পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে চিরতরে বিদায় নিচ্ছে জার্মানি
শনিবার (১৫ এপ্রিল) জার্মানির শেষ তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জ্বালানির উৎস হিসেবে প্রচলিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ চিরকালের জন্য ত্যাগ করছে জার্মানি। দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এই সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন।
জার্মানির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৬৭ সালে। ছয় মাস আগে পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে সরে আসার কথা ছিল জার্মানির। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময়সীমা কিছুটা বাড়ানো হয়।
তবে পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার নিয়ে জার্মানির জোট সরকারের মধ্যেও দ্বন্দ্ব পুরোপুরি কাটেনি। পরিবেশবাদী সবুজ দল গত বছরই শেষ তিনটি কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্তে অটল থাকলেও উদারপন্থী এফডিপি দল জ্বালানি–সংকট এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেগুলো চালু রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়েছিল। শেষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ নিজের বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে চলতি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এফডিপি সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করলেও শলৎজ নিজের সিদ্ধান্তে এখনো অটল রয়েছেন। এমনকি কেন্দ্রগুলো অকেজো করার বদলে রিজার্ভ হিসেবে রেখে দেওয়ার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছেন তিনি। সবুজ দলের নেতৃত্বে পরিবেশ মন্ত্রণালয় মনে করিয়ে দিয়েছে যে জার্মানির শেষ তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রিজার্ভ হিসেবে রাখা বেআইনি পদক্ষেপ হবে। তা ছাড়া এগুলো অকেজো করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জার্মানিতে জ্বালানি–সংকটের আশঙ্কা বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের তৎপরতায় দ্রুত বিকল্প উৎসের ব্যবস্থা হওয়ায় ব্ল্যাকআউট বা অন্য কোনো অঘটন ঘটেনি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কাও মোটামুটি সামলে নেওয়া গেছে। ফলে পারমাণবিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতার আর কোনো কারণ দেখছেন না বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ।
জার্মানির জ্বালানি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎ বন্ধ হওয়ার পর ঘাটতি পূরণ করতে আরও দ্রুতগতিতে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে এমন কেন্দ্র গ্যাসের বদলে হাইড্রোজেন দিয়েও চালানো সম্ভব হতে পারে। তবে এমন কেন্দ্রে বিনিয়োগের জন্য সরকার কোনো উৎসাহ না দেওয়ায় সেই উদ্যোগে গতি আসছে না।
এদিকে শনিবার বিদ্যুতের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও তিনটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বন্ধ হবে না। অনেক দিন ধরে সেই কাজের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপদে সেই প্রক্রিয়া চালাতে ধীরে ধীরে চুল্লিগুলো ঠান্ডা করতে হবে। পানি ভরা চুল্লির মধ্য থেকে ফুয়েল এলিমেন্ট বের করে নিতে হবে। কেন্দ্র ভেঙে ফেলার বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হতে বেশ কয়েক বছর, এমনকি কয়েক দশকও সময় লাগতে পারে।
জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে বিপর্যয়ের পর জার্মানির সরকার ২০১১ সালে পারমাণবিক বিদ্যুৎ পুরোপুরি বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে ২০০২ সালেও তৎকালীন সরকার নীতিগতভাবে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর নতুন করে কোনো কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়নি।