এক দেশে দুই প্রধানমন্ত্রী
পোল্যান্ডের শাসনক্ষমতায় আট বছর ধরে রয়েছেন রক্ষণশীলেরা। বর্তমানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাতেউস মোরাউইকি। তবে চলতি সপ্তাহে দেশটিতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। মধ্যপন্থী ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বাধীন জোট গত অক্টোবরের নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পাওয়ায় এই পালাবদল।
আজ সোমবারের পর থেকে পরের তিন দিন পোল্যান্ডে ক্ষমতার পালাবদলে বেশ বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। কিন্তু ক্ষমতার পালাবদলে বিলম্ব হতে দেখা গেছে। পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা তাঁর রাজনৈতিক মিত্রদের যতটা বেশি সময় পারেন, ক্ষমতায় রাখতে চাইছেন।
মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ। দেশটির ভোটারদের বড় একটি অংশই সরকার পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। এরপরও কালক্ষেপণের ঘটনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে। তাঁদের মতে, এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যত্যয়।
পোল্যান্ডে এই পালাবদল ইউক্রেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষীয়ার রাজনীতিক ডোনাল্ড টাস্ক সাবেক ইইউ নেতা। তিনি ইউরোপীয় জোটের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে পোল্যান্ডের বিদায়ী সরকার একসময় ইউক্রেনের বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। ইউক্রেনে রুশ হামলার শুরুর পর আমরা কিয়েভের সঙ্গে ওয়ারশের ঘনিষ্ঠতা দেখেছি। খাদ্য উৎপাদনকারী ও ট্রাকচালকদের মধ্যকার অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা পোলিশদের ক্ষুব্ধ করে। এর জেরে খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় পোল্যান্ড-ইউক্রেনের সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। এই তিক্ততা সীমান্তে অবরোধ ও বিক্ষোভ অবধি গড়িয়েছে। কাজেই ডোনাল্ড টাস্কের সামনে এটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে।
পোল্যান্ডের রাজনীতিতে আগামী দিনগুলোয় কয়েক ধরনের সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।
প্রথমত, মাতেউস মোরাউইকি আজ পোল্যান্ডের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ সেজমে ভাষণ দেবেন। এরপর তাঁকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় সেই ভোটে হারতে পারেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে ছয় বছরের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হবে তাঁকে। কেননা, গত অক্টোবরের নির্বাচনে মোরাউইকির ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে আজকেই ডোনাল্ড টাস্ককে পার্লামেন্টের নেতা নির্বাচন করতে পারে সেজম। এরপর কাল তিনি আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। অবিলম্বে তাঁকেও আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ৪৬০ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তিনি সহজেই এ চ্যালেঞ্জ উতরে যাবেন।
এরপর দৃশ্যপটে নামবেন প্রেসিডেন্ট দুদা। অনুমোদন দেওয়ার পর আগামী বুধবার প্রেসিডেন্ট দুদা নতুন সরকার ও ডোনাল্ড টাস্ককে সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ পড়াতে পারেন।
পোল্যান্ডের নতুন সরকারপ্রধান হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাস্ক চলতি সপ্তাহের শেষে ব্রাসেলস সফরে যেতে পারেন। সেখানে ইইউর একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। রুশ হামলার মুখে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই সম্মেলনে আলোচনা হবে।
মোরাউইকির সরকার ইউক্রেনের সঙ্গে প্রকাশ্য অর্থনৈতিক বিরোধে জড়িয়েছে। ইউক্রেন থেকে খাবার আমদানি বন্ধ করেছে। এমনকি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করার কথাও বলেছেন মোরাউইকি।
অন্যদিকে ডোনাল্ড টাস্ক গত সপ্তাহে আন্দোলনরত ট্রাকচালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, তিনি বিদ্যমান সংকটের সমাধান চান। সেই সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা ও আন্দোলনকারীদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন তিনি।
ক্ষমতার কেন্দ্রে চূড়ান্ত পালাবদল বিলম্বিত হলেও তা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সেজমে স্পিকার পদে নিয়োগ পেয়েছেন সায়মন হলোউনিয়া। তিনি ডোনাল্ড টাস্কের রাজনৈতিক মিত্র। একসময় টিভি শো উপস্থাপনা করতেন তিনি। পোল্যান্ডে বেশ জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব সায়মন।
নতুন স্পিকারের গুরুগম্ভীর পরিবেশে কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা সেজমের অধিবেশনকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে। এর জেরে সেজমের ইউটিউব চ্যানেলে অনুসারীর সংখ্যা বেড়েছে। ক্ষমতার পালাবদলকে কেন্দ্র করে পার্লামেন্টের অধিবেশন বড় পর্দায় সরাসরি দেখানোর প্রস্তুতি নিয়েছে রাজধানী ওয়ারশের একটি সিনেমা হল।