দুই মাস আগে ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের ‘মস্কো অভিমুখে যাত্রা’র পর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রধান উইলিয়াম বার্নস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিশোধ নেওয়া সময়ের ব্যাপার।
বার্নসের ভাষ্য ছিল, ‘আমরা যা দেখছি, তা খুব জটিল এক নৃত্য।’ গত জুলাইয়ে ওয়াশিংটনে অ্যাস্পেন সিকিউরিটি ফোরামে (এএসএফ) তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন হলেন প্রতিশোধের চূড়ান্ত দূত।’
ওই ভিডিওতে প্রিগোশিন জোর দিয়েছেন আফ্রিকায় অভিযান চালানোর জন্য সেনা নিয়োগের ওপর। পাশাপাশি তিনি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে বিনিয়োগের জন্য রাশিয়ার বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বলা হচ্ছে, প্রিগোশিন তাঁর ব্যক্তিগত জেটে করে ভাগনারের অন্য জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে মস্কোর কাছে টারভার অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন জেটটি আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে রাশিয়ার বিমানপ্রতিরক্ষা থেকে ছোড়া গুলিতে সেটি ভূপাতিত হয়েছে।
এ ঘটনায় শুধু প্রিগোশিনই মারা যাননি, ফ্লাইটে তাঁর সঙ্গে থাকা ভাগনারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রিগোশিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি উৎকিনও প্রাণ হারিয়েছেন। সাবেক জিআরইউয়ের (সোভিয়েত ইউনিয়ন) এই কর্মকর্তা সিরিয়ায় তেলক্ষেত্র পাহারা দেওয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ভাগনারের বহরকে সংগঠিত করায় জড়িত ছিলেন।
ভাগনারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রাশিয়ার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলোর রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ভাগনারের নেতৃত্বে থাকা অন্য সদস্যরাও ওই ফ্লাইটে ছিলেন।
এটা এখন স্পষ্ট যে একটা সময় সংগঠিত ভাগনার আর অটুট নেই।
‘মস্কো অভিমুখে যাত্রা’র পর ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ভাগনারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ভাটা নামে, যা পুতিন ও ক্রেমলিনকে বিব্রত করে। অবস্থাদৃষ্টে তখন মনে হয়েছিল, যদিও তা কেবল মুহূর্তের জন্য—ক্রেমলিনের নির্দেশে আফ্রিকায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে যে প্রভাব অর্জন করেছিলেন প্রিগোশিন, তা ফিরিয়ে আনায় তিনি সচেষ্ট হয়েছেন।
বিমান দুর্ঘটনায় যখন প্রিগোশিনের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও ঠিক কী ঘটেছে, তা স্পষ্ট নয়; তবে যা স্পষ্ট, তা হলো—ভাগনার নামের ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী যে প্রতিষ্ঠান প্রিগোশিন তৈরি করেছিলেন, সেটিকে মূলত প্রথমে এক জায়গায় এনে নাটকীয়ভাবে কোতল করা হলো।
‘মস্কো অভিমুখে যাত্রা’র পর ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ভাগনারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ভাটা নামে, যা পুতিন ও ক্রেমলিনকে বিব্রত করে। অবস্থাদৃষ্টে তখন মনে হয়েছিল, যদিও তা কেবল মুহূর্তের জন্য—ক্রেমলিনের নির্দেশে আফ্রিকায় অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে যে প্রভাব অর্জন করেছিলেন প্রিগোশিন, তা ফিরিয়ে আনায় তিনি সচেষ্ট হয়েছেন।
প্রিগোশিন নাইজারের সেনা অভ্যুত্থানকে সমর্থন করে একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন। ভাগনার কীভাবে ক্রেমলিনের পক্ষে কাজ করছে, তার ‘নমুনা’ হিসেবে ওই বিবৃতিকে দেখেছিল বিশ্লেষকদের একাংশ। চলতি সপ্তাহে প্রিগোশিন আফ্রিকার কোনো একটি জায়গা থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যা দেখে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে তিনি সম্ভবত তাঁর নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন এবং তাঁর আগের কৃতকর্ম (মস্কো অভিমুখে যাত্রা) ক্ষমা করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, বেলারুশে ঘাঁটি গাড়া শত শত ভাগনার যোদ্ধা দেশটি ছেড়ে যেতে শুরু করেছিলেন। তাঁদের অনেকে কম বেতন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। অন্যরা পশ্চিম আফ্রিকায় চলে যাচ্ছিলেন। যেখানে প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ হাজারের বেশি সেনা ছিলেন, তা কমতে কমতে প্রায় এক–চতুর্থাংশে নেমে এসেছিল।
দুই মাস ধরে প্রিগোশিন ও তাঁর মিত্ররা পুতিনের অসন্তুষ্টির ছায়া থেকে বেরিয়ে নতুন কোনো ভূমিকা দেখা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময়ে রাশিয়ায় ভাগনারের কর্মকাণ্ড গুটিয়ে এসেছিল।
গত জুন মাসে ভাগনারের ‘মস্কো অভিমুখে যাত্রা’র পর সামরিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাজ্যের সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল শন বেল স্কাই নিউজকে বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, প্রিগোশিন ছাড়া ভাগনার কিছুই নয়, অস্তিত্বহীন। তাঁর ভাষায়, ‘যদি ভাগনার গ্রুপই ইয়েভগেনি প্রিগোশিন হয়, তবে আগামী দিনে এটির টিকে থাকা কষ্টকর হবে। এটা কখন শেষ হবে, তা আমরা জানি।’