বিপর্যয়ের মুখে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা

বৈদ্যুতিক অবকাঠামোয় রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার ৪০ শতাংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইউক্রেনের জনজীবন। গতকাল ইউক্রেনের লিভিভ শহরে
ছবি: এএফপি

রাশিয়ার নতুন কৌশলের হামলায় বিপাকে পড়েছে ইউক্রেন। এতে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউট নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ইউক্রেনের জাতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি সম্ভাব্য বিদ্যুৎ–ঘাটতির কারণে নাগরিকদের ‘সবকিছু চার্জ’ দিয়ে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে।

ইউক্রেনে বৈদ্যুতিক অবকাঠামোয় হামলায় রাশিয়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ইরানের তৈরি কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করছে। এতে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ–ব্যবস্থার ৪০ শতাংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ব্ল্যাকআউটের প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ইউক্রেনার্গো নাগরিকদের পরামর্শ দিয়ে বলেছে, পর্যাপ্ত পানি মজুত করুন। গরম মোজা, কম্বল প্রস্তুত রাখুন। স্বজন, বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে থাকুন।

প্রতিষ্ঠানটি নাগরিকদের আরও বলেছে, ফোন, পাওয়ার ব্যাংক, টর্চ, ব্যাটারি চার্জ দিয়ে রাখুন। খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করার পর থেকে এসব অঞ্চল পুনরুদ্ধারে হামলা জোরদার করে ইউক্রেন।

এরপর রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগ সেতু ‘কার্চ ব্রিজে’ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে পাল্টাহামলা জোরদার করে রাশিয়া। হামলার নতুন কৌশল হিসেবে ইউক্রেনের বৈদ্যুতিক স্থাপনাকে বেছে নেওয়া হয়। রুশ বাহিনীর হামলায় গত ১০ দিনে ইউক্রেনের ৩০ থেকে ৪০টি বিদ্যুৎ অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমন সময়ে এসব অবকাঠামো ধ্বংস হলো, যখন ইউক্রেনে শীত আসতে শুরু করেছে। ফলে এগুলো দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করতে হচ্ছে কিয়েভ সরকারকে। এর ফলে দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের নতুন সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সূচি অনুসারে, সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে বেশ কয়েকবার বিদ্যুৎ নাও থাকতে পারে। তবে গত বুধবার বিদ্যুৎহীন রাত পার করেছে কিয়েভ।

আরও পড়ুন

গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে একটি বাতি জ্বালিয়ে কাজ চালান। প্রতিটি বাড়িতে যদি খুব অল্প পরিমাণেও বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো যায়, তবে জাতীয় বিদ্যুৎ বিতরণ–ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আসবে।

রুশ হামলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিতরণ–ব্যবস্থার পাশাপাশি পানি সরবরাহের ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে রাশিয়ার প্রতি ইউক্রেনের জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়ছে। দিনিপ্রো অঞ্চলের বাসিন্দা ওলগা বলেন, ‘পানি না থাকুক, বিদ্যুৎ না থাকুক, রাশিয়ার নাগরিক হওয়ার চেয়ে আমি ঠান্ডায় বসে থাকব।’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এমন হামলায় আমাদের তেমন কিছুই পরিবর্তন হবে না। উল্টো রাশিয়ার প্রতি আমাদের ঘৃণা আরও বাড়বে।’

লোডশেডিং ও সুপেয় পানিসংকটের বড় প্রভাব পড়েছে কিয়েভেও। সেখানে সুপেয় পানিসংকট হতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেকেই পানি কিনে মজুত করছেন।

ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। তিনি বলেন, মানুষের ক্ষুধা ও বিদ্যুৎকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।

ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা

রাশিয়াকে কামিকাজে ড্রোন দেওয়ায় ইরানের তিন জেনারেল ও অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ।

ওই তিন জেনারেল হলেন ইরানের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মেদ হোসেইন বাঘেরি, সামরিক রসদবিষয়ক কর্মকর্তা জেনারেল সাইদ হোজাতুল্লাহ ও রেভল্যুশনারি গার্ডের ড্রোন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদ আঘাজানি। এ ছাড়া এই ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাহেদ অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। তবে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, তা এখনো জানানো হয়নি।