রাশিয়ায় সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা
যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম এক দিনে ৬টি অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রাশিয়াজুড়ে উড়োজাহাজসেবা ব্যাহত।
রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালালে ইউক্রেন সঙ্গীহীন হবে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজেই এটা জানিয়েছেন। তবে এরপরও রাশিয়ায় ব্যাপক ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। দেশটির ছয়টি অঞ্চলে গতকাল বুধবার ড্রোন হামলা চালানো হয়। রাশিয়া এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এর উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এই হামলা শুরুর পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে এত বড় হামলা চালায়নি ইউক্রেন। গতকালের এই হামলার কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অনেক এলাকায় ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে।
গতকাল যেসব এলাকায় হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজধানী মস্কো, অরিয়ল, রিয়াজান, ব্রিয়ানস্ক, কালুগা ও পসকভ। এসব এলাকায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের খবর জানায়নি রাশিয়া। গতকাল সকালে মস্কোর মেয়র সার্গেই সোবিয়ানিন বলেন, সেখানকার রুজা এলাকা লক্ষ্য করে ছোড়া ড্রোন আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই হামলার পর চারটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিমানের আদলে তিনটি ড্রোন দিয়ে ব্রিয়ানস্কে হামলা চালানো হয়েছিল। এগুলো ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে এরপরও একটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া অরিয়ল, রিয়াজান, ব্রিয়ানস্ক, কালুগা, পসকভ অঞ্চলেও হামলা চালানো হয়েছে। পসকভের গভর্নর মিখাইল ভেদেরনিকভ জানান, হামলার জেরে পসকভে সব ফ্লাইট আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানকার বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, হামলায় ওই বিমানবন্দরে থাকা চারটি আইআই-৭৬ পরিবহন উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন লেগে দুটি উড়োজাহাজে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এই চার উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে রুশ সেনাবাহিনীর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।
এদিকে গতকাল ইউক্রেনেও হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে কিয়েভে হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানান, কিয়েভ লক্ষ্য করে ২৮টি ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। এর সব কটি ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রাশিয়ার হামলা কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বাহিনী চারটি নৌযান ধ্বংস হয়েছে।
প্রিগোশিনকে সমাহিত
এদিকে রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনকে তাঁর নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে সমাহিত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে প্রিগোশিনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এ সময় তাঁর নিকটাত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। বাবার কবরের পাশে প্রিগোশিনকে সমাহিত করা হয়। সেখানে ভাগনার গ্রুপের পতাকা উড়তে দেখা গেছে।
এখনই তদন্ত নয়
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘এ মুহূর্তে’ আন্তর্জাতিক বিধিমোতাবেক তদন্ত করতে রাজি নয় মস্কো। ব্রাজিলের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনাসংক্রান্ত তদন্ত কর্তৃপক্ষকে (সেনিপা) ক্রেমলিন এমনটা জানিয়েছে। বিধ্বস্ত হওয়া এমব্রায়ের উড়োজাহাজটি ব্রাজিলের তৈরি।
২৩ আগস্ট প্রিগোশিনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজে প্রিগোশিন, তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি উতকিনসহ সাত যাত্রী ছিলেন। আর ক্রু ছিলেন তিনজন। তাঁদের সবাই নিহত হয়েছেন।