২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের যে ঘোষণায় পুরো বিশ্ব হতবাক হয়েছিল

প্রদর্শনীতে নোবেল পুরস্কার মেডেলের রেপ্লিকা
ছবি: রয়টার্স

৫০ বছর আগে উত্তর ভিয়েতনামের লি ডাক থোর সঙ্গে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এ পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

১৯৭৩ সালের এই নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন উত্তর ভিয়েতনামের বিপ্লবী, জেনারেল, কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ লি ডাক থো। অন্যদিকে কিসিঞ্জার এই পুরস্কার গ্রহণের জন্য অসলোতে যাওয়ারই সাহস করেননি।

পুরস্কারের ঘোষণাটি তাৎক্ষণিক বিশ্বজুড়ে তুমুল বিতর্কের জন্ম দেয়। সিদ্ধান্তটি শুনে পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে পড়ে।

সিদ্ধান্তটি নিয়ে তুমুল বিতর্কের জেরে পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটির দুজন পদত্যাগ করেন।

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার
ছবি: রয়টার্স

পুরস্কারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নরওয়ের নোবেল কমিটির সদস্যদের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল। পাঁচ সদস্যের কমিটির দুজন পদত্যাগও করেন। এমন ঘটনা এ পুরস্কারের ইতিহাসে প্রথম ঘটেছিল।

নরওয়েজীয় নোবেল ইতিহাসবিদ অ্যাসলে সভিনের ভাষায়, এ সিদ্ধান্ত ছিল একটি পূর্ণ ব্যর্থতা।

অ্যাসলে বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কারের পুরো ইতিহাসে এটা ছিল সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত।

১৯৭৩ সালের ১৬ অক্টোবর পুরস্কারের ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছিল। ঘোষণায় বলা হয়েছিল, নরওয়ের নোবেল কমিটি কিসিঞ্জার ও উত্তর ভিয়েতনামের মুখ্য শান্তি আলোচক লি ডাক থোকে যৌথভাবে এ পুরস্কার দিচ্ছে। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য তাঁদের এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।

একই বছরের ২৭ জানুয়ারি কিসিঞ্জার ও লি ডাক থো ভিয়েতনামে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে প্যারিস শান্তি চুক্তি সই করেছিলেন।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে অ্যাসলে বলেন, এটা কোনো শান্তি চুক্তি ছিল না। বরং তা ছিল একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি, যা দ্রুত ভেস্তে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়ানোসহ লেজেগোবরে অবস্থা নিয়ে দেশটিতে (যুক্তরাষ্ট্র) প্রবল বিরুদ্ধ মনোভাব বিরাজ করছিল। এমন প্রেক্ষাপটে এ চুক্তি ছিল মূলত ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের একটি সুযোগ।

১৯৭৩ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য নিউইয়র্ক টাইমস একটি সমালোচনামূলক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। এর শিরোনাম ছিল ‘নোবেল যুদ্ধ পুরস্কার’।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নরওয়ের পার্লামেন্টে চিঠি দেন।

মার্কিন ব্যঙ্গাত্মক গানের গায়ক টম লেহরার খোঁচা মেরে বলেছিলেন, এ ঘোষণার কাছে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ পর্যন্ত হেরে গেছে।

আরও পড়ুন

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে কিসিঞ্জারের প্রভাব ছিল ব্যাপক। এ সমকালের মধ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও (১৯৬৯-১৯৭৭ সাল) পালন করেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বিশেষ করে কিসিঞ্জার ছিলেন সবার সমালোচনার নিশানায়। কারণ, তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধ, চিলিতে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাসহ নানা ইস্যুতে কুখ্যাতি কুড়িয়েছিলেন।