পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ইচ্ছুক যুদ্ধবিরোধী প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
রাশিয়ার এক সাবেক টিভি সাংবাদিক ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি দেশটির আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াবেন, ভ্লাদিমির পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। কিন্তু তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।
সাবেক এই টিভি সাংবাদিকের নাম ইয়েকাতেরিনা ডান্টসোভা (৪০)। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের ইতি টানার উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র রাজনীতিবিদ ইয়েকাতেরিনা নির্বাচনে লড়তে চেয়েছিলেন।
কিন্তু ইয়েকাতেরিনার আবেদনের তিন দিন পর গতকাল শনিবার তাঁর প্রার্থিতা বাতিলে সর্বসম্মতভাবে ভোট দেয় দেশটির নির্বাচন কমিশন।
কমিশন ইয়েকাতেরিনার আবেদন ফরমে ১০০টি ‘ভুলের’ কথা উল্লেখ করেছে।
ইয়েকাতেরিনা বলেছেন, তিনি কমিশনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে আপিল করবেন।
২০২৪ সালের মার্চে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় দুই বছর আগে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন শুরু করেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
পুতিনের এই সমালোচকের (ইয়েকাতেরিনা) বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাকে কেউ কেউ আসন্ন নির্বাচনে যে কোনো ভিন্নমত সহ্য করা হবে না, তার প্রমাণ হিসেবে দেখবেন।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনের প্রধান এলা পামফিলোভা বলেছেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য হাজারো সমর্থকের স্বাক্ষর সংগ্রহের পরবর্তী পর্যায়ে ইয়েকাতেরিনাকে অগ্রসর হতে দেওয়া হবে না।
সাবেক এই টিভি সাংবাদিক গত নভেম্বর মাসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন।
তখন ইয়েকাতেরিনা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি এই পদক্ষেপ নিতে ভয় পাবেন। তবে ভয়কে জয়ী হতে দেওয়া উচিত নয়।
২০২০ সালে রাশিয়ার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এই সংশোধনীর মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মেয়াদকাল চার বছর থেকে বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়। এ পদক্ষেপ আগের হিসাব মুছে পুতিনকে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়।
মস্কো বছরের পর বছর ধরে বিরোধী নেতাদের নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিন জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ক্রেমলিনের দাবি, রাশিয়ার জনগণের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই পুতিনের সমর্থন আছে।
ইয়েকাতেরিনা ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানা এবং রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্ত করার জন্য একটি প্রচার চালানোর পরিকল্পনা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান ইয়েকাতেরিনা। তাঁর টেলিগ্রাম চ্যানেলে এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘যেহেতু এ সিদ্ধান্ত আইনের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া নয়, তাই আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করব।’
রাশিয়ার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এখন পর্যন্ত ২৯ জন আবেদন করেছেন। তবে কমিশনের গতকালের সিদ্ধান্তের পর দেখা যাচ্ছে, এখন পুতিনই একমাত্র প্রার্থী, যিনি আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করতে পারবেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কৌশলের তীব্র সমালোচনাকারী এক রুশ জাতীয়তাবাদী যুদ্ধপন্থী ব্লগার গত মাসে বলেছিলেন, তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে চান। ভুয়া ভোটকে তিনি প্রতিরোধ করতে চান।
রুশ প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমিক পোস্ট দিয়েছিলেন ৫২ বছর বয়সী ব্লগার ইগর গিরকিন। এর ধারাবাহিকতায় গত জুলাই মাসে তাঁকে আটক করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। উগ্রবাদের অভিযোগে তাঁর বিচার হবে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইগর।