অস্ত্র পাচ্ছে ভাগনার, জ্বলছে বাখমুত
মস্কোর কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চেয়েছিলেন রাশিয়ার ভাড়াটে সেনাদল ভাগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। তা না পেলে ইউক্রেনে তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাখমুত যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর হুমকির পরপরই মস্কোর পক্ষ থেকে তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ভাগনার প্রধান বলেছেন, বাখমুতে লড়াই চালিয়ে যেতে তাঁকে অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মস্কো। বাখমুতে লড়াই চলবে।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রিগোশিন বলেছেন, তাঁর যত অস্ত্র ও গোলাবারুদ লাগবে, তার সবই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি এসেছে মস্কো থেকে। এর দুই দিন আগে তিনি অভিযোগ করেন, যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে বাখমুতে তাঁর সেনাদের প্রাণ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি যুদ্ধ চালাতে পারবেন না। সেনা হটিয়ে নেবেন। এ হুমকির পরপরই তিনি নতুন আশ্বাস পেলেন।
এদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। গতকাল রোববার দেশটির মাইকোলাইভের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, গতকাল ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে রাশিয়া। তবে সব কটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে।
বাখমুতে ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ
বাখমুত শহরে রাশিয়া ফসফরাস বোমা ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। দেশটির সেনাবাহিনীর প্রকাশ করা ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে বাখমুত জ্বলছে। দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ওপর থেকে সাদা ফসফরাস ছোড়া হয়েছে।
সাদা ফসফরাস হলো মোমের মতো একটি পদার্থ, যা ৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পুড়ে এবং অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে জ্বলে ওঠে। এটি উজ্জ্বল সাদা ধোঁয়ার কুণ্ডলী তৈরি করে। সাদা ফসফরাসসমৃদ্ধ অস্ত্র নিষিদ্ধ না হলেও বেসামরিক এলাকায় এর ব্যবহারকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের অস্ত্র দিয়ে হামলা করা হলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা নেভানো খুবই কঠিন।
কয়েক মাস ধরেই রুশ বাহিনী বাখমুত শহরের দখল নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের ধারণা, বাখমুতে চলমান অভিযানে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার রুশ সেনা মারা গেছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক টুইটার পোস্টে বলা হয়, ‘অগ্নিসংযোগকারী গোলা দিয়ে বাখমুতের অদখলকৃত এলাকাগুলোতে হামলা করা হয়েছে।’ তবে ঠিক কোন সময় এই হামলা চালানো হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইউক্রেনের প্রকাশ করা ফুটেজে দেখা গেছে, উঁচু ভবনগুলোর চারপাশে আগুন জ্বলছে।
বিবিসি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা ড্রোন ফুটেজটি বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, বাখমুত শহরের কেন্দ্রভাগ থেকে পশ্চিম দিকে একটি শিশু হাসপাতালের কাছে ওই ফুটেজ ধারণ করা হয়েছে। এই হামলায় অগ্নিসংযোগকারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিবিসির বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেলেও হামলায় ফসফরাসের ব্যবহার হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছিল। তবে রাশিয়া বারবারই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। গত বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছিলেন। তখন ক্রেমলিনের প্রেস সচিব দিমিত্রি পেসকভ সে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যুদ্ধে রাশিয়া কখনোই আন্তর্জাতিক রীতি ভঙ্গ করেনি।