কিয়েভের বৈঠক থেকে বার্তা ইইউর
এমন সময় এই বৈঠক, যখন ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া নিয়ে ইইউর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।
ইউক্রেনের সমর্থনে ইইউর ২৭ সদস্য রাশিয়ার ওপর ১১ দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিয়েভকে িদয়েছে কয়েক শ কোটি ইউরোর অস্ত্র।
দীর্ঘ মেয়াদে ইউক্রেনকে সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক বৈঠকে মিলিত হন ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এই প্রথম জোটভুক্ত দেশগুলোর বাইরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এ ধরনের বৈঠক হলো।
এমন সময় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, যখন ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া নিয়ে ইইউর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে কিয়েভের পাল্টা আক্রমণের সাফল্যও সীমিত।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইইউর সদস্যদেশ, সদস্য প্রার্থী ও ভবিষ্যৎ সদস্যদের নিয়ে ইউক্রেনে একটি ঐতিহাসিক বৈঠকে বসছি।’
বোরেল বলেন, ‘এই বৈঠকের উদ্দেশ্য ইউক্রেনের জনগণের প্রতি আমাদের সংহতি ও সমর্থন জানানো।’ তবে এই বৈঠকে সুনির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্য নেই বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
এই বৈঠককে ইউরোপীয় সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা। বোরেলের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্রবিষয়ক পর্ষদ তার বর্তমান সীমানার বাইরে তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমানার বাইরে, কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ সীমানার মধ্যে বৈঠকে বসছে।
চলমান যুদ্ধের ১৯ মাস ধরে ইউক্রেনের সমর্থনে ইইউর ২৭ সদস্য ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। রাশিয়ার ওপর ১১ দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি কিয়েভকে অস্ত্রসহায়তা প্রদানে কয়েক শ কোটি ইউরো ব্যয় করছে।
দীর্ঘমেয়াদি সমর্থন
তবে কিয়েভের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার বিষয়ে জোটে বিভক্তি দেখা দেওয়ার শঙ্কা ক্রমে বাড়ছে। একই সঙ্গে কিয়েভের মূল পৃষ্ঠপোষক যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্লোভাকিয়ার জনতুষ্টিবাদী নেতা রোবের্ত ফিচোর দল দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। এখন ইইউর সমর্থনে লাগাম টানতে সঙ্গী পাবেন রাশিয়ার মিত্র হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান।
কিয়েভ ও এর সবচেয়ে কড়া সমর্থক পোল্যান্ডের মধ্যেও টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনীয় শস্য দেশটির বাজার দখল করে নিলে বিধিনিষেধ আরোপ করে ওয়ারশ। এতে আপত্তি জানায় কিয়েভ।
ইউক্রেনের প্রতি জোরালো সমর্থনে এই প্রথম জোটভুক্ত দেশগুলোর বাইরে কিয়েভে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক।
এই উদ্বেগ নিরসনের বিষয়টি উঠে আসে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথেরিন কোলনার বক্তব্যে। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জোটের যে অঙ্গীকার, এই বৈঠক মস্কোর প্রতি সেই বার্তাই দিচ্ছে।
ক্যাথেরিন বলেন, ‘এটি ইউক্রেনের প্রতি আমাদের দৃঢ় ও স্থায়ী সমর্থনেরই একটি প্রমাণ, যতক্ষণ না এই যুদ্ধে দেশটি বিজয়ী হয়। এটি রাশিয়ার কাছেও একটি বার্তা, যাতে দেশটি আমাদের ক্লান্তির ওপর ভরসা না করে। আমরা সামনে দীর্ঘ সময়ের জন্য এখানে থাকব।’
যুদ্ধ নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়বে পশ্চিম
তবে রাশিয়া মনে করছে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমাদের ক্লান্তি বাড়বে। কারণ, ইউক্রেনের জন্য নতুন তহবিল ছাড়াই সপ্তাহান্তে মার্কিন কংগ্রেসে সরকারের অর্থায়ন বিল পাস হয়। এতে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের সম্পর্ক নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। বিলে ইউক্রেনের জন্য নতুন তহবিল রাখার বিরোধিতা করেন কট্টরপন্থী রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যরা।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এই সংঘাত নিয়ে ক্লান্তি, কিয়েভ সরকারকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক পৃষ্ঠপোষকতা থেকে ক্লান্তি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বাড়বে।
সেনা পাঠাবে না যুক্তরাজ্য
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে এখনই সেনা পাঠাবে না যুক্তরাজ্য। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সামরিক প্রশিক্ষক মোতায়েনের কোনো আশু পরিকল্পনা তাঁর সরকারের নেই।
দ্য সানডে টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর গ্রান্ট শ্যাপস বলেন, ইউক্রেনে ব্রিটিশ সামরিক প্রশিক্ষক মোতায়েন করতে চান তিনি। তাঁর সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় সুনাক সরকারের অবস্থান জানান।