অ্যাসাঞ্জকে ফেরানোর পক্ষে ভোট অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর
অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে ভোট, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য এটি কড়া রাজনৈতিক বার্তা।
উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত আনার একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ। গতকাল বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ওই প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা অ্যান্ড্রু উইলকি। অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টির সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবটির পক্ষে ৮৬ জন আইনপ্রণেতা ভোট দেন। এর বিপক্ষে ভোট দেন ৪২ জন। এতে প্রস্তাবটি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে পাস হয়।
অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রত্যর্পণ নিয়ে আগামী সপ্তাহে লন্ডনের উচ্চ আদালতে শুনানির আগে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে তাঁকে ফেরত আনার প্রস্তাব পাসের ঘটনাটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগে উইলকি বলেন, তাঁর তোলা প্রস্তাবটি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কড়া রাজনৈতিক বার্তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে চান। অ্যাসাঞ্জের মামলাটি যুক্তরাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধসংক্রান্ত পাঁচ লাখ গোপন নথি ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছিল জুলিয়ানের বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে গোপন নথি ফাঁস করায় বিব্রত যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসাঞ্জের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। গ্রেপ্তার এড়াতে সাত বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছিলেন অ্যাসাঞ্জ। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১১ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে লন্ডন পুলিশ। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাঁকে ওয়াশিংটন প্রত্যর্পণের জন্য যুক্তরাজ্যের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়া হলে তাঁকে সেখানে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তবে অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জ তা ঠেকানোর জন্য চূড়ান্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই দিনের শুনানি হবে। দুজন বিচারকের একটি বেঞ্চ আদালতের দেওয়া আগের আদেশ পর্যালোচনা করবেন। আদালতের আগের আদেশ অনুযায়ী, অ্যাসাঞ্জ তাঁর প্রত্যর্পণ বিষয়ে আর আপিল করতে পারবেন না।
অস্ট্রেলীয় আইনপ্রণেতা উইলকি বলেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে ওই শুনানিতে যাবেন। এবিসি নিউজকে উইলকি বলেন, আপনি অ্যাসাঞ্জকে পছন্দ বা অপছন্দ যা-ই করুন না কেন, বিষয়টি অনেক দূর গড়িয়েছে।
আলবানিজ যুক্তরাষ্ট্রকে অ্যাসাঞ্জকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে আহ্বান জানিয়েছেন এবং অ্যাসাঞ্জকে মুক্ত করে দিতে বলেছেন। এ ছাড়া বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধান না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
অ্যাসাঞ্জের সমর্থনকারীরা বলছেন, অ্যাসাঞ্জ সম্ভাব্য অপরাধ করা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোশ খুলে দিয়েছেন বলে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, গোপন নথি প্রকাশ করে মানুষের জীবনকে বিপজ্জনক করে তুলেছেন অ্যাসাঞ্জ।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল মার্ক ড্রেফুস বলেন, গত মাসে অ্যাসাঞ্জের প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়ে তিনি মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, এটা ছিল ব্যক্তিগত আলোচনা। তবে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট। তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। বিষয়টির এখন সমাপ্তি টানার সময়।