২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মন্দ কপাল নিয়ে এসেছিলেন প্রিগোশিন : পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন
ফাইল ছবি: এএফপি

ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার এক দিন পর এই বিষয়ে নীরবতা ভেঙেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রিগোশিনকে মন্দ কপাল নিয়ে জন্মানো এক মেধাবী ব্যবসায়ী হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রিগোশিনকে নব্বই দশকের শুরু থেকে চিনতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত জুনে ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের দিকে ইঙ্গিত করে পুতিন বলেন, ‘এই ব্যক্তি জটিল ভাগ্য নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনে মারাত্মক ভুল করেছিলেন।’

মস্কোর কাছে টিভিয়ের অঞ্চলের কুঝেনকিনো গ্রামে বিধ্বস্ত হওয়া প্রিগোশিনকে বহনকারী উড়োজাহাজ
ছবি: এএফপি

গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রিগোশিনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ‘এমব্রেয়ার লিগেসি’ রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজে প্রিগোশিন এবং তাঁর ডান হাত হিসেবে পরিচিত দিমিত্রি উতকিনসহ সাতজন যাত্রী ছিলেন। আর ক্রু ছিলেন তিনজন। তাঁদের সবাই নিহত হয়েছেন।

মস্কো থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে টিভিয়ের এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেই খবর আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়। বিষয়টি নিয়ে ওই দিনই প্রতিক্রিয়া জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, পোল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে। তারা এই ঘটনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দায়ী করেছে। এরপর দেওয়া ওই টেলিভিশন ভাষণে পুতিন বলেছেন, উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়েছে গতকাল সকালে। এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ হতে সময় লাগবে। ভাষণে ইউক্রেনে লড়াইয়ে ভাগনার গ্রুপের অবদানের কথাও উল্লেখ করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

আরও পড়ুন

একসময় প্রিগোশিনের পরিচয় ছিল পুতিনের ‘পাচক’ হিসেবে। তখন থেকেই ঘনিষ্ঠতা দুজনের। সেই সূত্র ধরে ভাগনারের হাল ধরেন প্রিগোশিন। ভাগনার রাশিয়ার হয়ে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধেও মস্কোর বড় সফলতা এসেছে বাহিনীটির হাত ধরে। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে গত ২৩ জুন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোশিন। ঘটনাটি ছিল ১৯৯৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। পরে অবশ্য বিদ্রোহ থেকে পিছু হটেছিলেন প্রিগোশিন। তবে ভাগনারের ওই বিদ্রোহকে ‘পিঠে ছুরি মারার মতো’ বলে আখ্যা দেন পুতিন। অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা ছিল, বিদ্রোহের পরিণতি মোটেও ভালো হবে না প্রিগোশিনের জন্য। কারণ, পুতিন তাঁর শত্রুদের ছেড়ে দেন না।

সন্দেহে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি

বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজ থেকে ব্যাগে করে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
ছবি: রয়টার্স

প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। ভাগনার গ্রুপের টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন বলেছে, রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোও প্রিগোশিনকে বহনকারী উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার কথা বলছে। তাদের ধারণা, এখানে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) হাত রয়েছে। এই এফএসবিই সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলে পরিচিত ছিল কেজিবি নামে। কেজিবির একজন কর্মকর্তা ছিলেন পুতিন। এফএসবিতে তাঁর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

এর আগেও এফএসবির গোয়েন্দারা পুতিনের হয়ে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমন ২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ায় রাশিয়ার প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। সন্দেহের তির যায় এফএসবির দিকে। তবে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন নাভালনি।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়াটা নিছক দুর্ঘটনা বলে মানতে নারাজ ফ্রান্সও। একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে ফরাসি সরকারের মুখপাত্র অলিভিয়ের ভেরান বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ করার যুক্তিসংগত কারণ তাঁদের হাতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, প্রিগোশিনের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের খবরে তিনি মোটেই অবাক হননি। কারণ, রাশিয়ায় এমন ঘটনা খুব কমই ঘটেছে, যেগুলোর পেছনে পুতিন কলকাঠি নাড়েননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ভাগনারপ্রধানের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের পেছনে কাদের হাত আছে, ‘তা সবাই জানে’। উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় পুতিনের দিকে আঙুল তুলেছে সুইডেন, জার্মানি, পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়াও।

আরও পড়ুন

বিধ্বস্তের মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, টিভিয়ের এলাকার কুঝেনকিনো গ্রামে আকাশ থেকে একটি উড়োজাহাজ নিচের দিকে পড়ছে। এ সময় সেটি থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। মাটিতে পড়ার পর উড়োজাহাজটিতে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। এরপর উড়োজাহাজটি মাটিতে এসে পড়ে। আনাতোলি নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আকাশে যে শব্দটি হয়েছিল, সেটি বজ্রপাতের মতো ছিল না। এটা ধাতব কিছু বিস্ফোরণের শব্দ ছিল।

এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে তদন্তকারীদের মরদেহবাহী কালো ব্যাগ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সেখানে কয়েকটি তাঁবুও খাটানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

ভাগনার সমর্থকদের শোক

অস্থায়ী স্মৃতিসৌধে শোক জানাতে আসেন অনেকেই
ছবি: রয়টার্স

বিধ্বস্ত উড়োজাহাজে প্রিগোশিন ছিলেন— এমন খবর জানার পর শোক প্রকাশ করেছেন ভাগনার গ্রুপের অনেক সমর্থক। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ ও নভোসিবিরস্ক শহরে বাহিনীটির কার্যালয়ে বাইরে অনেককে প্রিগোশিনের ছবিতে ফুল দিয়ে ও মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। মস্কো থেকে বিবিসির সাংবাদিক উইল ভেরনন জানান, প্রিগোশিনের ভবিষ্যৎ নিয়ে খারাপ কিছুই আশঙ্কা করছিলেন রুশ নাগরিকেরা। এমন ঘটনা আগেই ঘটেনি কেন, সে বিষয়ে হয়তো বিস্মিত ছিলেন অনেকে।

এ বিষয়ে জার্মানিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলেন, সবাই এই ঘটনাকে পুতিনের প্রতিশোধ হিসেবেই দেখবেন। আর প্রিগোশিনের মৃত্যু রাশিয়ার অনেক সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে।