বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জি-৭
বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে জি-৭। বিশ্বের উন্নত সাত দেশের সংগঠন জি-৭-এর নেতারা ইউক্রেনের সঙ্গে তাঁদের একাত্মতা, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে সমর্থন, আফ্রিকায় টেকসই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আজ শনিবার সম্মেলনের শেষ দিনের বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
আজ ছিল ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় পুলিয়ার একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে অনুষ্ঠিত তিন দিনের সম্মেলনের শেষ দিন। সম্মেলনে ইউক্রেনের জন্য আর্থিক সহায়তা, গাজা যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, ইরান, লোহিত সাগরের পরিস্থিতি, লিঙ্গসমতা, চীনের শিল্পনীতি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো অন্যান্য প্রধান বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
বার্তা সংস্থা এপি জানায়, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ও শেষ দিন শনিবার জি-৭-এর নেতারা অভিবাসন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে তাঁদের মনোযোগ দেন। তাঁরা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য তাঁদের দৃঢ়সংকল্পের ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
* নেতারা ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে সমর্থন জানান। * আফ্রিকায় টেকসই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একদিকে যেমন আশা জাগাচ্ছে, অন্যদিকে তৈরি করছে উদ্বেগ। বিষয়টি এবারের বিশ্বের উন্নত সাত দেশের সংগঠন জি-৭ সম্মেলনেও উঠে এসেছে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন গত শুক্রবার পোপ ফ্রান্সিস জি-৭ সম্মেলনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কথা বলেন। এ ছাড়া জি-৭-এর নেতারা চীনের ক্ষতিকর ব্যবসা চর্চা মোকাবিলা নিয়েও কথা বলেছেন।
এবারের সম্মেলনের আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি পোপসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানান। এ তালিকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও ছিলেন।
শুক্রবার জি-৭ বৈঠকে মেলোনি বলেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো অন্য সবার বিরুদ্ধে, এমন কোনো অভিযোগ আমরা কখনোই গ্রহণ করতে চাই না।’
হুইলচেয়ারে করে পোপ সম্মেলনে এলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হ্যাভিয়ের মিলেসহ অনেকেই উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। এআই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করে পোপ বলেন, এটি উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং জ্ঞান অর্জনের সুযোগের প্রসার ঘটাতে পারে। ৮৭ বছর বয়সী পোপ বলেন, একই সময় এআই উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য করতে পারে।
জি-৭ জোটের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ও কানাডা এর আগে বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য লড়াই এড়িয়ে কীভাবে তাদের শিল্পকারখানা রক্ষা করা যায়, সেদিকেই তারা মূলত গুরুত্ব দেওয়ার কথা আলোচনা করে।
জি-৭ সম্মেলনে নেতারা অভিবাসন নিয়েও আলোচনা করেন। আফ্রিকা থেকে অবৈধ অভিবাসী ইউরোপে ঢোকা বন্ধ করার বিষয়ে জোর দেন মেলোনি। এ জোটের দেশগুলোর পক্ষ থেকে মানব পাচার রোধে একযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, অবৈধ অভিবাসন বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্মেলনের প্রথম দিন জি-৭-এর নেতারা ইউক্রেনকে রাশিয়ার জব্দ সম্পদ থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার বিষয়টিতে সম্মতি জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা শুক্রবার ইতালি ছেড়ে যান। গতকাল ছিল সম্মেলনের শেষ দিন। সম্মেলনে থাকা অন্য নেতাদের জন্য এদিন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সুযোগ রাখা হয়।