ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন শহর এত দিন রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এখন ইউক্রেনের সেনাদের পাল্টা আক্রমণের মুখে শহরটি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর ফলে শহরের দিনিপ্রো নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করা হাজারো রুশ সেনা ‘উচ্চ ঝুঁকি’তে পড়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ও গোয়ান্দা কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
নব্য নাৎসিবাদ উৎখাতের কথা বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। পরে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিশাল এলাকা ও খেরসন দখল করে নেন রুশ সেনারা। ইউক্রেন এখন নিজেদের এলাকা পুনর্দখলে নিতে সামরিক কার্যক্রম জোরদার করেছে।
আজ টুইট বার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা দপ্তর বলেছে, ইউক্রেনের সেনারা খেরসনের ইনগুলেটস নদীর দক্ষিণে অবস্থান করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন। রুশ সেনাদের অগ্রসর রুখতে দিনিপ্রো নদীর ওপর অন্তত তিনটি সেতু তাঁদের কামানের গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনের বাহিনী খেরসন পুনর্দখল করতে যাচ্ছে। টুইটে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য এলাকা থেকে খেরসন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রুশ সেনারা দিনিপ্রো নদীর পশ্চিম অংশে ঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছেন।
ইউক্রেনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডিফেন্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি ওলেস্কি দানিলভ টুইটে বলেন, রাশিয়া খেরসনের কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সর্বোচ্চসংখ্যক সেনা সমাবেশ করেছে, তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেস্কি আরেস্তোভিচ বলেন, খেরসনে তাঁর দেশের সেনাদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত দিনিপ্রো নদীর ওপর ক্ষতিগ্রস্ত সেতু পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দখলদার বাহিনীর রসদ সরবরাহ ঠেকাতে আমরা সম্ভাব্য সবকিছু করব।’
অন্যদিকে রুশ বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দিনিপ্রো নদীতে নিজেদের সেনাদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে তারা ভাসমান সেতু ও ফেরি ব্যবহার করবে। খেরসন ছাড়াও ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের মেলিতোপোল ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে পুনরায় বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। এসব অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী পাল্টা হামলা শুরু করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক রকেট পাওয়ার পর ইউক্রেন রুশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তারা ৬৬ জন রুশ সেনাকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া রুশ বাহিনীর তিনটি ট্যাংক ও অস্ত্রের দুটি মজুত ধ্বংসের দাবি করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তারা আরও জানায়, এদিন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষ্ণসাগরসংলগ্ন শহর মাইকোলাইভে মাল্টিপল রকেট লঞ্চার দিয়ে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে রয়টার্সের পক্ষ থেকে এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রুশ নিয়ন্ত্রণে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রুশ বাহিনী। গতকাল বুধবার রুশ বাহিনী জানায়, পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলে সোভিয়েত আমলে নির্মিত ভুলেহিরস্ক কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র অক্ষত অবস্থায় দখল করেছে তারা। ইউক্রেনে তিন সপ্তাহের বেশি সময়ের মধ্যে এটি রুশ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে আজ এক সাক্ষাৎকারে ওলেস্কি অ্যারেস্টোভিচ রুশ বাহিনীর তুলেহিরস্ক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে নেওয়াকে ‘সামান্য কৌশলগত অর্জন’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর বিপুলসংখ্যক সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার পুনরায় সেনা মোতায়েনের ঘটনা আক্রমণাত্মক থেকে কৌশলগত আত্মরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ফোনালাপের উদ্যোগ ব্লিঙ্কেনের
ইউক্রেন সংকট সমাধানে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলতে চান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এ জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যে লাভরভকে টেলিফোন করতে পারেন ব্লিঙ্কেন। আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই হবে দুই নেতার প্রথম ফোনালাপ। তবে ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফোনালাপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পায়নি মস্কো।