প্রতিশোধের হুমকি রাশিয়ার

  • ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার এতটা ভেতরে আর কখনো যেতে পারেনি ইউক্রেনীয় বাহিনী।

  • রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে দেখছেন।

রাশিয়ার পশ্চিমের কুরস্ক অঞ্চলে হামলা চালাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। এ হামলা ঠেকাতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। ওই অঞ্চলে পাঠানো হয়েছে বাড়তি সেনা। এ ছাড়া ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় পাল্টা বোমা হামলা শুরু হয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শনিবার রাশিয়ার ভেতরে তাঁদের বাহিনীর হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এই যুদ্ধকে ‘আগ্রাসীদের অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাচ্ছে’। রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের এই হামলা ছিল অপ্রত্যাশিত। আকস্মিক হামলায় অপ্রস্তুত রাশিয়া এখন নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের দুই পাশ থেকেই প্রচুর মানুষকে সরিয়ে নিচ্ছে।

রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের বাহিনীর এই হামলা গতকাল রোববার ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধে রুশ বাহিনী পাল্টা হামলা শুরু করেছে। তবে ইতিমধ্যে ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ভেতর ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছেন।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকা থেকে ৭৬ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। বেসামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার কাজের গতি আরও দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান ওই অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর স্মিরনভ।

পরিস্থিতি বিবেচনায় গত শনিবার ইউক্রেনের তিন সীমান্ত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে রাশিয়া। এদিকে মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশ ইউক্রেন সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন করেছে। বেলারুশের অভিযোগ, ইউক্রেন তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।

শনিবারের ভাষণে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেনের ‘যোদ্ধাদের’ ধন্যবাদ দেন। বলেন, তিনি রাশিয়ায় অভিযান নিয়ে তাঁর দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার আলেকজান্ডার সিরস্কির সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন প্রমাণ করেছে যে তারা প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং আগ্রাসীদের ওপর প্রয়োজনীয় চাপ নিশ্চিত করতে পারে।

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করার পর রাশিয়ার এতটা ভেতরে আর কখনো যেতে পারেনি ইউক্রেনীয় বাহিনী।

এদিকে গতকাল রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, কুরস্ক অঞ্চলে তারা শনিবার রাতে ইউক্রেনের ১৪টি ড্রোন ও ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। এর বাইরে রাশিয়ার অন্য অঞ্চলে হামলায় ব্যবহৃত ইউক্রেনের আরও ১৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের চোখে রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের আকস্মিক এই হামলা ক্রেমলিনের দুর্বলতা সামনে এনেছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একে বড় ধরনের উসকানি হিসেবে দেখছেন।

রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ গত বুধবার বলেন, ইউক্রেনীয় হামলা ঠেকানো হয়েছে। তবে ইউক্রেনীয় সেনাদের এখনো সীমানার ওপারে পাঠানো যায়নি। রুশ সামরিক ব্লগাররা বলছেন, কুরস্ক অঞ্চলে বাড়তি সেনা পাঠানোর পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে ইউক্রেন দ্রুত সেখানে সেনা বাড়াচ্ছে।

হতাহতদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে গতকাল প্রথম প্রহরের দিকে ইউক্রেনের হামলায় অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। আহত দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন ওই অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর আলেক্সি স্মিরনভ। নয়তলা একটি ভবনের ওপর ইউক্রেনের ধ্বংস হওয়া ক্ষেপণাস্ত্রের টুকরা পড়ে তাঁরা আহত হন।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসের খবর অনুযায়ী, রাশিয়া এরই মধ্যে সীমান্ত এলাকা থেকে ৭৬ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে। বেসামরিক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়ার কাজের গতি আরও দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান ওই অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর স্মিরনভ।

কিয়েভ ও মস্কোর পক্ষ থেকে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। তবে ২০২২ সালে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে এখন পর্যন্ত হাজারো মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ইউক্রেনীয় নাগরিক। এ যুদ্ধের শিগগির কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না।

রুশ সামরিক ব্লগারদের ভাষ্য, কুরস্ক অঞ্চলের ২০ কিলোমিটার ভেতরে লড়াই চলছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এত সহজে এ অঞ্চলে কীভাবে ঢুকল ইউক্রেন?

এদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও সুমি অঞ্চলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটস্চকো বলেন, আকাশ সুরক্ষা ইউনিট ‘কাজ করছে’ এবং নগরজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতাও জারি রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে এক পোস্টে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সতর্ক করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেছেন।

গতকাল কিয়েভে রুশ বোমা হামলায় চার বছর বয়সী সন্তানসহ এক বাবা নিহত হওয়ার পর জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়ারমাক রুশ সামরিক অবকাঠামোতে আরও হামলা করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, রাশিয়া অন্য কোনো যুক্তি গ্রহণ করে না। জেলেনস্কি বলছেন, কিয়েভে হামলায় উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া।

রুশ মানবাধিকার কমিশনার তাতিয়ানা মসকালকোভা বলেন, তিনি জাতিসংঘের কাছে কুরস্কে ইউক্রেনের হামলার ঘটনায় নিন্দা জানানোর জন্য আবেদন করেছেন।

হামলায় হাজারো সেনা

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, কুরস্ক অঞ্চলে আক্রমণে অংশ নিচ্ছেন হাজারো ইউক্রেনীয় সেনা। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে হামলার বিস্তৃতি ঘটানো ও রাশিয়াকে অস্থিতিশীল করা। ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শত্রুর অবস্থান নড়বড়ে করার পাশাপাশি তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতির চেষ্টা করবে ইউক্রেনীয় বাহিনী। রাশিয়া নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষিত করতে পারে না, তা দেখে তাদের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করা হবে।

এর আগে রুশ সেনারা দাবি করেছিলেন, গত মঙ্গলবার থেকে এক হাজারের মতো সেনা রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করেছেন। তবে রাশিয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইউক্রেনের ওই কর্মকর্তা বলেন, হাজারো সেনা এ হামলায় অংশ নিচ্ছেন।