খেরসন শহর ছেড়ে গেল রুশ সৈন্যরা

ইউক্রেনের খেরসন এলাকায় এ সেতুটি পার হয়ে গেছে রুশ সেনারা।
ছবি : রয়টার্স

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুরুত্বপূর্ণ খেরসন শহর থেকে রুশ সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। সেখানে এখন উড়ছে ইউক্রেনের পতাকা। খেরসন শহর থেকে সেনা প্রত্যাহারের কাজ শেষ হয়েছে বলে মস্কো নিশ্চিত করেছে। এর মধ্য দিয়ে গত ৯ মাসের যুদ্ধে দখলে থাকা একমাত্র আঞ্চলিক রাজধানী শহর থেকেও পিছু হটতে হলো তাদের। তবে মস্কো বলছে, আপাতত সেনা প্রত্যাহার করা হলেও শহরটি রাশিয়ার অংশই থাকবে।

গত সেপ্টেম্বরে খেরসনসহ চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ ঘোষণা করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই ঘোষণার মাত্র দুই মাসের মধ্যে খেরসন থেকে রাশিয়ার পিছু হটা মস্কোর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা।

খেরসনের কাছে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের মিকোলাইভ শহরের একটি আবাসিক ভবনে হামলার কয়েক ঘণ্টা পর খেরসন থেকে সেনা সরানোর ঘোষণা দেয় মস্কো। মিকোলাইভের ওই হামলায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এই শহরে দীর্ঘদিন ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন রুশ সেনারা। ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদ সংস্থা ইতার তাস জানায়, রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছে, খেরসনে মোতায়েন সব রুশ সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম নিপ্রো নদীর পশ্চিম পাড় থেকে পূর্ব পাড়ে আনা হয়েছে।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, খেরসনে এখন আর একটিও সামরিক সরঞ্জাম অবশিষ্ট নেই।

রুশ সৈন্য প্রত্যাহার শেষ হওয়ার পর খেরসনে ইউক্রেনের পতাকা উড়তে দেখা গেছে। বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা খেরসন শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহারকে তাঁদের বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকালই ইউক্রেনের কমান্ডার-ইন-চিফ ঘোষণা করেছিলেন, তাঁদের সেনাবাহিনী দুই দিক থেকে সাত কিলোমিটার অগ্রসর হয়েছে। তখনো তাঁরা আঞ্চলিক রাজধানী থেকে কিছুটা দূরে ছিলেন। আমরা ইউক্রেনের সেনাদের স্বাগত জানানোর খবর জানতে পেরেছি।’

খেরসন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের পর গত বৃহস্পতিবার সেখানে দেশের পতাকা ওড়ান ইউক্রেনের এক সেনা।
ছবি : রয়টার্স

গত বুধবার ভোরের দিকে খেরসন শহরের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের সংযোগকারী প্রধান সেতুটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। ইউক্রেন বাহিনী এই বিধ্বস্ত সেতুর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে। তাদের ধারণা, রাশিয়ার সেনারা শহর ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছেন।

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোপ্রধান ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ বলেন, পুতিন ইউক্রেনের মানুষের সাহস ও লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। পাশাপাশি কিয়েভকে ন্যাটোর মিত্রদের সমর্থন দেওয়ার আশ্বাসকে তিনি অবমূল্যায়ন করেছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে খেরসন অঞ্চলের কিছু অংশ থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমাতে তাঁরা এই উদ্যোগ নিচ্ছেন।

গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে খেরসনসহ চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর মধ্যে খেরসন কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহর। তবে এখান থেকে সরে যাওয়া পুতিনের জন্য অপমানজনক হবে না বলে মনে করছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, খেরসনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত রুশ ফেডারেশনের। এটি পরিবর্তন করা যাবে না বা এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

এর আগে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি বলেছিলেন, সেনাদের সরিয়ে নেওয়া ছাড়া মস্কোর সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। ইউক্রেনের মানুষের কঠোর পরিশ্রমে এটি সম্ভব হয়েছে। এখন পর্যন্ত খেরসনের ১ হাজার ৩৮১ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে।

খেরসনে রুশ সেনারা বিপুলসংখ্যক মাইন পুঁতে রেখেছেন দাবি করে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এগুলো সরাতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন