আভদিভকার নিয়ন্ত্রণ নিল রাশিয়া, ৯ মাসের মধ্যে যুদ্ধে সবচেয়ে বড় সাফল্য

লড়াইয়ে টিকতে না পেরে আভদিভকা শহর থেকে পিছু হটেছেন ইউক্রেনের সেনারাছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের শহর আভদিভকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেন শহরটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর আজ রোববার এ ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। যদিও মস্কো বলেছে, ইউক্রেনের কিছু সেনা এখনো সেখানকার সোভিয়েত আমলের একটি বড় জ্বালানির কারখানায় আত্মগোপন করে আছে। দুই বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে যেসব জায়গায় সবচেয়ে তীব্র লড়াই হয়েছে, সেগুলোর একটি হয়েছে এখানে।

গত বছর মে মাসে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বাখমুত শহর দখলে নেওয়ার পর এই আভদিভকা শহরের পতন রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে বড় বিজয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করার দুই বছর পূর্তির প্রাক্কালে দেশটি এই সাফল্য পেল।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, বর্তমানে এক হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যুদ্ধ চলছে। তার মধ্যে ৮ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকায় তাদের সেনারা এগিয়ে গেছেন।

কয়েক মাসের তীব্র লড়াইয়ের পর আভদিভকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ইউক্রেন বলেছে, সেনাদের যেন আত্মসমর্পণ করতে না হয়, সে জন্য তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আভদিভকার পতনকে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অভিহিত করে রুশ সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ইউক্রেন বাহিনী গত বছর তুমুল পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও রুশ বাহিনীর অবস্থানে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে ইউক্রেন বাহিনীকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে মস্কো। কিয়েভ যখন সেনাবাহিনী নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়েছেন, সে সময় যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের এই ব্যর্থতার ঘটনা ঘটল।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন আজ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘রাষ্ট্রের প্রধান এই সফলতার জন্য, একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়ের জন্য রাশিয়ার সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।’

আরও পড়ুন

তবে রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইউক্রেনের কিছু সেনা এখনো কোক কারখানায় আত্মগোপন করে আছেন। আভদিভকায় এই কারখানাটি একসময় ইউরোপে কয়লা থেকে জ্বালানি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় কারখানা ছিল। শিল্প অধ্যুষিত দোনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য এই আভদিভকা শহর দখল তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগোর কোনাশেঙ্কোভ বলেছেন, ‘শহরটি সম্পূর্ণরূপে অস্ত্রধারীমুক্ত করা, শহর ছেড়ে যাওয়া ইউক্রেনের ইউনিটগুলোকে আটকানো এবং আভদিভকা কোক ও কেমিক্যাল কারখানায় যাঁরা লুকিয়েছেন, তাঁদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ বিষয়ে এখনো ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আভদিভকায় নীল ও হলুদ রঙের ইউক্রেনের পতাকা নামিয়ে রাশিয়ার পতাকা ওড়াতে দেখা গেছে। এমনকি ওই কোক কারখানার ওপরে তা করা হয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেনের এই সেনা প্রত্যাহারকে অতি দ্রুততার সঙ্গে বিশৃঙ্খল অবস্থায় পালিয়ে যাওয়া হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিছু সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে যাওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের কিছু সেনা আহত হয়েছে। তবে সেনা প্রত্যাহারের পর পরিস্থিতি একভাবে স্থিতিশীল হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কয়েক হাজার রুশ সেনাকে ইউক্রেনে ঢুকিয়ে দেন। এর মধ্য দিয়ে পূর্ব ইউক্রেনে ইউক্রেনের বাহিনী ও রুশপন্থী ইউক্রেনিয়ানদের মধ্যে আট বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত দুই দেশের সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়।

আরও পড়ুন