যুক্তরাজ্যে নতুন সরকারের কাছে যা চান বাংলাদেশি অভিবাসীরা

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার (মাঝে) ও তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়াফাইল ছবি: এএফপি

যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ সরকারের দীর্ঘ ১৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। এই নির্বাচনে লেবার পার্টির মনোনয়নে চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ পুনরায় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

বহু আগে থেকেই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিরা লেবার পার্টিকে সমর্থন দিয়ে আসছেন। এবারের নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশি অধ্যুষিত প্রত্যেকটি আসনে লেবার পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। সংগত কারণে লেবার সরকারের কাছে বাংলাদেশিদের প্রত্যাশাও বেশি।

নতুন সরকারের কাছে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রত্যাশা কী—জানতে চাইলে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র লুৎফুর প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সরকারের কাছে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ও অর্থনীতির পুনরুদ্ধার তাঁদের প্রধান চাওয়া।

নতুন সরকারকে পরামর্শ দিয়ে লুৎফুর বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস যুক্তরাজ্যের একমাত্র এলাকা যেটি প্রাইমারি স্কুলের পাশাপাশি সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে খাবার সরবরাহ করছে। ১৬ বছরের বেশি বয়সী নারী ও ৫৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের জন্য বিনা মূল্যে সাঁতারের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অর্থনৈতিক এই কঠিন সময়ে জনগণকে সহযোগিতা করতে চাইলে সরকার এমন কাজগুলো সারা দেশে চালু করতে পারে।

অবৈধ অভিবাসন বিষয়ে ইউকে বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী বলেন, ‘যেসব বাংলাদেশি বৈধ কাগজ ছাড়া যুক্তরাজ্যে রয়েছেন তাঁদের বাংলাদেশে ফেরত না পাঠাতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। তাঁদের নাগরিকত্ব না দেওয়া হলেও, অন্তত যুক্তরাজ্যে কাজের সুযোগ দেওয়া হোক। এ বিষয়ে নির্বাচিত বাংলাদেশি পার্লামেন্ট সদস্যরা কিয়ার স্টারমারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।’ 

বার্কিং অ্যান্ড ড্যাগেনহাম কাউন্সিলের মেয়র মঈন কাদরী নতুন সরকারের কাছে পাঁচটি দাবি তুলে ধরেছেন। সেগুলো হলো—যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে শুল্ক কমিয়ে বা শুল্ক পদ্ধতি সহজ করা; ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করতে ব্রিটিশ বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের অনুদান ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া; স্থানীয় ও জাতীয় সরকারে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে রাজনৈতিক পরামর্শ দেওয়া; ব্রিটিশ ও বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছাত্র ও শিক্ষাবিদদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি ঐতিহ্য উদ্‌যাপন, সংরক্ষণ ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগে অর্থায়ন।

স্কটল্যান্ডে বসবাসরত সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ ব্রিটেনের অর্থনীতি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। জীবনযাপনে ব্যয়ের বোঝা বহন করতে জনগণ হিমশিম খাচ্ছে। সোজা কথায় এক কঠিন সময় পার করছে এখানকার প্রবাসীসহ ব্রিটেনের জনগণ। লেবার সরকার নির্বাচিত হওয়ায় কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার ঘটেছে আমাদের মধ্যে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার কন্যা পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় প্রবাসীরাও অনেক খুশি। এই চারজনের কাছে বর্তমান সরকারের কাছে প্রত্যাশা—তাঁরা যেন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সঠিক পদক্ষেপ নেন।’