সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করলেন, মিত্রদের খানিকটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিলেন। যা চেয়েছিলেন, তার চেয়ে কম প্রাপ্তি নিয়ে বাড়িতে ফিরতে হলো। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যা পেলেন বা যা করলেন, তা ঠিক এমনই। তবে এটাও ঠিক যে কয়েক মাস আগে যেমনটা ভাবা হচ্ছিল, তার চেয়ে বেশি কিছুই পেয়েছেন জেলেনস্কি।
লিথুনিয়ার ভিলনিয়াস শহরে বসেছিল ন্যাটোর সম্মেলন। গত মঙ্গল ও বুধবার এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাটোয় ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ চাইছিলেন জেলনস্কি। তবে পশ্চিমারা তাঁর দেশকে সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে। সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ইউক্রেনকে বাঁচাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন।
তবে এত কিছুর পরও খুশি হননি জেলেনস্কি। দুই দিনের সম্মেলনের প্রথম দিন মঙ্গলবার খানিকটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউক্রেন যদি কোনো সময়সীমা না পায়, তাহলে তা হাস্যকর হবে।
ন্যাটোর একটি উদ্দেশ্য হলো, জোটের কোনো রাষ্ট্র বিপদে পড়লে সবাই তার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু জেলেনস্কি এবার ন্যাটো সম্মেলনে যে তৎপরতা চালাচ্ছিলেন, তাতে নেতারা বাধ্য হচ্ছিলেন এটা বলতে যে রাশিয়ার সঙ্গে যত দিন যুদ্ধ চলবে, তত দিন ইউক্রেন এই জোটের সদস্য হতে পারবে না। ইউক্রেনকে যদি এখন সদস্যপদ দেওয়া হয়, তাহলে ন্যাটো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। পশ্চিমা নেতারা সেটা চাইছেন না।
এই সম্মেলনে জেলেনস্কির বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এরপর খানিকটা সুর নরম হয়েছে জেলেনস্কির। বলেছেন, এই সম্মেলন থেকে ‘ভালো’ কিছুই পেয়েছেন। জেলেনস্কি এ–ও বলেছেন যে স্বাধীনতার পর এই প্রথম ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি ভিত্তি রচিত হলো ইউক্রেনের জন্য।
ন্যাটোর সদস্যপদ না পাওয়া যেসব দেশের সঙ্গে এই জোট কাজ করে, তাদের একটি পরিষদ রয়েছে। এটিকে বলা হয় ইউরো-আটলান্টিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক নিল মেলভিন বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে ইউক্রেন এখন ইউরো-আটলান্টিক শিবিরে যুক্ত হলো...। আমার বিবেচনায়, ন্যাটোর এবারের সম্মেলন থেকে ইউক্রেন আরও শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হলো।’
রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ইউক্রেনকে ‘অব্যাহত’ অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে ধনী দেশগুলোর জোট জি-৭। মেলভিন বলেন, রাশিয়ার হামলার শুরুর আগে ন্যাটোয় যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ইউক্রেন যে অবস্থানে ছিল, এখন আর সেই অবস্থানে নেই। এই জোটের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
ন্যাটোর সম্মেলন থেকে প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াকও। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই সম্মেলনে যা পাওয়া গেছে, তা আশাজাগানিয়া। তিনি আরও বলেন, সামরিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, ইউক্রেন এবার দীর্ঘ মেয়াদে সাহায্য পেতে যাচ্ছে। এই সহায়তা প্যাকেজ শুধু আজকের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও কার্যকর বলে মনে করেন তিনি।
তবে এই সম্মেলনে ইউক্রেনের যে ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়েছে, তা নিয়ে বিভক্তিও রয়েছে। ন্যাটো জোটের দেশগুলোর একটি পক্ষ চাইছিল, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরপরই যাতে ইউক্রেন সদস্যপদ পায়, সেই ব্যবস্থা করা। ন্যাটোর পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো এটা চায়। কিন্তু আরেকটি পক্ষ যারা সতর্ক অবস্থানে, তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি। তারা খানিকটা ‘ধীরে চলো’ নীতি অবলম্বন করছে।