বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ: ইউরোপের কোথায় কী অবস্থা
জার্মানিতে সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। দেশটির বিরোধী দল সিডিইউ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা ক্ষমতায় গেলে এক বছরের জন্য তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে আইন তৈরির চেষ্টা করবে।
২০১১ সাল পর্যন্ত জার্মানিতে এ ব্যবস্থা চালু ছিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা ও জার্মান সামরিক বাহিনীতে কর্মীর অভাবের কারণে সিডিইউ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস বলেছেন, এই গ্রীষ্মের মধ্যে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে চান যে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি প্রস্তাব করবেন কি না। এ ক্ষেত্রে তিনি সুইডেনে চালু থাকা ব্যবস্থা মূল্যায়ন করে দেখছেন। ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।
সুইডেন
২০১০ সালে সুইডেন বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণব্যবস্থা স্থগিত করেছিল। রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর এটি আবার চালু করা হয়। ফলে ১৮ বছর হলে সুইডিশ তরুণ-তরুণীদের মূল্যায়নের জন্য উপস্থিত হতে হয়। তাঁদের মধ্যে একটি অংশকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ নারী–পুরুষ সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে আগ্রহ দেখান, তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
সুইডেনে মূল্যায়নে উপস্থিত হওয়া বাধ্যতামূলক, তবে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়টি ঐচ্ছিক। ২০২৩ সালে সুইডেন কমিউনিটি সেবাও বাধ্যতামূলক করেছে।
ডেনমার্ক
ডেনমার্কে ১৮ বছরের পর থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে সেটা শুধু ছেলেদের জন্য প্রযোজ্য। অবশ্য ২০২৬ সাল থেকে মেয়েদেরও এ নিয়ম মানতে হবে। এ ছাড়া সামরিক প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৪ মাস থেকে বেড়ে হবে ১১ মাস।
নরওয়ে
নরওয়েতে ২০১৬ সাল থেকে ছেলে ও মেয়ে উভয়কেই সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য উপস্থিত হতে হচ্ছে। এরপর তাঁদের মেডিকেল পরীক্ষা করে দেখা হয়, তাঁরা যোগ্য কি না। তবে খুব অল্পসংখ্যক ছেলেমেয়েকে কাজ করার জন্য ডাকা হয়।
অস্ট্রিয়া
অস্ট্রিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ সব সময় বাধ্যতামূলক। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে সে দেশের পুরুষদের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে যেকোনো সময় ছয় মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয়। যাঁরা নৈতিক কারণে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে চান না, তাঁরা ৯ মাসের জন্য কমিউনিটি সেবা করতে পারেন।
তুরস্ক
তুরস্কে ২০ থেকে ৪১ বছর বয়সী সব পুরুষের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। প্রশিক্ষণের মেয়াদ অন্তত ছয় মাস। কেউ প্রশিক্ষণ নিতে রাজি না হলে জরিমানা,
এমনকি কারাগারেও যেতে হতে পারে।
কেউ চাইলে পাঁচ হাজার ইউরো দিয়ে প্রশিক্ষণের মেয়াদ এক মাস কমাতে পারে।
গ্রিস
গ্রিসে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের সর্বোচ্চ ১২ মাসের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে স্থান ও ইউনিট অনুযায়ী ব্যতিক্রম আছে।
লাটভিয়া
বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী পুরুষদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে হয়। সেখানে প্রশিক্ষণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১১ মাস। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বিষয়টি ঐচ্ছিক।