‘আমরা শিক্ষার স্বাধীনতা বিপন্ন হতে দেখছি। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটা শুরু হয়েছে।’ এভাবে কথা বলছিলেন বার্লিন ফ্রি ইউনিভার্সিটির স্নাতকের শিক্ষার্থী সিসিলিয়া।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর সিসিলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় (ফ্রি ইউনিভার্সিটি) ইসরায়েলের সমর্থনে একটি পক্ষপাতদুষ্ট বিবৃতি প্রকাশ করে। এর পর থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইসলামভীতি–সংক্রান্ত হয়রানি বাড়তে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সিসিলিয়া ও আরও কয়েকজন মিলে একটি কমিটি গঠন করেন।
এরপর জার্মানিজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সিসিলিয়াদের মতো হাজারো শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের সমর্থনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে থাকেন। তাঁরা বিক্ষোভ ও বক্তৃতার আয়োজন শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবন ও লন দখল করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীরা সফররত ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বক্তৃতা অনুষ্ঠানেরও বিরোধিতা করেন। তাঁদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে গত জানুয়ারিতে কোলন বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মানিতে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রন প্রোসর ও গত ফেব্রুয়ারিতে হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলি বিচারক ড্যাফনে বারাক-ইরেজের বক্তৃতার বিরোধিতা অন্যতম।
কিন্তু বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তাঁরা নিজেদের বাক্স্বাধীনতার অধিকার চর্চা করতে গিয়ে গণমাধ্যমগুলোর বৈরী প্রতিবেদন, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনীতিবিদদের নিপীড়নমূলক আইনি পদক্ষেপ এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
সিসিলিয়া বলেন, যেসব কর্মকর্তা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গাজার ঘটনা ও ফিলিস্তিনের কথা বস্তুনিষ্ঠভাবে জানাচ্ছেন এবং তাঁদের কণ্ঠস্বর উচ্চকিত করছেন, তাঁদের পদ্ধতিগত নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে।
ক্যাম্পাসে অবস্থান ও ক্যাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান ও ক্যাম্প করে প্রতিবাদ বৃদ্ধির পর কয়েক সপ্তাহ ধরে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই ধরনের কার্যক্রম বেড়েছে। বার্লিন, মিউনিখ, কোলন এবং জার্মানির অন্যান্য শহরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা অবস্থান বা ক্যাম্প করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এসব প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে, সেগুলোর প্রায় সবই সরকারি।
বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজকেরা জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিকে সমর্থন করতে, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ইসরায়েলকে বর্জন করতে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির বিরুদ্ধে দমনমূলক পদক্ষেপ বন্ধ করতে এবং জার্মানির ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে আরও যথাযথভাবে স্বীকার করে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
জার্মানিতে কিছু বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হলেও বেশির ভাগ বিক্ষোভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিতর্ক উঠেছে, জার্মানিতে শিক্ষার্থীরা কি বাক্স্বাধীনতা ও বিক্ষোভের সীমা লঙ্ঘন করছেন? নাকি যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম দমন করতে কর্তৃপক্ষই ওই অধিকার খর্ব করছে?
গত বুধবার বার্লিনের হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ভবন দখল করেন। একটি ব্যানারে তাঁরা ভবনটির নতুন নামকরণ করেন ‘জাবালিয়া ইনস্টিটিউট’। জাবালিয়া গাজার একটি শরণার্থীশিবির। বিক্ষোভকারীরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের নতুন নামকরণ করেন ফিলিস্তিনের নিহত কবি রেফাত আল-আরিয়িরের নামে। গত ডিসেম্বরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।
শিক্ষার্থীরা হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশপথে ব্যারিকেড দেন। ‘সাধারণ মানুষকে হত্যা কোনো আত্মরক্ষা নয়’ ও ‘প্রতিরোধ আইনসংগত’—দেয়ালে এমন স্লোগান লেখেন।
বার্লিনের বার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারী ফাউন বলেন, (আন্দোলনের) তীব্রতা বৃদ্ধি যে কাজ করছে, তা মানুষ বুঝতে পারছে। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা বাড়ছে। তাঁরা ভবিষ্যতে আরেকটি (ভবন) দখল এবং আরও বেশি মারমুখী আচরণ করতে পারবেন।
হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরের সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধকারীদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ভবন অবরোধের সংগঠকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। কিন্তু পরের দিন বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইয়ুলিয়া ভন ব্লুমেন্টহাল সাংবাদিকদের বলেন, বার্লিনের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) বিজ্ঞানবিষয়ক সিনেটর ইনা সিজিবোরা ও ক্রিস্টিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) মেয়র কায় ভেগনার আলোচনা বন্ধ এবং পুলিশের মাধ্যমে অবরোধকারীদের উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এরপর পুলিশ হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৫০ জনের বেশি অবরোধকারীকে উচ্ছেদ করে এবং ২৫ জনের বিরুদ্ধে সন্দেহমূলক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনে।
এক অবরোধকারী নারী শিক্ষার্থী বলেন, পুলিশ তাঁর মাথায় উপর্যুপরি ঘুষি ও লাথি মেরেছে। জোরে এমন এক ধাক্কা দিয়েছে, যার আঘাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম ‘বার্লিনার সাইটুং’-এর ভিডিও সাংবাদিক ইগনাসিও রোসাসলান্ডা উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবেদন করতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে মার খেয়েছেন। নিজেকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁকে মারা হয়েছে। পরে তাঁকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন এই সাংবাদিক।
গত বৃহস্পতিবার এ অভিযান শুরুর সামান্য আগে সিডিইউর মেয়র কায় ভেগনার এক টুইটে লেখেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জ্ঞান ও চিন্তামূলক আলোচনার জায়গা। (বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস) ইহুদিবিদ্বেষী ও সন্ত্রাসীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের জন্য আইনহীন কোনো জায়গা নয়।’
হুমবোল্ডট বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের আগে ৭ মে বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের অস্থায়ী ক্যাম্প উচ্ছেদ করে পুলিশ। ক্যাম্প করার কয়েক ঘণ্টার মাথায় কোনো ধরনের আলাপ ছাড়াই তাঁদের উচ্ছেদ করা হয় বলে জানান বিক্ষোভকারী। এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের ঘুষি মারতে, গলা চেপে ধরতে এবং লাথি মারতে দেখেছেন আল-জাজিরার সাংবাদিকেরা। অথচ বিক্ষোভকারীরা কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিলেন। এই অভিযানকালে ৭৯ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিন শতাধিক প্রভাষকের প্রতিবাদ
বার্লিনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক প্রভাষক এক খোলাচিঠিতে ফ্রি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, ফ্রি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ (বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে) আলাপ-আলোচনা ও অহিংস আচরণের শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা প্রকাশ্যে জার্মানির কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও গবেষণামন্ত্রী বেটিনা স্টার্ক-ওয়াটসিগনারের সমালোচনা করেছেন।
ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির (এফডিপি) মন্ত্রী বেটিনা প্রভাষকদের খোলাচিঠিকে ‘জঘন্য’ এবং এর মাধ্যমে ‘সহিংসতাকে তুচ্ছ’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
এ ঘটনার তিন দিন পর জার্মানির ডানপন্থী ট্যাবলয়েড ‘বিল্ট’ খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারী প্রভাষকদের অনেকের নাম ও ছবি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটির শিরোনামে প্রভাষকদের ‘টেটার’ বা দুষ্কর্মের সহযোগী বলে অভিহিত করা হয়। জার্মানিতে সাধারণ নাৎসিদের সহযোগীদের টেটার বলা হয়ে থাকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার সরকার একটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। এতে হলোকাস্ট বিশেষজ্ঞ ও খোলাচিঠিতে স্বাক্ষরকারী মিখায়েল ভিল্ডটও কথা বলেন। বিল্টের প্রতিবেদনে তাঁরও ছবিসহ নাম প্রকাশ করা হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে ভিল্ডট উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেন, যাঁরা এখন প্রাথমিকভাবে দমনমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু একটি রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার পথ উন্মুক্ত করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বার্লিন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ক্লেমেঞ্জ আর্তজও শিক্ষার্থীদের সমাবেশ করার অধিকার সংকুচিত করার ব্যাপারে সতর্কতা উচ্চারণ করেন। ফ্রি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্প উচ্ছেদের কোনো আইনি ন্যায্যতা তিনি দেখছেন না বলেও মন্তব্য করেন।
ইহুদি বিক্ষোভকারীদের ইহুদিবিদ্বেষী তকমা
জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব স্থানে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হচ্ছে, সেই একই স্থানে জিউশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন জার্মানি ও ফ্রাইডেস ফর ইসরায়েল নামে প্ল্যাটফর্মও কয়েক মাস ধরে পাল্টা বিক্ষোভ করছে। তাদের অভিযোগ, যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীদের স্লোগান ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এসব স্লোগানের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ বোধ করছেন।
