যুদ্ধের ৯ মাস
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ কোথায়
যুদ্ধ থামাতে হলে যেভাবেই হোক, একটি সম্ভাব্য ‘প্রস্থান পথ’ খুঁজে পেতে হবে। তেমন ‘প্রস্থান পথ’ হতে পারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘আস্থা উদ্রেককারী’ পদক্ষেপ গ্রহণ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উন্মাদ নন। তিনি বিপদের মুখে আছেন এ কথা ঠিক, কিন্তু তাই বলে হুটহাট করে তিনি পারমাণবিক বোমা ছুড়বেন—এ কথা মোটেই ঠিক নয়। বাইডেনের কাছে গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন রয়েছে, তিনি সেসব দেখেই আমাদের এ আশ্বাস বাণী দিয়েছেন।
তবে পুতিন উন্মাদ হোন বা না হোন, তিনি বোকা—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। অন্ততপক্ষে ইউক্রেনে যেসব রুশ সৈন্যকে পাঠানো হয়েছে, তাঁদের সে রকমই ধারণা। এসব সৈন্য স্ত্রী অথবা মায়ের সঙ্গে সেলুলার ফোনে কথা বলার সময় তেমন দাবিই করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমস–এর সৌজন্যে মূল রুশ ভাষায় তাঁদের এ কথোপকথন এখন জানা যাচ্ছে:
‘পুতিন একটা আস্ত গর্দভ। উনি চান আমরা কিয়েভ দখল করি, কিন্তু কীভাবে সে ব্যাপারে তাঁর বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। যুদ্ধ শুরুর আগে কেউ আমাদের বলেনি কী হচ্ছে, আমরা কোথায় যাচ্ছি। এখন চারদিকে শুধু রক্ত, মানুষের লাশ। আমাদের বোকা বানানো হয়েছে। এখানে আমরা একটা ফ্যাসিস্টেরও দেখা পাইনি, যে কথা আমাদের যুদ্ধের আগে বলা হচ্ছিল। গর্দভ।’
আমার নিজের ধারণা, পুতিন একই সঙ্গে উন্মাদ ও নির্বোধ। যে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, তুড়ি মেরে তা ফের জোড়া লাগানো সম্ভব বলে যে অঙ্ক তিনি কষেছেন, তা দেখেই এ কথা বলছি। ইতিহাস পেছন পথে হাঁটে না, সে সামনে এগোয়।
ইতিমধ্যে এ যুদ্ধ ৮ মাস পেরিয়ে ৯ মাসে পড়েছে। প্রথম কয়েক মাসে রুশ সৈন্যরা ইউক্রেনের যে সীমানা দখল করেছিল, তার ৫৫ শতাংশ তাদের হাতছাড়া হয়েছে। এক লাখের মতো সৈন্য হতাহত হয়েছে। দেদার ব্যবহার করায় গোলাবারুদ, বিশেষত গাইডেড মিসাইল ফুরিয়ে এসেছে। আশা ছিল চীন বা ভারত তাকে সাহায্য করবে, বাস্তবে কথার ‘পপকর্ন’ ছিটানো ছাড়া আর কিছুই তারা করেনি। অর্থনীতির অবস্থাও চিড়েচ্যাপটা হয়ে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত ৯ মাসে রাশিয়ার জাতীয় উৎপাদন প্রায় ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন কমিয়ে আনতে হয়েছে।
যুদ্ধের ময়দানে রাশিয়ার জয়লাভ অসম্ভব জেনে পুতিন এখন ইউক্রেন লক্ষ্য করে বেপরোয়া ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছেন, উদ্দেশ্য দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামো ধ্বংস। শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের বসতবাড়িও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছেন। তিন দিন আগে জাপোরিঝঝিয়ার একটি হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের ওপর মিসাইল ছুড়ে দুই দিনের এক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ স্বীকার করেছেন, তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর হামলা করছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা।’
অন্য কথায়, ইউক্রেনের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মস্কো তাকে আলোচনায় বসাতে চায়। সাধে কি আর পুতিনকে উন্মাদ ও নির্বোধ ভাবছি। এই বন্দুক ঠেকানোর দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন এমন একজন জেনারেলকে, যিনি সিরিয়ার আলেপ্পোতে বেপরোয়া বোমা ছুড়ে, দেশটিকে ক্ষতবিক্ষত করে নিজের জন্য খ্যাতি কুড়িয়েছিলেন। তাঁর নাম সের্গেই সুরোভিকিন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুসারে, সিরিয়ায় রুশ বাহিনীর হাতে যে অভাবিত ধ্বংসযজ্ঞ হয়, তার পেছনে এই সুরোভিকিন। এর আগে আলেকসান্দর দভরনিকভ নামের আরেক জেনারেলকে তিনি এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সিরিয়ার আলেপ্পো ও চেচনিয়ার গ্রোজনি শহরের ধ্বংসযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ‘কসাই’ খেতাব অর্জন করেছিলেন।
মস্কোর পোড়ামাটি নীতি
রুশ সৈন্যরা পূর্ব ও দক্ষিণের অধিকৃত এক বড় অংশ থেকে সরে এসে নিপার নদীর পশ্চিম তীরে পরিখা খনন করে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের অবশিষ্ট অবকাঠামো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তাদের আশা, এর ফলে কিয়েভের জেলেনস্কি সরকার ঘাড় ত্যাড়া করে বসে থাকলেও দেশের সাধারণ মানুষের মনোবল ভেঙে যাবে, তারাই কিয়েভের ওপর চাপ দেবে রাশিয়ার শর্তে আলোচনায় বসার জন্য।
পুতিন নিজেকে ইতিহাসবিদ ভাবেন, কিন্তু তিনি ইউক্রেনের ইতিহাস ভালো করে পড়েননি বলে মনে হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আক্রমণকারী জার্মান বাহিনী সেখানে ‘পোড়ামাটি’ নীতি গ্রহণ করেছিল। শুধু অবকাঠামো নয়, অঞ্চলটির অধিকাংশ কলকারখানা ও অর্থকরী সম্পদ তারা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতিরোধের মুখে পালানোর সময় এটা ঘটেছিল সবচেয়ে বেশি।
হিসাব করে দেখা গেছে, সে যুদ্ধেই ইতিহাসে প্রথমবার সেনাসদস্যরা নয়, সাধারণ ও নিরস্ত্র নাগরিকই হতাহত হয়েছিল বেশি। তা সত্ত্বেও, ইউক্রেন নুয়ে পড়েনি। সে সময় লেনিনগ্রাদসহ অন্যান্য সোভিয়েত নগরেও অবরোধ পেতেছিল জার্মান বাহিনী। হাজার দিন কাটানোর পরও তারা সফল হয়নি। অবশেষে বাধ্য হয়ে পালানোর সময় দুচোখে যা পড়েছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিয়েছে। এই ‘পোড়ামাটি’ নীতির ফলে মানুষের দুর্দশা বেড়েছিল, কিন্তু তাদের মনোবল ভেঙে পড়েনি। ইউক্রেনে এখন ঠিক সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
একাত্তরের কথা ভাবুন। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও ঠিক এই উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। গুলি করে পাখির মতো মেরেছিল সাধারণ মানুষকে। কিছুই তাদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। বরং উল্টো হয়েছিল, একদিকে বেড়েছিল হানাদারের প্রতি ঘৃণা, অন্যদিকে মানুষের প্রতিরোধস্পৃহা।
‘শীত সেনাপতি’
নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সারা ইউক্রেনে ভয়াবহ শীত। ছাত্র হিসেবে সে শীত কাটানোর অভিজ্ঞতা আমার আছে। সময়মতো সরানো না হলে তুষার জমে অনায়াসে তিন-চার ফুট ছাড়িয়ে যায়। নদীর জল জমে বরফ হয়ে পড়ে। মস্কো হিসাব কষে দেখেছিল, এই প্রবল শীতে যদি ঘর গরম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ বা গ্যাসের সরবরাহ বিপর্যস্ত করা যায়, ইউক্রেনীয়দের মাথা নোয়ানো ছাড়া পথ থাকবে না।
কিন্তু এখন পর্যন্ত সে কথা সত্যি প্রমাণিত হয়নি। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে ঘরে আলো নেই, ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা নেই। কিন্তু বিকল্প হিসেবে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে পাওয়া ব্যাটারিচালিত উত্তাপযন্ত্রের ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শহরে অস্থায়ী ‘হিটিং সেন্টারের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিয়েভে আমার এক বন্ধু জানিয়েছেন, ‘বিপদে আছি, কিন্তু বিপদ এড়ানোর ব্যবস্থাও আমরা করছি। সবচেয়ে বড় কথা, সার্বিক সংহতিই আমাদের উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।’
