বিবিসির বিশ্লেষণ
হঠাৎ কেন আগাম নির্বাচন চাইলেন ঋষি সুনাক
যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আগাম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। নানা জল্পনাকল্পনার পর গতকাল বুধবার বিকেলে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচনের এই ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ কেন আগাম নির্বাচন চাইছেন ঋষি সুনাক? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন বিবিসির রাজনৈতিক সম্পাদক ক্রিস ম্যাসন।
বুধবারের (২২ মে) বিকেল। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। ফটকের বাইরে থেকে গানের হালকা সুর ভেসে আসছে। বাজছে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় গান ‘থিংস ক্যান ওনলি গেট বেটার’। আইরিশ ব্যান্ড ডি: রিমের গান এটা।
এমন বৃষ্টিবিধুর পরিবেশে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। ঘোষণা দেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সুনাকের এমন ঘোষণা আকস্মিক নয়। এর আগে সকাল থেকেই এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল।
তবে অনেকের মনে আশা ছিল, জাতীয় নির্বাচন সময় মেনে আগামী শরৎকালে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনাক দুই বছর তাঁর দপ্তরে থাকতে পারবেন। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক অগ্রগতির বড় সুযোগ পাবেন সুনাক। কিন্তু সেই প্রত্যাশা অধরাই রয়ে গেল।
কয়েক দিন আগে সুনাক সরকারের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার সঙ্গে গ্রীষ্মকালে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
গতকাল (২১ মে) কনজারভেটিভ পার্টির জ্যেষ্ঠ এক নেতার সঙ্গে ঘণ্টাখানেকের বেশি কথা হলো। বুঝলাম, দীর্ঘ আলাপ–আলোচনার পরই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট দাঁড় করানো হয়েছে। ঋষি সুনাকের ঘোষণার মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট হয়ে গেল।
তবে এটা স্পষ্ট যে সিদ্ধান্তটা অনেকটা যেন ছুরির ফলার ওপর ঝুলেছিল। চাপে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী সুনাক। আগাম নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের বিষয়ে যাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে উপপ্রধানমন্ত্রী অলিভার ডওডেন নিজেও ছিলেন।
আগাম নির্বাচনের পক্ষে থাকা ব্যক্তিদের যুক্তি, পরিস্থিতি এখনকার চেয়ে আরও ভালো না–ও হতে পারে। তাই যত বিলম্ব হবে, কনজারভেটিভ সরকারের ওপর থেকে ভোটারদের আস্থা কমতে পারে। ভোটাররা মন বদলাতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের এতে ঝুঁকি বাড়বে।
তাই নির্বাচন নিয়ে মত, হয় এখনই আয়োজন করুন, নয়তো আরও খারাপ পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকুন।
আগাম নির্বাচন করলে প্রধানমন্ত্রী সুনাক তাঁর কিছু আপাতসফলতার কথা প্রচারের সুযোগ পাবেন। এর একটি হলো মুদ্রাস্ফীতির এখনকার হার। এটাকে আপাতসফলতা হিসেবে দেখাতে পারবেন সুনাক।
যদিও এটা সরকারের কাজের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে না। তবে মুদ্রাস্ফীতির হার আকাশছোঁয়া হলে সরকারকেই দায়ী করা হয়। আশা করা হয়, মুদ্রাস্ফীতিতে লাগাম টানতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সরকার। আর এর ফলে বৃহত্তর অর্থনীতির চিত্রটা আরেকটু উজ্জ্বল দেখাবে।
আরেকটি বিষয় আছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে। বেশ কিছু আশ্রয়প্রার্থীকে রুয়ান্ডায় পাঠাতে চায় যুক্তরাজ্য সরকার। এই প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই তা শুরু হতে পারে। এমনকি নির্বাচনী প্রচারের ডামাডোলেও পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা হতে পারে।
তবে বলা হচ্ছে, ভোটের লড়াইয়ে এই পরিকল্পনা প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। তাই হয়তো নির্বাচনের ডামাডোলে এটা নিয়ে নতুন করে ভাববে সরকার।
নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে–পরে লেবার পার্টিসহ অন্যরা বারবার বলবে, পরিবর্তন দরকার। আর এটা পরিবর্তনের জন্য উপযুক্ত সময়। এর বিপরীতে কনজারভেটিভরা বারবার ভোটারদের একটি কথাই বলবে—যা–ই ঘটুক না কেন, আপনি যা চান, সেটা নিয়ে সতর্ক থাকুন।
২ মে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি হয় ঋষি সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টির। এতে লেবার পার্টির আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আগাম নির্বাচনে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, জনমত জরিপের ফল সত্য প্রমাণ করে সরকার বদলে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, তারা ভুল প্রমাণিত হতে পারেন। আর সেটা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের একটি হতে পারে।