ধাক্কা সামলাতে পুতিন কি আরও কর্তৃত্ববাদী হবেন
ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বিদ্রোহ থেমে গেছে। বন্ধ হয়েছে মস্কো অভিমুখে তাঁর অভিযান। তিনি বেলারুশে যেতে সম্মত হয়েছেন। তবে এরপরও মস্কোয় যে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা বহাল রয়েছে। এই বিদ্রোহকে কেন্দ্র করে যেসব প্রশ্ন উঠেছে, তার অনেকগুলোরই উত্তর এখনো অজানা।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই সময়ের মধ্যে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি তিনি। তবে তিনি ভাগনারের বিদ্রোহের পর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। যদিও এই বিদ্রোহের ফলে প্রাথমিক যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল, তা মোকাবিলা করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। রুশ বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ঘটনায় পুতিন নিজেকে ততটা ক্ষমতাধর হিসেবে হাজির করেননি।
ভাগনারের বিদ্রোহের জেরে পুতিন গত শনিবার সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রিগোশিন বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এ ঘটনাকে পিঠে ছুরি চালানোর শামিল বলে আখ্যা দিয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় মস্কোয় যে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা জারি রয়েছে। অনেকেই ধারণা করছেন, পুতিন এ ঘটনাকে দুভাবে মোকাবিলা করতে পারেন। তিনি হয়তো ইউক্রেনে হামলা জোরদার করবেন। নয়তো তিনি দেশের বিরুদ্ধে যাঁরা তাঁকে সমর্থন করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আরও কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবেন।
এ প্রসঙ্গে পোল্যান্ডের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য রাদেক সিকোরস্কি বিবিসিকে বলেন, যাঁরা পুরোপুরি অনুগত নন, তাঁদের বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেবেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। আর এর অর্থ এই, তিনি আরও বেশি কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠবেন।
ভাগনারের এই বিদ্রোহের পেছনে রয়েছেন প্রিগোশিন। তিনি একজন স্বাধীন মানুষ। রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে বিদ্রোহ করেছিলেন। ব্যর্থ হয়েছেন। বলা হচ্ছে, তিনি বেলারুশে যেতে সম্মত হয়েছেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় প্রিগোশিনের সঙ্গে ক্রেমলিনের চুক্তি হয়েছে। পর্যবেক্ষকেরা এখন প্রশ্ন তুলছেন, আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো কতটুকু প্রিগোশিনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন, ভাগনার বাহিনী কি তাঁকে আর নেতা মানবে, এই বিদ্রোহের ঘটনা রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের জন্য কতটুকু হুমকির। তবে ক্রেমলিন ও ভাগনার গ্রুপের মধ্যে ঠিক কী চুক্তি হয়েছে, তা জানা যায়নি।
রুশ বিশ্লেষকেরা এটা অন্তত প্রত্যাশা করছেন না, প্রিগোশিন খুব সহজেই একেবারে মিলিয়ে যাবেন। কারণ, ভাড়াটে যোদ্ধাদের এই নেতা রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া লাখো রুশের জন্য কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন তিনি। তাঁর ছায়া হয়ে দীর্ঘদিন ছিলেন প্রিগোশিন।
ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণ থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তিনি বিষয়টি কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায় টেলিগ্রামে লিখেছেন, ভাগনার বিদ্রোহের জন্য রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই পুতিনকে দোষারোপ করবেন। তাঁরা পুতিনকে এ কারণে দোষারোপ করবেন যে তিনি সঠিক সময়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। অর্থাৎ এর মধ্য দিয়ে পুতিনের অবস্থানেই আঘাত লাগছে।