প্রিগোশিনের মৃত্যু: রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবিকে সন্দেহ
ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পেছনে ক্রেমলিনের হাত আছে বলে সন্দেহ করেছেন অনেকে। আর যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের ধারণা, এ ঘটনায় জড়িত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস-এফএসবি।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একসময়কার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিই পরে এফএসবি নাম পায়। এই কেজিবিতে দীর্ঘ সময় কর্তকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বর্তমানে পুতিনের বিশ্বাসভাজন হিসেবে পরিচিত এফএসবি। সংস্থাটি রাশিয়ার সীমান্ত বাহিনীকে পরিচালনার দায়িত্বেও রয়েছে।
আগেও এফএসবির গোয়েন্দারা পুতিনের হয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ায় রাশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। সন্দেহের তির যায় এফএসবির দিকে। তবে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন নাভালনি।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ‘এমব্রেয়ার লিগেসি’ নামের ব্যক্তিগত ওই উড়োজাহাজটি রাশিয়ার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাচ্ছিল। পথে কুঝেনকিনো এলাকায় বিধ্বস্ত হয় সেটি। উড়োজাহাজে থাকা সাত যাত্রীর মধ্যে ছিল প্রিগোশিন ও ভাগনারের আরেক শীর্ষ নেতা দিমিত্রি উতকিনের নাম। বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেটিতে থাকা ১০ আরোহীর কেউ বেঁচে নেই বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। তবে প্রিগোশিনের মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি রাশিয়া।
এদিকে এ ঘটনার পর তদন্ত শুরু করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থলে তদন্তকারীদের মরদেহবাহী কালো ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেখানে কয়েকটি তাঁবুও খাটানো হয়েছে। তবে কী কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানাননি তদন্তকারীরা। যদিও ভাগনারের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোনের দাবি, উড়োজাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
একসময় প্রিগোশিনের পরিচয় ছিল পুতিনের ‘পাঁচক’ হিসেবে। তখন থেকেই ঘনিষ্ঠতা দুজনের। সে সূত্র ধরেই ভাগনারের হাল ধরেন প্রিগোশিন। ভাগনার রাশিয়ার হয়ে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধেও মস্কোর বড় সফলতা এসেছে বাহিনীটির হাত ধরে। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৩ জুন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোশিন। ঘটনাটি ছিল ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। পরে অবশ্য বিদ্রোহ থেকে পিছু হটেছিলেন প্রিগোশিন। তবে ভাগনারের ওই বিদ্রোহকে ‘পিঠে ছুরি মারার মতো’ বলে আখ্যা দেন পুতিন। অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা ছিল, বিদ্রোহের পরিণতি প্রিগোশিনের জন্য মোটেও ভালো হবে না।