জার্মানির প্রায় সব প্রধান দলের রাজনীতিকেরাও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। জার্মানির ইহুদিদের ধর্মীয় সভার প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউশও এ ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।
সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউশের প্রেসিডেন্ট জোসেফ শুস্টার যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার মধ্যমপন্থী সংবাদপত্র টাগেসস্পিগেলে লিখেছেন, এটা যুদ্ধবিরোধী কোনো আন্দোলন নয়। ইসরায়েলের প্রতি তাদের ঘৃণা স্পষ্ট। তারা এমন ভাষা ও প্রতীকী ব্যবহার করছে, যাতে ইহুদিদের হত্যা করার আহ্বান আছে।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে জার্মানিতে অনেক ইহুদি শিক্ষার্থীও রয়েছেন, যাঁরা চলমান আন্দোলনে সম্মুখভাগে রয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, গণমাধ্যম ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের উপেক্ষা করছে। অথবা তাঁদের ইহুদিবিদ্বেষী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে।
বার্লিন ইউনিভার্সিটি অব আর্টসের (ইউডিকে) ইহুদি শিক্ষার্থী লিলি গত নভেম্বরে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে আরও কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে একটি বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে তাঁরা বক্তব্য দেন এবং গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের নাম পড়ে শোনান। অংশগ্রহণকারীদের গায়ে ছিল কালো পোশাক। আর তাঁদের হাত রক্তলাল রঙে রাঙানো হয়েছিল।
এরপরও এই প্রতিবাদের সঙ্গে জার্মানির অনেক গণমাধ্যম ২০০০ সালে দুই ইসরায়েলি সেনাকে ছুরিকাঘাতের প্রসঙ্গ টানেন। ওই ফিলিস্তিনি হত্যাকারীদের একজন নিজের রক্তাক্ত হাত গণমাধ্যমের ক্যামেরার দিকে তুলে ধরেছিলেন। তাই গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারীদের রক্তলাল রঙের হাতকে সহিংসতার ডাক বলে আখ্যা দিয়েছে জার্মানির বেশ কিছু গণমাধ্যম।
জার্মানির শীর্ষ রক্ষণশীল দৈনিক দ্য ফ্রাঙ্কফুটার আলগেমাইনে সাইটুং ইউডিকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে ‘ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা ও ইহুদিবিদ্বেষ’ বলে মন্তব্য করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে ‘সহিংস’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে দৈনিকটির প্রতিবেদনে।
শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারে নতুন আইনের প্রস্তাব
জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে বহিষ্কারের ঘটনা বেশ দুর্লভ। কিন্তু গত বছর যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে ইহুদিবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন দেশটির শীর্ষ রাজনীতিবিদেরা।
গত ফেব্রুয়ারিতে ফ্রি ইউনিভার্সিটির ইহুদি শিক্ষার্থী লাভাভ শাপিরা বার্লিনের একটি পানশালায় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর হামলার শিকার হন। ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠীর সক্রিয় ওই আহত শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের আইন করার দাবি বাড়তে থাকে।
গত মার্চে শাসক দল সিডিইউ ও এসপিডির জোট সরকার বার্লিনে শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত অপরাধ দমনে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের একটি নতুন খসড়া আইন উপস্থাপন করে।
১৯৬০-এর দশকে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ চরম আকার ধারণ করে। তখন ক্যাম্পাসে বাম ঘরানার চরমপন্থাকে দমন করতে ও নাৎসি কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের আইন করেছিল তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির সরকার। ২০২১ সালে জার্মানির সর্বশেষ জোট সরকার আইনটি বাতিল করে। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের সাময়িকভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে এটাই শৃঙ্খলাভঙ্গের কঠোর শাস্তি।
প্রস্তাবিত নতুন আইনটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাস হবে বলে জানিয়ে সিনেটর সিজিবোরা সম্প্রতি বলেছেন, আইনটি প্রয়োজনীয়। তবে কেবল সহিংসতার ঘটনা ও সর্বশেষ আশ্রয় হিসেবেই কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে।
কিন্তু সমালোচকদের অভিযোগ, নতুন আইনে সহিংসতাকে অস্পষ্ট পরিভাষায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। নতুন আইন আগের আইন এবং অন্য রাজ্যের একই ধরনের আইনের চেয়ে সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাঁদের শঙ্কা, নতুন আইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান হল দখল, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও লিফলেট বিতরণের মতো প্রথাগত রাজনৈতিক কার্যক্রম দমন করা হতে পারে।
জার্মানির এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স ওয়ার্কারস ইউনিয়নের (জিইডব্লিউ) জার্মান শাখার চেয়ারপারসন মার্টিনা রেগুলিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ফৌজদারি আইন প্রয়োগের জায়গা নয়, এটা উচিতও নয়। জার্মানিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ঐতিহ্যবাহী প্রথা রয়েছে বলে মনে করেন এই শ্রমিকনেতা। এই প্রথা রক্ষা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।