রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: ২০২৩ সালে যা যা হতে পারে
ক্যালেন্ডারের নতুন একটি বছরে প্রবেশ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ কি এ বছর শেষ হবে? হলে তা কীভাবে হবে? যুদ্ধক্ষেত্রে নাকি আলোচনার টেবিলে? কিংবা এই যুদ্ধ কি ২০২৪ সালেও গড়াতে পারে? নতুন বছরের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে এমন সব নানা প্রশ্ন মানুষের মনে আছে।
২০২৩ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কোন দিকে মোড় নিতে পারে, যুদ্ধের পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, এসব বিষয় নিয়ে কয়েকজন সামরিক বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।
‘বসন্তে রুশ হামলা হবে ভাগ্যনির্ধারক’
যুক্তরাজ্যর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী পরিচালক মাইকেল ক্লার্কের মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী বসন্তে ইউক্রেনে নতুন করে হামলা করতে পারেন। আর এ হামলা চলমান যুদ্ধের ভাগ্যনির্ধারক হতে পারে।
মাইকেল ক্লার্ক বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলায় এখন উভয় পক্ষের বিরতি দরকার। তবে যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখন ইউক্রেনীয় পক্ষ আরও ভালোভাবে সুসজ্জিত, অনুপ্রাণিত। তারা অন্তত রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখবে বলে আশা করা যায়।
মাইকেল ক্লার্কের মতে, যুদ্ধে বড় সাফল্য পেলে কিয়েভ থামবে না। যেমনটা তারা খেরসন পুনরুদ্ধারের পর দক্ষিণ-পশ্চিমে হামলা জোরদার করেছে। ফলে কিয়েভের দিক থেকে চলতি বছর হঠাৎ নতুন হামলার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
মাইকেল ক্লার্ক বলছেন, ২০২৩ সালের বসন্তে রাশিয়ার হামলা হবে এই যুদ্ধের ভাগ্যের মূল নির্ধারক। পুতিন স্বীকার করেছেন, নতুন নিযুক্ত প্রায় ৫০ হাজার সেনা ইতিমধ্যে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছেন। বাকি আড়াই লাখ সেনা এ বছর যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এই নতুন রুশ বাহিনীর ভাগ্য নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ ছাড়া অন্য বিকল্প দেখা যাচ্ছে না।
মাইকেল ক্লার্কের মতে, দুই পক্ষের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি হলেও হতে পারে। কিন্তু পুতিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি থামবেন না। অন্যদিকে ইউক্রেনও বলে দিয়েছে, তারা এখনো জীবনের জন্য লড়ছে।
‘ইউক্রেন তার ভূমি ফিরে পাবে’
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক বিশ্লেষক আন্দ্রেই পিয়নটকভস্কির মতে, ২০২৩ সালের বসন্ত নাগাদ ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার করে জয়ী হবে। দুটি কারণে এমন উপসংহার টানা যায়।
একটি হলো—ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী ও সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনীয় জাতির প্রেরণা, সংকল্প, সাহস। যা আধুনিক যুদ্ধের ইতিহাসে নজিরবিহীন। অন্যটি হলো—ইউক্রেন যে ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তার ব্যাপকতা পশ্চিমারা অবশেষে উপলব্ধি করতে পেরেছে।
‘যুদ্ধের শেষ দেখা যাচ্ছে না’
কিংস কলেজ লন্ডনের যুদ্ধ অধ্যয়ন বিভাগের বারবারা জ্যানচেটার মতে, পুতিন মনে করেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে অন্য দেশগুলোর অর্থপূর্ণ সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। কিন্তু পুতিন হিসাবে গুরুতর ভুল করেছেন। তাঁর এই ভুল যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেছে। আপাতত এই যুদ্ধের শেষ দেখা যাচ্ছে না।
বারবারা জ্যানচেটা বলেন, শীতকালটা বেশ কঠিন হবে। কারণ, রাশিয়া ইতিমধ্যে ইউক্রেনের অবকাঠামোয় হামলা চালিয়ে একটা বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তারা আরও হামলা চালাবে। এভাবে তারা ইউক্রেনীয়দের মনোবল, সহনশীলতা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে ইউক্রেনীদের সহনশীলতা যে অসাধারণ, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তারা অটল থাকবে। যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাবে।
বারবারা জ্যানচেটার মতে, আলোচনা, সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্র, আফগানে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেভাবে যুদ্ধ শেষ করেছে, ইউক্রনেও তেমনটা হতে পারে।
‘রাশিয়ার পরাজয় ছাড়া অন্য কোনো ফল নেই’
ইউরোপে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সাবেক কমান্ডিং জেনারেল বেন হজসের মতে, কিয়েভে বিজয় কুচকাওয়াজের পরিকল্পনা করার সময় হয়নি। কিন্তু যুদ্ধের সবকিছু এখন ইউক্রেনের পক্ষে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে ইউক্রেনই এই যুদ্ধে জয়ী হবে। আর তা সম্ভবত ২০২৩ সালেই হবে।
বেন হজস বলেন, শীতকালে যুদ্ধের গতি কমে যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে রাশিয়ার চেয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা শীতের পরিস্থিতির সঙ্গে আরও ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবে। কারণ, শীতে যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি থেকে যুদ্ধের নানা সরঞ্জাম ইউক্রেনে যাচ্ছে।
বেন হজসের মতে, ইতিহাস বলে, যুদ্ধ হলো ইচ্ছাশক্তির পরীক্ষা, রসদের পরীক্ষা। তিনি যখন ইউক্রেনের জনগণ ও সেনাদের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প, ইউক্রেনের রসদ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি দেখেন, তখন তিনি এই যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয় ছাড়া আর কোনো ফলাফল দেখেন না।