পুতিনের সঙ্গে আপস, আলোচনায় নারাজ জেলেনস্কি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির আওতায় তিনি নিজের দেশের কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেবেন না। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক বছর পূর্তি হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এই পূর্তি উপলক্ষে জেলেনস্কি বিবিসিকে এসব কথা বলেন। তিনি সতর্কতা জারি করে বলেন, রাশিয়াকে কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেওয়া মানে দেশটিকে আবার ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘এটা আপসের কথা নয়। আমরা কেন আপস করতে ভয় পাব? প্রতিদিনের জীবনে আমাদের অনেক আপস করে চলতে হয়। প্রশ্নট হলো, আপসটা কাদের সঙ্গে? পুতিনের সঙ্গে? না। কারণ, সেখানে বিশ্বাস নেই। পুতিনের সঙ্গে আলোচনা? না। কারণ, বিশ্বাস নেই।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়া বসন্তে হামলার যে আভাস দিয়েছিল, তা এর মধ্যেই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া।
জেলেনস্কি বিশ্বাস করেন, পাল্টা হামলা চালানোর মতো সক্ষমতা যত দিন আছে, তত দিন ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়াকে প্রতিহত করতে পারবে। তিনি আরও বেশি সামরিক সহায়তার জন্য পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবিসিকে জেলেনস্কি বলেন, আধুনিক অস্ত্র শান্তির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে। রাশিয়া কেবল অস্ত্রের ভাষা বোঝে। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জেলেনস্কি। তিনি ইউক্রেনের সুরক্ষার জন্য আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার আহ্বান জানান।
তবে পশ্চিমারা ধীরগতিতে অস্ত্র দেওয়ায় কিয়েভের হতাশা বাড়ছে। গত মাসে ইউক্রেনে যুদ্ধের ট্যাংক সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে ট্যাংকগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছাতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।
সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বেলারুশের হুমকির কথাও বলেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, বেলারুশের নেতা আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো হুমকি দিয়ে বলেছেন, যদি একজন ইউক্রেনের সেনাও সীমান্ত পার হয়ে তাঁর দেশের সীমায় ঢুকে পড়ে, তাহলে তিনি যুদ্ধ শুরু করবেন।
এই হুমকির কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি আশা করি, বেলারুশ যুদ্ধে যোগ দেবে না। যদি বেলারুশ এমনটা করে, তাহলে আমরা লড়াই করব। আমরা টিকে থাকব।’ হামলার জন্য রাশিয়া যদি বেলারুশকে ব্যবহার করে তাহলে বড় ভুল করবে বলেও মন্তব্য করেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট।
১২ মাস আগে রাশিয়ার বাহিনী বেলারুশের দিক দিয়ে হামলা শুরু করেছিল। রুশ বাহিনী দক্ষিণ দিক দিয়ে কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পিছু হটেছে। এর মধ্যে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। রাশিয়ার এই যুদ্ধকৌশলে বিস্মিত হয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জেলেনস্কি এসব ‘মূল্যহীন’ বলে মন্তব্য করেন।
এ সপ্তাহে প্রকাশিত ইউক্রেনের পরিসংখ্যান বলছে, ইউক্রেনে এ মাসে রুশ সেনাদের বড় অংশ নিহত হয়েছে। হামলার পরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এই মৃত্যুহার বেশি। যদিও এর সত্যতা যাচাই করা যায়নি। তবে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এই তথ্য প্রায় সঠিক।
সাক্ষাৎকারে যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে নিজের ভাবনাও জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের টিকে থাকাই আমাদের ঐক্য। আমি বিশ্বাস করি ইউক্রেন টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। অর্থনৈতিকভাবে এবং মূল্যবোধের দিক দিয়ে ইউক্রেন ইউরোপের পথে হাঁটছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা এই পথ বেছে নিয়েছি। আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। কোনো অঞ্চল নিয়ে সমঝোতায় গেলে দেশ হিসেবে আমরা দুর্বল হয়ে পড়ব।’