যুক্তরাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারায় রুশ গোয়েন্দারা: ব্রিটিশ গোয়েন্দাপ্রধানের সতর্কবার্তা
নতুন এক মিশনে নেমেছেন রাশিয়ার গোয়েন্দারা। ‘যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের দেশগুলোর সড়কে বিশৃঙ্খলা ও গন্ডগোল’ সৃষ্টি করতে চাইছেন তারা। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৫ এর প্রধান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার লন্ডনের কাউন্টার-টেররিজম অপারেশনস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এফআই৫ প্রধান কেন ম্যাককালাম দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে একটি বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, জিআরইউ (সোভিয়েত মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অর্গানাইজেশন) এজেন্টরা যুক্তরাজ্যে ‘অগ্নিসংযোগ, নাশকতা এবং আরও অনেক বিপজ্জনক কর্মকাণ্ড করছে’।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে সমর্থন দেওয়ার পর থেকে (তাঁরা) এসব শুরু করেছে এবং ‘এ ধরনের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড দিন দিন বাড়ছে’ বলেও জানান তিনি।
ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা ২০২২ সাল থেকে আরও ২০টি (নাশকতার) চক্রান্ত নস্যাৎ করেছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ওই সব চক্রান্তের পেছনে ইরানের হাত ছিল। (রাশিয়ার এজেন্টরা সক্রিয় হয়ে উঠলেও) এখনো এমআই৫ কে ইসলামি চরমপন্থীদের সামলাতেই বেশি সময় ব্যয় করতে হয় বলেও জানান তিনি।
ম্যাককালাম বলেন, সন্ত্রাসবাদ সংশ্লিষ্ট হুমকি এবং নানা দেশে থেকে আসা হুমকির জটিল এই সংমিশ্রণের অর্থ ‘আমাদের হাতে এখন অনেক বড় কাজ’। তিনি আরও বলেন, ‘আমার পেশাজীবনের প্রথম ২০ বছরে এখানে সন্ত্রাসী হামলার অনেক অনেক হুমকি ছিল। এখন আমাদের সে সব হুমকির পাশাপাশি রাষ্ট্র সমর্থিত গুপ্তহত্যা ও নাশকতার চক্রান্ত মোকাবিলা করতে হয়। ইউরোপের মাটিতে বড় একটি যুদ্ধের কারণে (আমাদের) বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত হচ্ছে।’
এফআই৫ প্রধান সতর্ক করে দিয়ে আরও বলেন, যুক্তরাজ্য ‘সামনে থেকে’ ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। এর অর্থ ‘আমরা (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) পুতিনের শাসন ব্যবস্থায় বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছি। তাই যুক্তরাজ্যের মাটিতে আরও আগ্রাসন অনুমেয়ই।’
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউরোপ থেকে রাশিয়ার সাড়ে সাতশর বেশি কূটনীতিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ম্যাককালাম বলেন, ‘তাদের একটি বড় অংশ ছিল গুপ্তচর।’
এটা (কূটনীতিক বরখাস্ত) রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলেছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্য এবং মিত্ররা রাশিয়ার গুপ্তচর মনে করে এমন ব্যক্তিদের কূটনৈতিক ভিসা দেওয়া হচ্ছে না।
ম্যাককলাম তাঁর বক্তব্যে যেসব হুমকির কথা তুলে ধরেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
# অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা অনলাইনে চরমপন্থার দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে তাদের ১৩ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
# ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের মাটিতে ৪৩টি একেবারে শেষ পর্যায়ের হামলা পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়েছে। ওইসব হামলা পরিকল্পনায় ‘গণহত্যার’ লক্ষ্যে আগ্নেয়াস্ত্র এবং বিস্ফোরক ব্যবহারের করার কথা ছিল।
# বাইরের দেশ থেকে আসা হুমকি নিয়ে তদন্ত ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা যেসব তদন্ত করছে তার ৭৫ শতাংশ এখনো ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এবং ২৫ শতাংশ চরম ডানপন্থী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে।