গে মানানসই।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ফ্যাশন ও পোশাক নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্যাশনে নিজস্ব এক স্টাইল গড়ে তুলেছিলেন সদ্য প্রয়াত রানি। যত দিন শাসনক্ষমতায় ছিলেন, তত দিন নানা রঙের শেড পোশাকে ব্যবহার করেছেন তিনি। দশকের পর দশক ধরে সহযোগী ও নকশাকারদের সহায়তায় পোশাকের অনন্য এই স্টাইল গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এর সূচনা হয়েছিল নরম্যান হার্টনেলের হাত দিয়ে। ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে রানির বিয়ের পোশাকটি তিনিই বানিয়েছিলেন।
ক্রিস্টাল ও ১০ হাজার ছোট ছোট মুক্তা বসানো ডাচেস সাটিন কাপড় দিয়ে বিয়ের পোশাকটি তৈরি হয়েছিল। ১৯৫৩ সালে রানি হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার সময় দ্বিতীয় এলিজাবেথ যে পোশাক পরেছিলেন, সেটিও হার্টনেলই তৈরি করেছিলেন।
পোশাকটিতে সোনালি, রুপালি, সবুজ ও গোলাপি রঙের এমব্রয়ডারি করা ছিল। যেসব দেশ তাঁর শাসনাধীন ছিল, সব কটির প্রতীক ছিল সে পোশাকে।
১৯৫৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে রানির পোশাক বানিয়েছেন হার্ডি অ্যামিস। তিনি বলেন, ‘রানির জন্য পোশাক তৈরির কাজটি সহজ কোনো কাজ ছিল না।’
অ্যামিস শুরুতে রানির বিদেশভ্রমণকালীন পোশাকগুলো তৈরি করতেন। পরে হার্টনেলের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ১৯৭৭ সালে সিংহাসনে বসার রজতজয়ন্তীতে রানি গোলাপি রঙের যে পোশাক পরেছিলেন, তার নেপথ্যে ছিলেন অ্যামিস।
সাম্প্রতিক দশকগুলোয় রানির বেশভূষার নেপথ্যের কারিগর ছিলেন অ্যাঙ্গেলা কেলি। ১৯৯৩ সালে রানির পোশাক প্রস্তুতকারক দলে যোগ দেন তিনি। ২০০২ সালে রানির ব্যক্তিগত সহকারী ও জ্যেষ্ঠ পোশাক নির্মাতা হিসেবে নিযুক্ত হন। রানির খুব ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজনদের একজন হয়ে উঠেছিলেন কেলি।
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলার সময় রানির চুল কাটা ও হেয়ার স্টাইলেরও দায়িত্বে ছিলেন এ নারী।
রাজপরিবারের ড্রেস কোড মেনে রানি এলিজাবেথের পোশাক ডিজাইন করতে হতো। এ ব্যাপারে রাজপরিবারের সাবেক আপ্যায়নবিষয়ক তদারককারী ও শিষ্টাচার–বিশেষজ্ঞ গ্র্যান্ট হ্যারল্ড এএফপিকে বলেন, লিখিত কোনো আইন নেই, তবে পুরোনো শিষ্টাচারসংক্রান্ত প্রটোকল বিধি আছে।
হ্যারল্ড বলেন, ‘তিনি (রানি) সব সময় টাইটস পরতেন, যা ছিল শরীরের ত্বকের রঙে। তাঁর নখে লাগানো হতো হালকা গোলাপি রঙের নেইল পলিশ। আপনারা কখনোই, বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে তাঁকে কখনো হাঁটুর ওপরে স্কার্ট পরতে দেখেননি।’
গয়নার ক্ষেত্রে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রুচ (সেফটি পিনজাতীয় অলংকার) বা মুক্তার নেকলেস পরতেন।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জনসমক্ষে আসার সময় পুরোনো ঐতিহ্য অনুযায়ী মাথায় হ্যাট ও হাতে দস্তানা পরলেও এর একটি বিশেষ ধরন ছিল। রানি উজ্জ্বল রঙের টুপি পরতেন। ফলে ভিড়ের মধ্যেও তাঁকে চিনে নেওয়া যেত।
হ্যারল্ড বলেন, হাতে দস্তানা পরার আরও একটি উদ্দেশ্য ছিল। তা হলো যেন অনেক মানুষের সঙ্গে করমর্দন করার সময় হাতে যেন কোনো জীবাণু না আটকাতে পারে।
সন্ধ্যায় আরাম করার জন্য রানি যে গাউন পরতেন, সেগুলোয় থাকা পুঁতি ও অন্য কারুকাজের খোঁচা থেকে তাঁর পিঠকে সুরক্ষিত রাখতে অতিরিক্ত আস্তরণ দিয়ে দিতেন কেলি। দিনের পোশাক যেন বাতাসে উড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে নিচের দিকে একটু ভারী কাজ করে দিতেন এ ডিজাইনার।
সপ্তাহান্তে দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর স্টাইলে পরিবর্তন আনতেন। এমন দিনে প্রায়ই তাঁর মাথায় দেখা যেত স্কার্ফ, গায়ে রেইন কোট ও পায়ে বুট।
রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখলেও রানি এলিজাবেথ তাঁর পোশাকের মধ্য দিয়ে বার্তাও দিতেন। কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার সময় সে দেশের প্রতি সম্মান জানাতে সেখানকার জাতীয় প্রতীকসংবলিত তৈরি ব্রুচ পরতেন তিনি।