দ্বিতীয় দফার ভোটে জয় নিশ্চিত করতে চান তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ জন্য তিনি ভোটে তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিনান ওগানের কাছে সমর্থনের জন্য অনুরোধ করবেন। তুরস্কের জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হয়েছে গতকাল রোববার। এতে এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারওলুর জয়ের সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেছে।
কিলিচদারওলুর পক্ষ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি খুশি নয়। তাঁরা নির্বাচনের কৌশল পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছে।
গত রোববারের ভোটে এরদোয়ানের শক্তিশালী অবস্থান পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী কিলিচদারওলু পেয়েছেন ৪৫ শতাংশ ভোট। অথচ জনমত জরিপগুলোয় বলা হচ্ছিল, এরদোয়ানের দুই দশকের শাসনের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, তুরস্কে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে রানঅফ বা দ্বিতীয় দফায় ভোটে যেতে হবে। সেই হিসাবে, ২৮ মে দ্বিতীয় দফার ভোট হবে। দ্বিতীয় দফার ভোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে আরও দুই সপ্তাহ প্রচারের সুযোগ পাচ্ছেন দুই পক্ষের নেতারা। দুই পক্ষের কর্মকর্তাদের সাক্ষাতে দ্বিতীয় দফার নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। এরদোয়ানের পক্ষ সিনান ওগানের সঙ্গে চুক্তি করে তারা ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। এবারের নির্বাচনে ৫ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন সিনান। তাঁর সমর্থন পেলে সহজেই দ্বিতীয় দফায় এরদোয়ান জিতবেন বলে মনে করছেন তাঁর দলের কর্মীরা।
অন্যদিকে কিলিচদারওলুর পক্ষ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি খুশি নয়। তাঁরা নির্বাচনের কৌশল পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছে। নির্বাচনের আগে তাঁরা এরদোয়ানের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন হটিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছিল।
কিলিচদারওলুর পক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁর জোট জাতীয়তাবাদী ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী টানতে সক্ষম হননি। এর কারণ কিলিচদারওলু বড় কুর্দি পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর বিপক্ষ জোটের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, কিলিচদারওলুর পুরো কৌশল পুনর্গঠন করা উচতি। এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একে পার্টির উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দ্বিতীয় দফার ভোটে আমাদের জেতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এখন ওগানের সমর্থন মূল বিষয়।’
ওগান হলেন দ্বিতীয় দফার ভোটের কিংমেকার। তিনি বলেছেন, তিনি দুই দলের সঙ্গে দর–কষাকষি করবেন। কিন্তু এরদোয়ানের পক্ষ থেকে বেশি প্রস্তাব থাকবে।
গত সোমবার ওগান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিলিচদারওলুকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর শর্ত সামনে আনেন। তিনি বলেন, কিলিচদারওলু যদি কুর্দিপন্থী কুর্দিশ পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এইচডিপি) কোনো ছাড় না দেন, তবে তিনি তাঁর পক্ষ নেবেন। রোববারের নির্বাচনে গ্রিন লেফট পার্টির অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এইচডিপি।
এরদোয়ান ও কিলিচদারওলু দুজনের পক্ষ থেকেই শিগগিরই ওগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা বলা হচ্ছে। রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় এরদোয়ানের সঙ্গে ওগানের জোট সহজ বলে মনে হচ্ছে। তবে এ দলে ইসলামিস্ট কুর্দিশ পার্টির বিরোধিতা করে আসছেন ওগান।
ইস্তাম্বুলভিত্তিক রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাকান আকবাস বলেন, ‘ওগান হলেন দ্বিতীয় দফার ভোটের কিংমেকার। তিনি বলেছেন, তিনি দুই দলের সঙ্গে দর–কষাকষি করবেন। কিন্তু এরদোয়ানের পক্ষ থেকে বেশি প্রস্তাব থাকবে।
এরদোয়ানের ক্ষমতার তৃতীয় দশক শুরু হলে তা নাগরিক অধিকারকর্মীদের হতাশ করবে। এতে আঙ্কারার গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মস্কোর উৎসাহ বাড়বে। তবে ওয়াশিংটনসহ ইউরোপের অনেক দেশের ইচ্ছা পূরণ হবে না। কারণ, এসব দেশের সঙ্গে এরদোয়ান প্রশাসনের সম্পর্ক খুব ভালো নয়।
আঙ্কারায় দলের সদর দপ্তরের বারান্দায় সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন এরদোয়ান। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রথম দফা ভোটে নির্বাচন শেষ হবে কি না, আমরা এখনো তা জানি না। কিন্তু দেশের মানুষের ইচ্ছায় দ্বিতীয় দফায় লড়তে প্রস্তুত রয়েছি আমি।’