করোনা মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে ইতালি। দিন দিন বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতিসহ নানামুখী চ্যালেঞ্জে চাপে দেশটি। এরই মধ্যে আবার প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি পদত্যাগ করেছেন। ফলে দেশটিতে নতুন করে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইতালিতে মারিও দ্রাগির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট সরকারে বেশ কিছুদিন ধরেই ভাঙনের সুর দেখা দিয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে আর জোটের সদস্য দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোড়া লাগাতে গতকাল বুধবার পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের ডাক দিয়েছিলেন দ্রাগি। তবে এতে জোটের তিনটি দলের সাড়া পাননি তিনি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেলার কাছে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মাত্তারেলা জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। তবে দ্রাগি পদত্যাগ করলেও আগামী শরতে নির্বাচনের আগপর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে তাঁর সরকার।
কেন পদত্যাগ করলেন দ্রাগি
দ্রাগি অবশ্য গত সপ্তাহেই পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। ইতালিতে জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি সামাল দেওয়া নিয়ে অনুষ্ঠিত এক আস্থা ভোটে জোটের সদস্য দল ফাইভ স্টার মুভমেন্ট দ্রাঘিকে সমর্থন না দিলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সেবার দ্রাগির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি মাত্তারেলা। আগামী বছরের শুরুর দিকে দ্রাগি সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় পর্যন্ত সরকার টিকিয়ে রাখতে কোনো উপায়ে জোট সদস্যদের রাজি করানো যায় কি না, পালামেন্টে সে চেষ্টা চালিয়ে যেতে দ্রাগিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট।
এরপরই বুধবার আস্থা ভোটের আয়োজন করেন দ্রাগি। ওই ভোটে সিনেটে জয়লাভ করেন তিনি। তবে ভোট জোটের তিন দল বর্জন করলে সরকার টেকানোর আশা শেষ হয়ে যায়। দলগুলো হলো ফাইভ স্টার মুভমেন্ট, ফোরজা ইতালিয়া ও দ্য লিগ।
যে কারণে সংকটের সূত্রপাত
২০২১ সালে ইতালির প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাবেক প্রধান দ্রাগি। করোনা মহামারির ধাক্কায় বেসামাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে জোট সরকার গঠন করেন তিনি।
এই জোটের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় কমিশনকে নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। বিনিময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মহামারি–পরবর্তী পুনরুদ্ধার তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পায় ইতালি।
তবে ইতালিতে পড়তির দিকে থাকা অর্থনীতি টেনে তুলতে তেমন সফলতা পাননি দ্রাগি। কারণ, জোট সরকারের দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও মতবিরোধ। ঘটনা আরও তিক্ততার দিকে এগোয় চলতি বছরের শুরুর দিকে। ইতালির এক হাজারের বেশি পার্লামেন্ট সদস্য ও আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের একটি ভোটাভুটিতে দ্রাগি অংশ না নেওয়ায় জোটের মধ্যে আরও বেশি টানাপোড়েন দেখা দেয়।
এখন কী হবে
সরকার ভেঙে যাওয়ার ৭০ দিনের মধ্যে ইতালিতে নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিয়ে দেশের জরুরি বিষয়াদির দেখভাল করবেন দ্রাগি।
এদিকে সরকারের পতনের পর ইতালির পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন দ্রাগির সমর্থকেরা। তাঁদের মতে, এর ফলে ব্যাপক হারে বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতির সময় সরকারের পতন সামাজিক অবক্ষয় বাড়াতে পারে। এ ছাড়া বার্ষিক বাজেট প্রদানে দেরি হওয়া, ইইউর মহামারি–পরবর্তী পুনরুদ্ধার তহবিল থেকে সহায়তা হুমকির মুখে পড়া, এমনকি আর্থিক বাজার ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা দেখা দিতে পারে।