নাভালনির মৃত্যু নিয়ে কী বললেন স্ত্রী ইউলিয়া
ক্রেমলিনের কড়া সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া বলেছেন, রাশিয়ার কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নাভালনির মৃত্যুর ঘটনা যদি সত্য হয়, তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর সহযোগীরা শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেন না।
এর আগে রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, অ্যালেক্সি নাভালনি গত শুক্রবার আর্কটিক পেনাল কলোনিতে মারা গেছেন। সেখানে তিনি ১৯ বছরের সাজা ভোগ করছিলেন। ৪৭ বছর বয়সী নাভালনি পুতিনের অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন এবং ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন।
নাভালনির ঘনিষ্ঠজনেরা জানান, তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি। তাঁরা শুধু আঞ্চলিক বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি সাধারণ ঘোষণা দেখেছেন।
ইউলিয়া নাভালনায়া গত শুক্রবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তৃতা দেন। এ সময় রাশিয়ার ‘ভয়ানক সরকারের’ বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করার আহ্বান জানান তিনি। বক্তৃতায় তিনি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ইউলিয়া বলেন, ‘আমি জানি না যে আমরা একচেটিয়াভাবে রাশিয়ার সরকারি সূত্র থেকে যে ভয়ানক সংবাদ পাচ্ছি, তা বিশ্বাস করা উচিত কি না। আমরা পুতিন ও তাঁর সরকারকে বিশ্বাস করতে পারি না।’
রুশ সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার খবর অনুযায়ী, নাভালনির মা লুডমিলা নাভালনায়া বলেছেন, ১২ ফেব্রুয়ারি যখন তিনি তাঁর ছেলেকে শেষবারের মতো দেখেছিলেন, তখন তিনি ‘জীবিত, সুস্থ ও প্রাণবন্ত’ ছিলেন।
লুডমিলা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি কোনো সমবেদনা শুনতে চাই না। আমরা তাকে (নাভালনি) ১২ তারিখে কারাগারে একটি বৈঠকে দেখেছি।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে গত বৃহস্পতিবার একটি আদালতে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে নাভালনি সবশেষ প্রকাশ্যে এসেছিলেন।
মস্কোর পূর্বে ভ্লাদিমির শহরের একটি আঞ্চলিক আদালত আরআইএ সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, নাভালনি তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিযোগ করেননি। সাম্প্রতিক সময়ে আদালতে তিনি নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
এদিকে নাভালনির প্রতিনিধিত্বকারী জার্মান আইনজীবী নিকোলাওস গাজিয়াস সংবাদমাধ্যমকে জানান, আদালতের শুনানিতে অংশ নেওয়ার ছবি দেখার পর তিনি নাভালনির মৃত্যুর খবর শুনে হতবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁকে (নাভালনি) সুস্থ ও চনমনে দেখাচ্ছিল।’
‘নাভালনি অমর হয়েছেন’
এদিকে পুতিনের অন্য বিরোধীরাও নাভালনির মৃত্যুর খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বিখ্যাত রুশ লেখক বরিস আকুনিন বলেছেন, ‘নাভালনির জন্য স্বৈরশাসকের আর কিছুই করার নেই। নাভালনি মারা গেছেন ও অমর হয়ে গেছেন।’ বার্তা সংস্থা এএফপিকে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, খুন হওয়া নাভালনি তাঁর জীবদ্দশার চেয়ে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবেন স্বৈরশাসকের জন্য। সম্ভবত পুতিন প্রতিবাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে সারা দেশে সন্ত্রাসের প্রচারণা চালাবেন।’
রাশিয়ার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী দিমিত্রি মুরাটভ নাভালনির মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে বর্ণনা করেছেন। নোভায়া গেজেটা সংবাদপত্র তাঁকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘অ্যালেক্সি নাভালনিকে তিন বছর ধরে অত্যাচার করা হয়েছিল ও যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল। নাভালনির চিকিৎসক আমাকে বলেছিলেন, শরীর এ ধরনের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারে না। কারাদণ্ডের পর এবার তাঁকে হত্যা করা হলো।’
নির্বাসিত রুশবিরোধী রাজনীতিবিদ দিমিত্রি গুডকভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘নাভালনির মৃত্যু পুতিনের একটি সাজানো হত্যাকাণ্ড। এমনকি নাভালনি যদি প্রাকৃতিক কারণেও মারা যান, তবে তা বিষক্রিয়া ও কারাগারে নির্যাতনের কারণে হয়েছে।’
ব্রিটিশ আমেরিকান ব্যবসায়ী বিল ব্রাউডার এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘পুতিন নাভালনিকে হত্যা করেছেন, কারণ তিনি পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট সাহসী ছিলেন।’ ব্রাউডার রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একজন ছিলেন। কিন্তু পরে ক্ষমতাসীনদের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠেন তিনি।