মুখের একধরনের ব্যাকটেরিয়া কিছু ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে পারে: গবেষণা
মানুষের মুখের ভেতরের সাধারণ ধরনের একটি ব্যাকটেরিয়া নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার কোষ ‘গলিয়ে’ ফেলতে বা ধ্বংস করতে পারে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা এনএইচএস পরিচালিত ট্রাস্ট গাইস অ্যান্ড সেন্ট টমাস এবং কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের মুখে পাওয়া সাধারণ ধরনের এ ব্যাকটেরিয়াটির নাম ফুসোব্যাকটেরিয়াম। তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, মাথা ও ঘাড় এলাকায় ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে যাদের ক্যানসার কোষে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে, তাদের চিকিৎসায় তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়।
গবেষক দলটি এখন এ যোগসূত্রের পেছনে ঠিক কোন জৈবিক প্রক্রিয়াটি কাজ করছে, তা জানার চেষ্টা করছেন।
মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের মধ্যে আছে মুখের ক্যানসার, গলার ক্যানসার, স্বরতন্ত্রের ক্যানসার, নাক এবং সাইনাসের ক্যানসার।
সংবাদ সংস্থা পিএ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জ্যেষ্ঠ গবেষক মিগুয়েল রেইস ফেরেইরা বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারের মধ্যে যদি এসব ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব থাকে, তবে চিকিৎসায় তুলনামূলক বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়। কোষের ধরন বিশ্লেষণ করে আমরা আরও দেখেছি যে এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যানসার ধ্বংস করতে পারে।’
গবেষণার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা একটি পরীক্ষাগারে ক্যানসার কোষের ওপর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব পরীক্ষা করে দেখেছেন। পাশাপাশি তাঁরা মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ১৫৫ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।
গবেষকেরা শুরুতে ভিন্ন ফল পাবেন বলে ধারণা করেছিলেন। কারণ, এর আগের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল ফুসোব্যাকটেরিয়ামের উপস্থিতি পেটের ক্যানসারকে বাড়িয়ে দেয়।
পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের জন্য গবেষকেরা পরীক্ষাগারে ব্যবহৃত বিশেষ পাত্রে ব্যাকটেরিয়া নিয়ে তা কয়েক দিন ধরে ফেলে রাখেন। এরপর ক্যানসারের ওপর ওই ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব কী তা জানতে আবারও পরীক্ষাগারে যান তাঁরা। বিজ্ঞানীরা দেখেন, ক্যানসারের জীবাণু প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফুসোব্যাকটেরিয়ামে আক্রান্ত হওয়ার পর মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার কোষে থাকা কার্যকর ক্যানসার কোষের সংখ্যা ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ কমে গেছে।
রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যাদের ক্যানসার কোষের মধ্যে ফুসোব্যাকটেরিয়ামের অস্তিত্ব আছে, তাদের বেঁচে থাকার হার ফুসোব্যাকটেরিয়াম না থাকা ক্যানসার রোগীর তুলনায় ভালো।
মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত যেসব ব্যক্তির ক্যানসার কোষে ফুসোব্যাকটেরিয়াম পাওয়া যায়, তাদের মৃত্যুর হার ফুসোব্যাকটেরিয়াম না থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম।
গবেষকদের আশা, তাঁদের এ গবেষণার তথ্য মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
গবেষক রেইস ফেরেইরা বলেন, পরীক্ষাগারে কাজ শুরুর আগে গবেষকেরা ভেবেছিলেন যে ফুসোব্যাকটেরিয়াম এসব ক্যানসারকে বাড়িয়ে দেয়। ক্যানসার কোষে ফুসোব্যাকটেরিয়াম থাকলে রেডিওথেরাপির মাধ্যমে ওই ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে গবেষণায় তাঁরা ভিন্ন চিত্র দেখেছেন। এতে দেখা গেছে, এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ক্যানসারের জীবাণু পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারে।
‘ক্যানসার কোষে খুব সামান্য পরিমাণে এটা (ফুসোব্যাকটেরিয়াম) রেখে দেখুন। দ্রুতই তা এটিকে (ক্যানসার কোষ) ধ্বংস করতে শুরু করবে।’ বলেন রেইস ফেরেইরা।
কিংস কলেজ লন্ডনের জ্যেষ্ঠ গবেষক অঞ্জলি চন্দর বলেন, ‘আমাদের গবেষণার ফল লক্ষণীয় এবং বেশ চমকপ্রদ। যখন আমরা দেখলাম আমাদের আন্তর্জাতিক সহকর্মীরাও এ আবিষ্কারকে পাকাপোক্ত প্রমাণের জন্য একই ধরনের তথ্য পেয়েছে, তখন তা অনেক আনন্দের ছিল।’
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত ২০ বছরে মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার চিকিৎসায় খুব কমই অগ্রগতি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবারের গবেষণার ফলাফল ভবিষ্যতে নতুন চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহারের দুয়ার খুলে দেবে।