সর্বাত্মক বৈশ্বিক যুদ্ধের ঝুঁকি

রাশিয়াসংলগ্ন সীমান্তের কাছে একটি সড়কে ইউক্রেনের সাঁজোয়া যানএএফপি ফাইল ছবি

রাশিয়ার ভেতরে পশ্চিমা–সমর্থিত ইউক্রেনীয় আগ্রাসন সর্বাত্মক বৈশ্বিক যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া। দেশটির পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা কমিটির সদস্য মিখাইল শেরেমেট শুক্রবার এ কথা বলেন। রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ এ তথ্য জানিয়েছে।

দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার অভিযানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকা ইউক্রেন ৬ আগস্ট পাল্টা অভিযান শুরু করে। দেশটির সেনারা রুশ সীমান্ত অতিক্রম করে কুরস্ক অঞ্চলে হামলা শুরু করেন। এর পর থেকে তাঁরা রাশিয়ার অনেকটাই ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এগিয়েছেন। এতে মস্কো ওই এলাকা থেকে দুই লাখ লোকজন সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি রাশিয়ার ভূখণ্ডে কোনো বিদেশি সেনাবাহিনীর চালানো সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।

মিখাইল শেরেমেট এক বিবৃতিতে বলেন, পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের উপস্থিতি, বেসামরিক অবকাঠামো আক্রমণে পশ্চিমা গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি রাশিয়ার ভূখণ্ডে আক্রমণে বিদেশিদের অংশগ্রহণের অকাট্য প্রমাণ। এসব বিবেচনায় যে কেউ উপসংহারে পৌঁছাতে পারে যে বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালাতে ইউক্রেনকে সবুজসংকেত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোটভুক্ত দেশগুলো। পুতিনের এ দাবির প্রতিধ্বনি করেছেন শেরেমেট। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পুতিনের ঘনিষ্ঠ নিকোলাই প্রাত্রুশেভও রাশিয়ায় হামলা পেছনে পশ্চিমাদের হাত থাকার অভিযোগ করেছেন। ইজভেস্তিয়া সংবাদপত্রকে শুক্রবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রেমলিনের এই ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি ন্যাটো ও পশ্চিমারা জড়িত। এতে ন্যাটো ও পশ্চিমা বিশেষ বাহিনী পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, কুরস্কে হামলা চালানোর আগে আগাম কোনো তথ্য ইউক্রেন তাদের দেয়নি এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী নয়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে ন্যায্য আলোচনা শুরু করতে কুরস্ক অঞ্চলে হামলা করে তাদের বোঝানোর প্রয়োজন ছিল।

ইউক্রেন ও তার মিত্ররা পাল্টা দাবি করেছে, রাশিয়াকে যুদ্ধ চালাতে চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়া সহায়তা করছে। গতকাল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানায়, রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন। জাপানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে কোরিয়ার স্বাধীনতা লাভের বর্ষপূতি উদ্‌যাপন উপলক্ষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পাঠানো একটি বার্তায় কিম জং–উন এ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

এদিকে ইউক্রেনকে একের পর এক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্ররা। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, তারা ইউক্রেনে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা প্যাকেজ পাঠাতে যাচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান পেয়েছে ইউক্রেন।

কুরস্ক নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে নতুন করে অগ্রগতির দাবি করেছে ইউক্রেন। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা ১ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকা দখল করেছে। এদিকে রাশিয়াও ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাত থেকে কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম দখলমুক্ত করার দাবি করেছে।

ইউক্রেন বলছে, তারা এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বসতি ও সুদঝা শহরের দখল নিয়েছে। সীমান্ত থেকে আট কিলোমিটার দূরে শহরটির অবস্থান। শীর্ষ সেনা কমান্ডার ওলেকসান্দর সিরস্কি বলেন, ‘আমরা ১ হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ও ৮২টি বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছি।’

কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলে একটি গ্রামকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাত থেকে দখলমুক্ত করার দাবি করে রাশিয়া বলেছে, বেলগোরোদ অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছে তারা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর কুরস্ক ও বেলগোরোদে ছোটখাটো হামলা হলেও এত বড় ধরনের অভিযান এবারই প্রথম। ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের দাবি, আত্মরক্ষার্থে তাঁরা এ অভিযান চালাচ্ছেন।

কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলা মুখে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কে সামনে এগোচ্ছে। গতকাল রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, দোনেৎস্কের সেরহিভকা নামের আরেকটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ করেছে রুশ বাহিনী। দ্রুত গুরুত্বপূর্ণ পোকরোভকস শহরের দিকে এগোচ্ছে তারা। তাই সেখানকার লোকজনকে দ্রুত পালাতে বলেছেন ইউক্রেনের সেনারা।

রুশ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, রাশিয়ার সাইবেরিয়ায় ইরকুৎসক অঞ্চলে একটি রুশ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে আঞ্চলিক গভর্নর ইগর কবজেভ বলেছেন, এ ঘটনায় যুদ্ধবিমানটির চার ক্রুর একজন নিহত হয়েছেন। অন্যরা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ক্রিমিয়া সেতুতে হামলা

রাশিয়া দাবি করেছে, ক্রিমিয়া সেতু লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের ১২টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তারা ঠেকিয়েছে।