শীতকে রাশিয়ায় ‘শীত সেনাপতি’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই শীতের হাতে কাবু হয়ে মস্কো পর্যন্ত এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয়েছিল নেপোলিয়ন বাহিনীকেও। একই অবস্থা হয়েছিল হিটলার বাহিনীর। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যারা দূরে বসে ঠান্ডার কথা ভেবে কাঁপছে, তাদের সম্ভবত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দুর্দান্ত শীতে সূর্যস্নানের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। যারা ভাবছে এই শীতে আমাদের প্রতিরোধ শিথিল হবে তাদের জানাই, আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
তারপরও কূটনীতি
যুদ্ধের ৯ মাসে এসে আমাদের এ ধারণা পোক্ত হচ্ছে যে যুদ্ধের ময়দানে বর্তমান সংকট শিগগির শেষ হবে না। নিজের সামরিক শক্তির সীমাবদ্ধতা টের পেয়ে রাশিয়া কূটনৈতিক আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে। দেশের ভেতরে সৈন্যদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে, বাইরে প্রকাশিত না হলেও এর ফলে ক্রেমলিনের নেতৃত্বের ওপরে যে চাপ বাড়ছে, তাতেও সন্দেহ নেই। ফলে সামরিক ক্ষেত্রে সম্মানজনক অবস্থায় থাকতে থাকতেই নিজ শর্তে আপস আলোচনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মস্কো।
অন্যদিকে, সামরিক ক্ষেত্রে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করলেও ইউক্রেন যে রাশিয়াকে সহজে ঘায়েল করবে, সে কথাও অবাস্তব। তাকে প্রায় পুরোপুরি নির্ভর কতে হচ্ছে পশ্চিমা সাহায্যের ওপর। বাইরে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা জোট এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে এককাট্টা রয়েছে, কিন্তু অনন্তকাল তা থাকবে না। জ্বালানি খাতে যে সংকট, তা অনতি-ভবিষ্যতে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি করবে। প্রাগে আমরা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মানুষের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ দেখেছি।
অস্ট্রিয়া ও জার্মানিতেও বিরুদ্ধ মনোভাব বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রেও রিপাবলিকান, এমনকি ডেমোক্র্যাটদের একাংশের মধ্যে কথা উঠেছে ইউক্রেনকে ‘ব্ল্যাংক চেক’ দেওয়ার বর্তমান নীতি বদলাতে হবে। ডেমোক্রেটিক দলের ভেতরেই দাবি উঠেছে, সামরিক সাহায্যের পাশাপাশি কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। আর এ কাজটার দায়িত্ব নিতে হবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। তিনিই পারেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে এ পথে আসতে উৎসাহিত করতে।
সমস্যা হলো, ইউক্রেন পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকার করেছে। গত সপ্তাহে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এক প্রতীকী সিদ্ধান্তে রাশিয়াকে যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাইডেন নিজেও পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ নামে অভিহিত করেছেন। এ অবস্থায় পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা কীভাবে সম্ভব?
পশ্চিমা দেশসমূহ, বিশেষত ফ্রান্স ও জার্মানি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য ইউক্রেনকে উৎসাহিত করছে। প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এ ব্যাপারে তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। কিন্তু সবাই মানেন, যুদ্ধের চলতি পর্যায়ে ইউক্রেনের ওপর একতরফা চাপ খুব ফলদায়ক হবে না। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো, বিশেষত পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশসমূহ বেঁকে বসবে। ফলে পশ্চিমা গ্রুপে যে ঐক্য রয়েছে, তা ভেঙে পড়তে পারে, যা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য অভ্যন্তরীণ জটিলতা সৃষ্টি করবে।
সে কথা মাথায় রেখে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস–এর ভাষ্যকার গিডিয়ন রাখমান প্রস্তাব করেছেন, ইউক্রেনকে যুদ্ধে সাহায্যের পাশাপাশি যদি কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া যায়, তার ফল ভালো হতে পারে। যুদ্ধ থামাতে হলে যেভাবেই হোক একটি সম্ভাব্য ‘প্রস্থান পথ’ খুঁজে পেতেই হবে, এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মহল একমত। আর তেমন ‘প্রস্থান পথ’ হতে পারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘আস্থা উদ্রেককারী’ পদক্ষেপ গ্রহণ। ইতিপূর্বে আমরা তুরস্ক ও জাতিসংঘের মহাসচিবের ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে ইউক্রেন থেকে খাদ্য রপ্তানির একটি সফল চুক্তি সম্পাদিত হতে দেখেছি। পশ্চিমা হস্তক্ষেপে দুই দেশ তাদের যুদ্ধবন্দী বিনিময়ে সক্ষম হয়েছে। জাপোরিঝঝিয়ার পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়েও সীমিত আকারে আপসরফা হয়েছে। এসবই আস্থা উদ্রেককারী পদক্ষেপ, এ প্রক্রিয়াটিকে অব্যাহত রাখতে হবে। দুই পক্ষের জন্য লাভজনক এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কিন্তু ঠিক কোন কাঠামোর ভিত্তিতে একটি টেকসই আপস ফর্মুলা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে কেউ কিছু স্পষ্ট করে বলছেন না। পুতিন সরে গেলে অবস্থা অনেকটা বদলে যেত, কিন্তু চাই বলেই তো পুতিনকে সরানো যাবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে যে ১০ দফা আপসরফা প্রস্তাব করেছেন, তা কোনো কাজের কথা নয়।
রাশিয়া এখনো পরাস্ত ও অবমানিত একটি দেশ নয়, তার ওপর একতরফাভাবে সব শর্ত চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। সে চেষ্টা করা হলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব আরও জোরদার হবে, যা পুতিনের হাতকেই শক্ত করবে। তবে বাস্তব সত্য হলো তিনি এ মুহূর্তে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন। এখনই যদি তাঁর ‘মুখরক্ষা’ হয়, এমন একটি আপস ফর্মুলার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে যুদ্ধরত এই দুই দেশ ও তাদের মুরব্বিদের মধ্যে আলোচনার একটি সম্ভাব্য সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ অবস্থায় এমন এক আপস প্রস্তাব রাখা যেতে পারে, যেখানে যুদ্ধবিরতি ও অধিকৃত এলাকা থেকে আংশিক সৈন্য প্রত্যাহারের বদলে রাশিয়ার ওপর চলতি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা স্থগিত রাখার কোনো আগাম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেন সদস্যপদ পাবে না তার স্পষ্ট ঘোষণা থাকবে। যুদ্ধ শুরুর আগেই জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন এ প্রস্তাবে তিনি সম্মত। যদ্দুর জানি, ভেতরে–ভেতরে এ নিয়ে কথা শুরু হয়েছে।